আশ্রয়ের সন্ধানে বানভাসি মানুষ

স্বরণকালের ভয়াবহ বন্যা

স্বরণকালের ভয়াবহ বন্যা

টানা বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে দ্বিতীয় দফায় ভয়াবহ বন্যা দেখা দিয়েছে সিলেটে। সেখানকার অধিকাংশ বাড়িঘর ও রাস্তাঘাট পানিতে ডুবে গেছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন কয়েক লাখ মানুষ। অনেকে আশ্রয়ের খোঁজে এদিক-ওদিক ছুটছেন। গবাদি পশু ও ঘরের জিনিসপত্র নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছেন তারা।

সিলেট নগরীর বাসিন্দা শাকিল আহমেদ বলেন, ‘এমন বন্যা গত ২০ বছরে দেখিনি। সব ডুবে গেছে। সবার ঘরে হাঁটুপানি। যাওয়ার কোনও জায়গা নেই। মানুষ দিশেহারা হয়ে আশ্রয়স্থল খুঁজছে। যাদের সামর্থ্য আছে তাদের কেউ কেউ বাড়িঘর ছেড়ে হোটেলে উঠেছে। কিন্তু অসহায় মানুষের যাওয়ার জায়গা নেই। নিরূপায় হয়ে বাসাবাড়ি ছেড়ে চলে যাচ্ছে অনেকে। খাবারের কোনও ব্যবস্থা নেই। আমরা খুব বিপদে আছি। ’

তালতলার এলাকার গৃহিণী সানজিদা ইসলাম জানান, ‘সিলেটের অবস্থা ভয়াবহ। বিশুদ্ধ পানিসহ খাবারের সংকটে আছি। বাসার সব মালামাল পানিতে ডুবে আছে। পরিবারের সবাইকে রিয়ে খাটের ওপর বসে দিন কাটাচ্ছি। ’
সদর উপজেলা, সিটি করপোরেশন, গোয়াইনঘাট, কোম্পানীগঞ্জ, কানাইঘাট ও জৈন্তাপুর উপজেলার বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। পানি বেড়েছে সুরমা, পিয়াইন ও কুশিয়ারাসহ জেলার সব নদীর। হু হু করে পানি বাড়ায় আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন এলাকার বাসিন্দারা।

সিলেট সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা গেছে, নগরের ৩১টি বিদ্যালয় ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানকে আশ্রয়কেন্দ্র ঘোষণা করা হয়েছে। সেখানে আশ্রয় প্রার্থীদের যাওয়ার জন্য জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে অবহিত করা হচ্ছে।

বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের তথ্য অনুসারে, সকাল ৯টায় সুরমা নদীর পানি সিলেটের কানাইঘাট পয়েন্টে বিপৎসীমার ১০৮ সেন্টিমিটার ওপরে ও সিলেট নগর পয়েন্টে ৭০ সেন্টিমিটার ওপরে প্রবাহিত হচ্ছিল।

পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সিলেট সূত্রে জানা গেছে, সুরমা নদীর দুটি ও কুশিয়ারা নদীর একটি পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। জেলার অন্য নদ-নদীর পানিও বাড়ছে।
এদিকে সিলেটে বন্যা মোকাবিলায় সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। শুক্রবার সকালে এক বার্তায় আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) এ তথ্য জানায়।

জেলা প্রশাসক মো. মজিবর রহমান বলেন, ‘বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রশাসন আন্তরিকভাবে কাজ করছে। যাদের বাড়িঘরে পানি উঠেছে, তাদের নিরাপদ স্থানে চলে যেতে বলা হচ্ছে। দুর্গতদের ত্রাণ সহায়তা দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। ’

সুনমাগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি :

নদনদীর পানি বেড়ে সুনামগঞ্জের বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। বন্যার পানি ঢুকে পড়েছে সদরসহ জেলার প্রায় সব প্রান্তের ঘরবাড়িতে।

বন্যায় নিত্যপ্রয়োজনীয় সব ধরনের সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন জেলার বাসিন্দারা। শহরসহ জেলার বিভিন্ন প্রান্তে সুপেয় পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। বৃহস্পতিবার রাত থেকে জেলা শহর বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন।

দুর্ভোগে নতুন মাত্রা যোগ করেছে মোবাইল ফোনের নেটওয়ার্ক না থাকায়। জেলা শহরে বৃহস্পতিবার গভীর রাত থেকে নিরবচ্ছিন্ন মোবাইল নেটওয়ার্ক পাওয়া যাচ্ছে না।

বানভাসীদের মধ্যে যারা বাড়িতে আছেন, তারা শুকনো খাবার খেয়ে কাটাচ্ছেন। অন্যদিকে যাদের বাড়িতে থাকার মতো অবস্থা নেই, তারা মরিয়া আশ্রয়কেন্দ্রগুলোর দিকে যেতে।

সুনামগঞ্জের বন্যাদুর্গতদের সহায়তায়ও সেনাবাহিনীর সদস্যদের মোতায়েন করা হয়েছে। বিভাগীয় কমিশনার (অতিরিক্ত সচিব) ড. মুহাম্মদ মোশাররফ হোসেন এ তথ্য জানিয়েছেন।

তিনি জানান, ‘সেনাবাহিনীর দলটি এরই মধ্যে সুনামগঞ্জের উদ্দেশে রওনা হয়েছে। জেলার ছাতক, দোয়ারাবাজার, সদরসহ বন্যাদুর্গত অঞ্চলগুলোতে মানবিক সহায়তা কার্যক্রমে অংশ নেবেন সেনাসদস্যরা। ’

পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সুনামগঞ্জের নির্বাহী প্রকৌশলী জহুরুল ইসলাম বলেন, ‘জেলার ৮০ শতাংশ অঞ্চল পানিতে ডুবে গেছে। শহরের প্রায় সব বাসাবাড়িতে পানি ঢুকেছে। ’ শুক্রবার সকালে সুরমা পয়েন্টে বন্যার পানি বিপৎসীমার ১০৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল বলে তিনি জানান।