দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে ঐতিহাসিক জয় বাংলাদেশের

দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে ঐতিহাসিক জয় বাংলাদেশের

৪৬তম ওভারের তৃতীয় বলে মেহেদী হাসান মিরাজের বলে ডেভিড মিলার স্ট্যাম্প আউট হয়ে যাওয়ার পরই ধারাভাষ্যকাররা বলে দিয়েছেন, ম্যাচটা এখানেই শেষ। দক্ষিণ আফ্রিকার পরাজয় নিশ্চিত। বাকি ছিল আর কতদুর যেতে পারে স্বাগতিক প্রোটিয়ারা।

শেষ দিকে কেশভ মাহারাজ এবং লুঙ্গি এনগিদি কয়েকটি চার-ছক্কা মেরেছিলেন ঠিকই, কিন্তু বাংলাদেশের ঐতিহাসিক জয় আর ঠেকাতে পারেনি তারা।

রীতিমত ঘোষণা দিয়ে গিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে ঐতিহাসিক প্রথম জয়ের দেখা পেলো বাংলাদেশ। ৩১৫ রানের লক্ষ্য ছুড়ে দিয়ে ৪৮.৫ ওভারে প্রোটিয়াদের অলআউট করে দিয়েছে ২৭৬ রানে। ৩৮ রানের জয় নিয়ে মাঠ ছেড়েছে তামিম ইকবাল অ্যান্ড কোং।

ব্যাট হাতে সাকিব-রাব্বির পর বল হাতে প্রোটিয়া শিবিরে কাঁপন ধরিয়েছেন মেহেদী হাসান মিরাজ, তাসকিন আহমেদ এবং শরিফুল ইসলাম। ৪ উইকেট নিয়ে প্রোটিয়াদের বিপক্ষে সবচেয়ে সফল মিরাজ। ৩ উইকেট নিয়ে স্বাগতিকদের কোমর ভেঙে দিয়েছিলেন তাসকিন আহমেদ। আর গুরুত্বপূর্ণ সময়ে ব্রেক থ্রু এনে দিয়ে ২ উইকেট নিয়েছেন শরিফুল ইসলাম।

এর আগে প্রোটিয়াদের মাটিতে তাদের বিপক্ষে কোনো ফরম্যাটেই কোনো ম্যাচ জেতেনি বাংলাদেশ। দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে গিয়ে ৯বার মুখোমুখি হযেছিল বাংলাদেশ। কিন্তু কোনোবারই জয়ের স্বাদ নিতে পারেনি। জয় তো দূরে থাক, নূন্যতম লড়াই করারও সাহস দেখাতে পারেনি টাইগাররা। সবচেয়ে ছোট ব্যবধানে পরাজয় ছিল ৬১ রানে (২০০৮ সালের ৭ নভেম্বর পচেফস্ট্রমে)।

সে জায়গায় এবার দেশ ছাড়ার আগেই তামিম ইকবাল, সাকিব আল হাসান এবং কোচ রাসেল ডোমিঙ্গোরা বলছিলেন, অন্তত একটি জয় হলেও পেতে চান তারা।

রাসেল ডোমিঙ্গো তো বলেই দিয়েছিলেন, এবার তিনি এমন কিছুর আশা করছেন, যা দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে আগে কখনো হয়নি। শেষ পর্যন্ত সেঞ্চুরিয়নের সুপার স্পোর্টস পার্কে সিরিজের প্রথম ম্যাচেই সেটা করে দেখালো বাংলাদেশ। তুলে নিলো দুর্দান্ত এক জয়।

যেন ঠিক ছকে আঁকা একটি ম্যাচ ছিল এটা। টস জিতুক আর না জিতুক, প্ল্যান কার্যকর করার সব চিন্তাই হয়তো তৈরি করা ছিল। যে কারণে টস হেরে ব্যাট করতে নামলেও সেটা খুব একটা প্রভাব পড়েনি ম্যাচে গেম প্ল্যান কার্যকরে। সেঞ্চুরিয়নের মাঠ ছোট, এখানে রান ওঠে। ব্যাটাররা অনেক রানের দেখা পায়। প্রোটিয়ারা নিজেরাই তো এর আগে এই মাঠে কত ম্যাচে রানের বন্যা বইয়ে দিয়েছিল!

বাংলাদেশ ব্যাট করতে নে,শুরুটা ভালো করেছিল। তামিম-লিটন মিলে ৯৫ রানের যে জুটি গড়েছিলেন, সেখানেই গড়ে উঠেছিল আত্মবিশ্বাস। যে কারণে তিন ফিফটিতে বাংলাদেশের রান পার হলো ৩০০। ৩১৪ রানে গিয়ে থামলো টাইগাররা। আফগানিস্তান সিরিজে নিজেকে প্যাসেঞ্জার মনে করা সাকিব আল হাসানই ছিলেন সবচেয়ে সফল। মাঠের খেলায় নিজেকে যে নিবেদিত করতে পারেন, সাকিব তার বড় উদাহরণ। ৬৪ বলে তিনি খেললেন ৭৭ রানের ইনিংস।

তামিম ইকবাল বোলিংয়ের শুরুটাও করালেন সাকিবকে দিয়ে। কিন্তু প্রথম ব্রেক থ্রু এনে দিলেন শরিফুল। এরপর এক ওভারেই প্রোটিয়া টপ অর্ডারে বড় ধাক্কা দিলেন তাসকিন। ৩৬ রানে নেই ৩ উইকেট। এরপর টেম্বা বাভুমা আর রাশি ফন ডার ডুসেন মিলে ৮৫ রানের জুটি গড়ে ম্যাচটাকে বের করে নেয়ার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু শরিফুল এসে তাদের চেষ্টা ভেঙে দিলেন।

রাফি ফন ডার ডুসেন ভয়ঙ্কর হয়ে উঠেছিলেন, ৮৬ রান করে চেষ্টা করেন ম্যাচ বের করে নেয়ার। কিন্তু তাসকিনের ডেলিভারিতে রাব্বির দারুণ ক্যাচে পরিণত হয়ে তারও চেষ্টার সমাধি হলো। ডেভিড মিলার তার সেই ‘কিলার মিলার’ উপাধিটাকে ফিরিয়ে আনার প্রয়াস পেয়েছিলেন। কিন্তু মিরাজের বুদ্ধিদীপ্ত বোলিংয়ের সামনে হার মানলেন তিনিও। ৭৯ রান করেই তাই তিনি রয়ে গেলেন পরাজিতের কাতারে।