বিএনপিকে চাপে রাখার কৌশলে আওয়ামী লীগ

বিএনপিকে চাপে রাখার কৌশলে আওয়ামী লীগ

আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক কর্মসূচির মাধ্যমে পূর্ণশক্তি নিয়ে ডিসেম্বরে রাজপথ দখলের হুমকি দিয়েছে বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলো। এর বিপরীতে পাল্টা শক্তি প্রদর্শনের মাধ্যমে রাজপথ নিয়ন্ত্রণে রাখার ঘোষণা এসেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকেও। ফলে বিজয়ের মাস ডিসেম্বরকে ঘিরে জনমনে আতঙ্ক ছড়ালেও ‘আপাতত সংঘাত নয়, বিএনপিকে চাপে রাখা’র কৌশল নিয়ে এগোচ্ছে সরকারি দল।

আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী বেশ কয়েকজন নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিএনপি ও বিরোধী দলগুলো যে মাঠে নেমেছে এবং আন্দোলন গড়ে তোলার চেষ্টা করছে, সেদিকে কড়া নজর রেখে বিরোধীদের মোকাবিলায় সর্বোচ্চ কৌশল নির্ধারণ এবং তা বাস্তবায়নের পরিকল্পনা নিয়েছে আওয়ামী লীগ। বিদ্যমান পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে বিএনপি যাতে রাজনৈতিক ফল ঘরে তুলতে না পারে, সেটি মাথায় রেখে ফল নিজেদের ঘরে তুলতে চাইছে ক্ষমতাসীন দলটি।

সরকারি দলের একাধিক সূত্র বলছে, বিএনপি বিভাগীয় শহরগুলোতে সমাবেশ শেষ করে ১০ ডিসেম্বর রাজধানীতে সমাবেশের ডাক দিয়েছে। সমাবেশকে কেন্দ্র করে যাতে কোনও অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি না হয়, সেদিকে কড়া নজর রাখবে আওয়ামী লীগ।

আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী জাফরুল্লাহ বলেন, ‘গত নির্বাচনের পর থেকে বিএনপি সব ধরনের গণতান্ত্রিক কর্মসূচি পালন করে আসছে। তারা আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে নানা অপপ্রচার করেছে এবং করছে। আমরা তাদের কোনও ধরনের বাধা দেইনি, সামনেও দেবো না।’

তিনি আরও বলেন, ‘তারা (বিএনপি) অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টির চেষ্টা করলে রাজনৈতিকভাবে তাদের মোকাবিলা করবে আওয়ামী লীগ। তবে আমরা কোনও সংঘাত চাই না। তারা কী করবে সেটি তাদের বিষয়।’

বিএনপিকে উদ্দেশ করে সম্প্রতি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সম্প্রতি একাধিক সমাবেশ-অনুষ্ঠানে বলেছেন, এখন ছাড় দিচ্ছি, ডিসেম্বরে ছাড়বো না। মুক্তিযুদ্ধের মাসে রাজপথ বিএনপির থাকবে না, থাকবে আওয়ামী লীগের। এই রাজপথ মুক্তিযুদ্ধের রাজপথ, বিজয়ের মাসের রাজপথ, বিজয়ের চেতনার রাজপথ।

সবশেষ বুধবার তিনি বলেছেন, ‘বিএনপিকে আর আগুন নিয়ে খেলতে দেওয়া হবে না। জনগণ তাদের প্রতিহত করবে। ডিসেম্বর মাসজুড়ে আমাদের মাঠে থাকতে হবে। তাই সব নেতাকর্মীকে এখনই প্রস্তুতি সম্পন্ন করতে হবে।’

এদিকে, আগামী ৩ ডিসেম্বর ছাত্রলীগের ৩০তম সম্মেলন, ৯ ডিসেম্বর যুব মহিলা লীগের সম্মেলন এবং মহিলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন ২৬ নভেম্বর নির্ধারণ করা হয়। এরমধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জাপান সফরের কারণে ৩ ডিসেম্বর ছাত্রলীগের সম্মেলন পিছিয়ে যাচ্ছে। ৮ ডিসেম্বর এই সম্মেলন হতে পারে বলে সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র বলছে।

আগামী ২৪ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগের ২২তম জাতীয় সম্মেলন হওয়ার কথা। সম্মেলনটি ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে হওয়ার কথা রয়েছে। মঞ্চ তৈরিসহ প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি এরইমধ্যে শুরু হয়ে গেছে।

সে হিসাবে ৯ ডিসেম্বর যুব মহিলা লীগের সম্মেলনের পরের দিন ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় বিএনপির মহাসমাবেশ হওয়ার কথা। ওই সমাবেশকে কেন্দ্র করে বিএনপি যাতে রাজপথ দখলে নিতে না পারে, সে জন্য সতর্ক থাকবেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। তবে বর্তমান রাজনৈতিক অবস্থায় কোনও সংঘাতে না জড়ানোর বিষয়েও সতর্ক করা হয়েছে সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে।

এ নিয়ে গত মঙ্গলবার (১৫ নভেম্বর) আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানককে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘আমাদের নেত্রী শেখ হাসিনা বিরোধী দলের শান্তিপূর্ণ যেকোনও কর্মসূচিতে বাধা দেওয়া হবে না বলে জানিয়ে দিয়েছেন। তবে ১০ ডিসেম্বরের সমাবেশকে কেন্দ্র করে বিএনপি শান্তি-শৃঙ্খলা বিঘ্নিত করলে ঢাকার শান্তিপ্রিয় মানুষের শান্তি রক্ষা করার অধিকার রয়েছে।’

চলতি নভেম্বর ও আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে মূল দল, অঙ্গ-সহযোগী এবং ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনগুলোর সম্মেলন করে রাজপথে নামার পরিকল্পনা করেছে আওয়ামী লীগ। সেই সঙ্গে এই দুই মাসে ঢাকা, চট্টগ্রাম, নড়াইল ও যশোরসহ আরও কয়েকটি শহরে বড় জনসভা করবে দলটি। চট্টগ্রামের জনসভা ৪ ডিসেম্বর করার কথা জানানো হলেও অন্যগুলোর তারিখ এখনও চূড়ান্ত হয়নি। এসব কর্মসূচিতে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সশরীরে অংশ নেবেন। সকালের অংশে সরকারি দাফতরিক কাজ শেষ করে বিকালে আওয়ামী লীগের জনসভায় ভাষণ দেবেন তিনি।

এছাড়া ডিসেম্বরে মুক্তিযোদ্ধা সমাবেশ এবং বিজয়ের মাসে মহানগর থেকে শুরু করে ইউনিয়ন পর্যন্ত বিজয় র‌্যালি করবে আওয়ামী লীগ। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে গুরুত্বপূর্ণ জেলা থেকে শুরু করে বিভাগীয় শহরগুলোয় বড় ধরনের জনসভা করবে আওয়ামী লীগ। এ নিয়ে দলের সংশ্লিষ্ট নেতারা কাজ করছেন বলে জানা গেছে।

গত ২৮ অক্টোবর আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে দলটির প্রধান শেখ হাসিনা বলেছিলেন, ‘নতুন বছরের শুরু থেকেই দেশের ৬৪ জেলায় নির্বাচনি জনসভা শুরু করতে হবে।’

এসব কর্মসূচিতে সশরীরে হাজির হবেন তিনি। এক্ষেত্রে প্রত্যন্ত জেলাগুলোর পাশাপাশি যেসব জেলায় সাম্প্রতিক সময়ে শেখ হাসিনা যাননি, সেগুলোকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।

সূত্র : বাংলা ট্রিবিউন