বিশ্বনাথ পৌর নির্বাচন: হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ে চমক দেখাতে পারে আল-ইসলাহ প্রার্থী

বিশ্বনাথ পৌর নির্বাচন: হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ে চমক দেখাতে পারে আল-ইসলাহ প্রার্থী

২০১৯ সালের ৫ ডিসেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে কার্যক্রম শুরু হয় বিশ্বনাথ পৌরসভার। বহু প্রতিক্ষার অবসান ঘটিয়ে প্রবাসী অধ্যষিত এ পৌর অঞ্চলে ১ম বারের মতো নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে আগামী ২ নভেম্বর। পৌর এলাকার প্রতিটি পাড়া-মহল্লা, বাজার হাটে বইছে নির্বাচনী আমেজ।

নির্বাচনকে কেন্দ্র করে গত ১৮ অক্টোবর প্রতীক নিয়ে গতকাল ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ডে প্রতিনিয়ত মাঠে ময়দানে নাগরিকদের সাথে দেখা সাক্ষাৎ, গণসংযোগ, উঠান বৈঠক, প্রচার মিছিলে ও নির্বাচনী জনসভায় ব্যস্ত সময় কাটিয়েছেন ৭জন মেয়র প্রার্থী, ১৪জন  মহিলা কাউন্সিলর প্রার্থী ও ৬০ জন কাউন্সিলর প্রার্থী।

বিশ্বনাথ পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ডের ৩৫ হাজার ৪৭০ জন (পুরুষ ১৮ হাজার ২৭৯ ও মহিলা ১৭ হাজার ১৯১) ভোটারের ভোটাধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে ২ নভেম্বর কে হতে যাচ্ছেন প্রথম মেয়র- এনিয়ে সর্বত্র চলেছে আলোচনা-সমালোচনা। ৭ প্রার্থীর সকলেই জোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। 

বিশ্বনাথ পৌরসভার প্রথম  নির্বাচনে মেয়র পদে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ মনোনীত প্রার্থী হিসেবে ‘নৌকা’ প্রতীক নিয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ফারুক আহমদ, স্বতন্ত্র প্রার্থী (বর্তমান আওয়ামীলীগ নেতা ও সাবেক জাপা নেতা) হিসেবে ‘জগ’ প্রতীক নিয়ে উপজেলা পরিষদের দুই বারের সাবেক চেয়ারম্যান এবং অষ্টম ও একাদশ জাতীয় সংদস্য নির্বাচনের প্রার্থী মুহিবুর রহমান (প্রবাসী), স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ‘চামচ’ প্রতীক নিয়ে বিশ্বনাথ পৌর আনজুমানে আল-ইসলাহ’র সভাপতি মো. ফয়জুল ইসলাম,‘হ্যাঙ্গার’ প্রতীক নিয়ে উপজেলা বিএনপির সদ্য বহিস্কৃত সভাপতি ও বিশ্বনাথ ইউনিয়ন পরিষদের দুই বারের সাবেক চেয়ারম্যান জালাল উদ্দিন, ‘খেজুর গাছ’ প্রতীক নিয়ে উপজেলা জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের সাধারণ সম্পাদক মাওলানা মোহাম্মদ শিব্বির আহমদ, স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে  ‘মোবাইল ফোন’ প্রতীক নিয়ে যুক্তরাজ্যের নিউহাম বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মুমিন খান মুন্না (প্রবাসী) এবং ‘নারিকেল গাছ’ প্রতীক নিয়ে যুক্তরাজ্য বিএনপি নেতা সফিক উদ্দিন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

ভোটের মাঠ ঘুরে ভোটারের সাথে আলোচনায় জানা যায়– জয়ের জন্য মরিয়া হয়ে প্রচারণা চালিয়েছেন মেয়র পদের প্রার্থীরা। ভোটের মাঠে কেউ কাউকে ছাড় দিতে নারাজ। তবে , মেয়র পদে ৭ জন প্রার্থী লড়াইয়ে মূল আলোচনায় রয়েছেন ৪ জন। তারা হলেন- ‘নৌকা’ প্রতীকে ফারুক আহমদ, চামচ প্রতীকে মো. ফয়জুল ইসলাম, ‘জগ’ প্রতীকে মুহিবুর রহমান ও ‘হ্যাঙ্গার’ প্রতীকে জালাল উদ্দিন। তাই প্রথম বিশ্বনাথ পৌরসভা নির্বাচনের হিসেব-নিকাশ ক্রমশ জটিল হচ্ছে।

প্রার্থীদের মধ্যে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ মনোনীত উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ফারুক আহমদ একজন ক্লিন ইমেজের রাজনীতিবিদ হিসেবে পরিচিত। তাকে নৌকা প্রতিকে বিজয়ী করতে মাঠে একাট্টা আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠন। নিজস্ব ভোট ব্যাংককে পুঁজি করে অনেকটা সুবিধাজনক অবস্থানে আছেন তিনি। যে কারণে তার নিশ্চিত বিজয় দেখছে আওয়ামী লীগ।

মাঠের জরিপে ভোটারের সমর্থন নিয়ে দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. ফয়জুল ইসলাম। তিনি সৎজন, সমাজসেবক, শিক্ষানুরাগী ও পরোপকারী হিসেব বেশ পরিচিত। জানা যায়- প্রতীক সহ নির্বাচনী প্রচারণায় নামতে তার দেরী হয় প্রায় সাত দিন। সকল প্রার্থী ১৮ তারিখে তাদের প্রতীক বরাদ্দ পেলেও পিছিয়ে পড়েন তিনি। শেষ পর্যন্ত হাইকোর্টে নিদের্শ প্রার্থী ফিরে পেলেও প্রতীক বরাদ্দ পান ২৫ অক্টোবর। প্রতীক বরাদ্দের পর প্রচারণায় ঝাপিয়ে পড়েন প্রার্থী ও তার সমর্থক। আল্লামা ফুলতলী ছাহেব কিলাহ (র) এর সংগঠন বাংলাদেশ আনজুমানে আল ইসলাহ ও তালামীযে ইসলামিয়া সকল স্তরের কর্মীবৃন্দও নেমেছেন মাঠে। সকলের জোর প্রচারণায় সকল প্রতীককে পিছিয়ে চামক প্রতীক। বিশ্বনাথ পৌরসভায় ফুলতলী

অনুগামীদেরও রয়েছে বড় ভোট ব্যাংক। স্থানীয় মাঠ জড়িপে শেষ পর্যন্ত চামচ প্রতীকে মো. ফয়জুল ইসলাম চমক দেখাতে পারেন।

অপরদিকে, আওয়ামী লীগের কোনো পদ-পদবীতে বর্তমানে না থাকলেও সাধারণ মানুষের আলোচনায় রয়েছেন সাবেক দুই বারের উপজেলা চেয়ারম্যান মুহিবুর রহমান। তার স্বতন্ত্র ব্যক্তি ইমেজ ও গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে। এর পাশাপাশি রয়েছে নিজস্ব ভোট ব্যাংকও।

সবমিলিয়ে, মুহিবুর রহমান হতে পারেন বিশ্বনাথ পৌরসভার প্রথম মেয়র-এমনটাই মনে করছেন তার কর্মী-সমর্থকেরা।

দলীয় নির্দেশনা উপেক্ষা করে স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী হয়েছেন উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও সদর ইউনিয়নের দুই বারের সাবেক চেয়ারম্যান জালাল উদ্দিন। যদিও সোমবার (৩০ অক্টোবর) জালাল উদ্দিনকে দল থেকে বহিস্কার করেছে কেন্দ্রীয় বিএনপি। অন্যদিকে যুক্তরাজ্যের নিউহাম বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মুমিন খান মুন্নাও প্রার্থী হয়েছেন মোবাইল প্রতীক নিয়ে।  জানা গেছে, বিএনপি ঘরনার এই দুই প্রার্থীকে কেন্দ্র করে দুই ভাগ হয়ে পড়েছে উপজেলা বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা। তাই হিসাব নিকাশে চূড়ান্ত ফলাফল নিয়ে শঙ্কিত পিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতারা।

বিশ্বনাথ পৌরসভা নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা ও মৌলভীবাজার জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মোহাম্মদ আলমগীর হোসেন বলেন, বিশ্বনাথ পৌরসভার প্রথম নির্বাচনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) হবে। সুষ্ঠুভাবে ভোটগ্রহণ সম্পন্ন করতে ইতোমধ্যে সবধরণের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। ভোটাররা যাতে নির্বিঘ্নে ভোট দিতে পারেন সে জন্যেও আমাদের প্রস্তুতি রয়েছে।