মিছিলে মুখরিত সিলেট

মিছিলে মুখরিত সিলেট

আগামীকাল শনিবার সিলেটে বিএনপির সপ্তম বিভাগীয় গণসমাবেশ। এরই মধ্যে নগরীর সরকারি আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে সমাবেশের সব প্রস্তুতি শেষ হয়েছে। মঞ্চও প্রস্তুত। জ্যেষ্ঠ নেতা ও অতিথিদের অনেকেই সিলেট পৌঁছেছেন।

সিলেটের বিভিন্ন প্রান্তিক উপজেলা ও আশেপাশের নেতাকর্মীরা পায়ে হেটে, মোটরসাইকেল শোডাউন দিয়ে আসছেন। নেতাকর্মীরা এখন সিলেটমুখী এবং শহর যেন মিছিলের নগরী। নেতাদের প্রত্যাশা, সব বাধা পেরিয়ে স্মরণকালের বড় গণজমায়েতের জন্য প্রস্তুত সিলেটের আলিয়া মাদ্রাসার ময়দান।

জেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরী বলেন, সিলেটের মানুষ প্রস্তুত। তারা গণসমাবেশে যোগ দিতে দুই দিন আগেই আলিয়া মাদ্রাসার মাঠে এসে উপস্থিত হয়েছে।

এদিকে ১৫ বছর পর বিএনপি প্রকাশ্যে সিলেটে বড় সমাবেশ করতে পারায় নেতাকর্মীরা খুবই উচ্ছসিত। ঢাক, ঢোল, বাদ্য বাজিয়ে খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে নেতাকর্মীরা সমাবেশস্থলে জড়ো হচ্ছেন। তাদের অধিকাংশই বলছেন, পথে পথে পুলিশ ও সরকারদলীয় নেতাকর্মীদের নানা বাধা ও সিলেট বিভাগজুড়ে চলমান পরিবহন ধর্মঘট উপক্ষো করেই কষ্ট করে তারা সিলেটে এসেছেন। তবে পুলিশ ও সরকারদলীয় নেতারা এসব অভিযোগকে মিথ্যা বলে দাবি করছেন।

এদিকে আজকে সিলেটে বিএনপির গণসমাবেশ নিয়ে আশঙ্কা থাকলেও এখন পর্যন্ত বড় ধরনের কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। যদিও বৃহস্পতিবার ছাত্রলীগের শোডাউনের পর আশঙ্কা ছিল যে কোনো সময় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হতে পারে। অবশ্য আওয়ামী লীগ পাল্টা কর্মসূচি দেয়নি।

আজ শুক্রবার সমাবেশস্থল ঘুরে দেখা গেছে, খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে আলিয়া মাদ্রাসার মাঠে আসছেন নেতাকর্মীরা। তাদের মুহুর্মুহু মিছিল থেকে সরকারবিরোধী নানা স্লোগান দেওয়া হচ্ছে। স্লোগানে স্লোগানে উত্তাল আলিয়া মাদ্রাসার মাঠ। সিলেট ছাড়াও সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, নেত্রকোণা, চট্টগ্রাম, বান্দরবান থেকেও বিএনপির হাজার হাজার নেতাকর্মী সিলেটে উপস্থিত হয়েছেন। তবে বেশি দূর থেকে অনেক নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষ গত বুধবার থেকেই আলিয়া মাদ্রাসার মাঠে তাবু খাটিয়ে অবস্থান নেন। সেখানেই চলছে রান্না ও খাওয়া।

নেত্রকোণার খালিয়াজুড়ি থেকে অসংখ্য নেতাকর্মী সিলেটের সমাবেশে যোগ দিয়েছেন গত বৃহস্পতিবার থেকেই। মদন উপজেলার রিফাত হোসেন (১৮) নামের ছাত্রদল কর্মী বলেন, ‘মঙ্গলবার থেকেই মাঠে আছি। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি, বিনা কারণে আমাদের নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তারের প্রতিবাদ এবং দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ও নেত্রকোণার নেতা ও সাবেক মন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরের মুক্তির দাবি জানাতে এসেছি। ইনশাআল্লাহ আমরা আমাদের দাবি আদায় হবে।’

বাবর মুক্তি পরিষদের সভাপতি মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘যার যার মতো হোটেলে গিয়ে খাওয়া দাওয়া করি। আবার মাঠেই রান্না করা হয়। এলাকা থেকেই রান্নার উপকরণ আনা হয়েছে।’ নেত্রকোনা জেলা বিএনপির সদস্য মির্জা হায়দার আলী তিনি বলেন, ‘১৫/১৬ হাজার লোক এসেছি। মূলত বাবর সাহেবের মুক্তির দাবি জানানোর জন্য এসেছি।’

দেখা গেছে, মাঠের এক পাশে বিশাল মঞ্চ তৈরি করা হয়েছে। বেশকিছু মাইক এবং দুটি বিশালাকৃতির প্রজেক্টর লাগানো হয়েছে। মঞ্চের তিন পাশে নির্মাণ করা হয়েছে বিভাগের বিভিন্ন এলাকার নেতাদের উদ্যোগে ক্যাম্প। যেখানে রান্না ও খাবারের ব্যবস্থা রয়েছে। মাঠের প্রবেশমুখে ‘ডা. জুবাইদা রহমান ফ্রি ফুড ক্যাম্প’, জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশন’, ‘ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ড্যাব)’, ছাত্রদল, যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের উদ্যোগে একাধিক ক্যাম্প স্থাপন করা হয়েছে। সেখানে সমাবেশস্থলে আসা নেতাকর্মীদের পানি ও শুকনো খাবার বিতরণসহ বিভিন্ন সেবা দেওয়া হচ্ছে।

শনিবার দুপুর ২টায় সমাবেশ আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হওয়ার কথা। সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরীর সভাপতিত্বে ও জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট এমরান আহমদ চৌধুরী ও সিলেট মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব মিফতাহ সিদ্দিকীর পরিচালনায় সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেবেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এরই মধ্যে বিএনপির সিনিয়র নেতাদের মধ্যে স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় ও ড. আব্দুল মঈন খান, ভাইস চেয়ারম্যান ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল সহ বেশকিছু নেতা সিলেটে পৌঁছেছেন।

মৌলভীবাজার জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান ভিপি মিজানের নেতৃত্বে ১৬ নভেম্বর থেকে মাঠে আছেন কয়েক হাজার নেতাকর্মী। জেলা কৃষকদলের সদস্য সচিব মোনাহিম কবির বলেন, ‘আমরা মাঠে তিন দিন ধরে আছি। বাসে ট্রেনে, এসেছি। বাধা দিছে আওয়ামী লীগ। সরাসারি পরিবহন না থাকায় ভেঙে ভেঙে এসেছি। মাঠে প্যান্ডেল করে থাকা ও রান্না করে খাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। কষ্ট করে এসেছি কারণ আমাদের দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি ও দ্রব্যমূল্য কমানোর দাবি ও ভোটাধিকার ফিরে পাওয়ার জন্য। ইনশাআল্লাহ সরকার পতন হওয়া পর্যন্ত মাঠ থাকব।’

হবিগঞ্জের বানিয়াচং থেকে এসেছেন মো. এওর মিয়া (৫৮)। তিনি বলেন, ‘অনেক কষ্টে বাসে চড়ে এসেছি। আমাদের দাবি হাসিনার গদি ছাড়তে হবে। সে সবকিছুর দাম বাড়িয়েছে।’

দক্ষিণ সুনামগঞ্জ জেলা বিএনপির সাবেক সহসভাপতি মো. শামসুন নূর। যিনি একাধিকবারের ইউপি সদস্য। তিনি বলেন, ‘দক্ষিণ সুনামগঞ্জ থেকে প্রায় ৭০০ হোন্ডাসহ সমাবেশ এসেছি। পুলিশ ও আওয়ামী লীগ দিরাই রাস্তার মোড়, পাগলা ও জাওয়ার বাজার এলাকায় বাধা দিয়েছে। আমরা কষ্ট করে আশা নিয়ে এসেছি।

‘আমাদের দাবি দ্রব্যমূল্য কমাতে হবে। খালেদা জিয়ার মুক্তি দিতে হবে এবং সরকারকে বিদায় নিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে হবে।’

কোনো দল না করেও সুনামগঞ্জের বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা থেকে এক দিন আগেই সিলেটে বিএনপির গণসমাবেশ দেখতে এসেছেন তমিজ উদ্দিন (৬০) নামের এক ব্যক্তি। তিনি বলেন, ‘আমি কোনো রাজনীতি করি না। মনের আবেগে নৌকা যোগে ভেঙে ভেঙে সিলেটে বিএনপির সমাবেশে এসেছি। শুধু দেখার জন্য।’ কেন এসেছেন, এমন প্রশ্নের জবাবে হাস্যোজ্জল মুখে তমিজ উদ্দিন বলেন, ‘বিএনপিকে ভালোবাসি। বহুদিন পর সুযোগ পেয়েছি। সেজন্য কষ্ট করে দেখতে এসেছি।’

নেত্রকোণা জেলা বিএনপির সদস্য মির্জা হায়দার আলী বলেন, ‘১৫/১৬ হাজার লোক এসেছি। মূলত সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর সাহেবের মুক্তির দাবি জানানোর জন্য এসেছি। মদন উপজেলা থেকে ছাত্রদলের কর্মী রিফাত হোসেন (১৮) বলেন, সবাই মিলে মঙ্গলবারই সিলেটে আলিয়া মাদরাসার মাঠে আছি। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি, বিনা কারণে আমাদের নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তারের প্রতিবাদ জানাতে এবং দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ও নেত্রকোণার নেতা ও সাবেক মন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরের মুক্তি দাবি জানাতে এসেছি। ইনশাআল্লাহ আমরা আমাদের দাবি আদায় হবে।’

বাবর মুক্তি পরিষদের সভাপতি মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘যার যার মতো হোটেলে গিয়ে খাওয়া দাওয়া করি। আবার মাঠেই রান্না করা হয়। এলাকা থেকেই রান্নার উপকরণ একসঙ্গে আনা হয়েছে। দলের আরও কঠোর নির্দেশনা পেলে তাও পালন করব।’