লক্ষ্যমাত্রার ১০ লাখ টন কম বোরো উৎপাদন

লক্ষ্যমাত্রার ১০ লাখ টন কম বোরো উৎপাদন

সর্বশেষ বোরো মৌসুমে প্রথমবারের মতো চাল উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা দুই কোটি টনের বেশি নির্ধারণ করেছিল কৃষি মন্ত্রণালয়। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য বলছে, ২০২০-২১ অর্থবছরে দেশে উৎপাদন হয়েছে ১ কোটি ৯৮ লাখ টন বোরো চাল, যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১০ লাখ টন কম। ফলে দেশের চাহিদা মেটাতে চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসেই ৮ লাখ ৬৫ হাজার টন চাল আমদানি করতে হয়েছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের (ডিএই) তথ্যমতে, ২০২০-২১ অর্থবছরে বোরো আবাদের মাধ্যমে দেশে প্রায় ২ কোটি ৮ লাখ ৮৫ হাজার টন চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নেয়া হয়েছিল। এর জন্য ৪৮ লাখ ৭২ হাজার ৬০০ হেক্টর জমিতে ধানের আবাদ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বিবিএসের তথ্য অনুযায়ী, এ সময়ে দেশে বোরো আবাদ হয়েছে ৪৭ লাখ ৮৬ হাজার ৯৯৮ হেক্টর জমিতে। এতে উৎপাদন হয়েছে ১ কোটি ৯৮ লাখ ৮৫ হাজার ২৮৩ টন চাল। ফলে ডিএই লক্ষ্যমাত্রা থেকে দেশে বোরোর আবাদ ও উৎপাদন দুটোই কমেছে। লক্ষ্যমাত্রা থেকে দেশে বোরো আবাদ কমেছে প্রায় ১৪ হাজার ৪০০ হেক্টর ও উৎপাদন কমেছে প্রায় ১০ লাখ টন।

অবশ্য লক্ষ্যমাত্রা থেকে আবাদ ও উৎপাদন কমলেও একটি পরিসংখ্যান বলছে, এর আগের অর্থবছরের তুলনায় বেশি জমিতে ধানের চাষ হয়েছে। ২০১৯-২০ অর্থবছরে ৪৭ লাখ ৬২ হাজার ১৩০ হেক্টর জমিতে বোরো চাষ হয়। ২০২০-২১ অর্থবছরে আরো ২৪ হাজার ৮৬৮ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ হয়েছে।

২০২০-২১ অর্থবছরে দেশী জাতের চালের উৎপাদন হয়েছে ৫৬ হাজার ৬০ টন, উফশী চালের উৎপাদন হয়েছে ১ কোটি ৫২ লাখ ২ হাজার ২৭৬ টন ও হাইব্রিডের উৎপাদন হয়েছে ৪৬ লাখ ২৬ হাজার ৯৪৭ টন। গত অর্থবছরে উফশী চালের উৎপাদন প্রায় ২ শতাংশ ও দেশী জাতের উৎপাদন ৫ দশমিক ৫২ শতাংশ কমেছে। তবে হাইব্রিডের উৎপাদন বেড়েছে ১২ শতাংশের বেশি।

খাদ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০২০-২১ অর্থবছরে আমদানি করা মোট খাদ্যশস্যের (চাল ও গমের) পরিমাণ ছিল ৬৭ লাখ ১ হাজার ৯৭০ টন। এর মধ্যে চাল আমদানি হয়েছে ১৩ লাখ ৫৯ হাজার ও গম আমদানি হয়েছে ৫৩ লাখ ৪২ হাজার ৮০০ টন।

চার দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ খাদ্যশস্য আমদানি হয়েছিল ২০১৭-১৮ অর্থবছরে। যার পরিমাণ ছিল ৯৭ লাখ ৭৪ হাজার টন। গত দুই দশকের মধ্যে চালের আমদানি সবচেয়ে কম হয়েছে গত ২০১৯-২০ অর্থবছরে। এ সময় আমদানির পরিমাণ ছিল মাত্র ৪ হাজার ১৮০ টন। যার সম্পূর্ণটাই বেসরকারিভাবে আমদানি করা হয়েছে। তবে চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের ২৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রায় ছয় মাসে দেশে মোট ২৮ লাখ ১৪ হাজার ৪১০ টন খাদ্যশস্য (চাল ও গম) আমদানি হয়েছে। এর মধ্যে চালের আমদানি প্রায় ৮ লাখ ৬৫ হাজার ৬২০ টন, গমের আমদানি ১৯ লাখ ৪৮ হাজার ৭৯০ টন।

সাবেক খাদ্য সচিব আবদুল লতিফ মন্ডল বলেন, বাজার পরিস্থিতি বলছে চালের ঘাটতি কিংবা অব্যবস্থাপনা রয়েছে। এজন্য দীর্ঘমেয়াদে উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির মাধ্যমে চালের মোট উৎপাদন বাড়াতে হবে। স্বল্পমেয়াদে চালের সরবরাহ বাড়াতে আমদানি বাড়ানো প্রয়োজন। কেননা চালের দাম এখন বেশ উচ্চ পর্যায়ে রয়েছে। সেখানে কৃষকের স্বার্থ কীভাবে রক্ষা করা যায় সেটি নিয়ে ভাবতে হবে। খাদ্য আমদানিনির্ভরতা বৃদ্ধি ও শস্য খাতে প্রবৃদ্ধি কমে যাওয়ার বেশ কয়েকটি উপযুক্ত কারণ রয়েছে। আমরা কৃষকের চাহিদাকে এখনো উপযুক্ত মূল্যায়ন করতে পারিনি। কৃষক যেমন কৃষিপণ্যের উপযুক্ত মূল্য পান না, তেমনি এক বছর কোনো শস্যের বেশি দাম পেলে পরের বছর সেটিই উৎপাদন করেন। ফলাফল দ্বিমুখী মূল্য বিড়ম্বনার শিকার হন কৃষক।

টানা দুই অর্থবছর সরকারিভাবে চাল আমদানি বন্ধ থাকার পর গত সমাপ্ত অর্থবছরে চাল আমদানির অনুমতি দেয়া হয়। মূলত ঘূর্ণিঝড় আম্পান ও টানা কয়েকবারের বন্যায় আমন ও বোরো চালের উৎপাদন বাধাগ্রস্ত হওয়ার শঙ্কায় এ অনুমতি দেয়া হয়েছিল। সে ধারাবাহিকতায় সরকারিভাবে চাল আমদানি শুরু করা হয়। এছাড়া গত বছরের ২৪ ডিসেম্বর চালের আমদানি শুল্কে বড় ধরনের ছাড়ের ঘোষণা দেয় সরকার। বেসরকারিভাবে চাল আমদানিতে আমদানি শুল্ক ৬২ দশমিক ৫ থেকে ২৫ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়। বিভিন্ন সময়ে এটি শিথিল ও পরিমার্জন করার কারণে সরকারিভাবে আমদানির পাশাপাশি বেসরকারি চাল আমদানিও বাড়ে।

-বণিক বার্তা