শাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন: ৮ মাসেও প্রত্যাহার হয়নি মামলা

শাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন: ৮ মাসেও প্রত্যাহার হয়নি মামলা

এ বছরের ১৬ জানুয়ারি শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশি হামলার ঘটনায় আমরণ অনশনে নামেন শিক্ষার্থীরা। পরে শিক্ষামন্ত্রীসহ সরকারের বিভিন্ন মহল থেকে দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাসে ও অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবালের অনুরোধে শিক্ষার্থীরা অনশন কর্মসূচি থেকে সরে আসেন। তবে আট মাস পেরিয়ে গেলেও সে সময় দেওয়া আশ্বাসের বেশিরভাগই পূরণ হয়নি। শিক্ষামন্ত্রীর আশ্বাস, শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে হওয়া মামলা তুলে নেওয়ার দাবিসমূহের কোনোটিই মানা হয়নি। বরং আন্দোলনে সংশ্লিষ্ট শিক্ষার্থীরা নানাভাবে ক্লাসে এবং ক্লাসের বাইরে হয়রানির শিকার হচ্ছেন।

রবিবার (১৮ সেপ্টেম্বর) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে এক সংবাদ সম্মেলনে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের পক্ষে এসব অভিযোগ তুলে ধরেন পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী মুহাইমিনুল বাশার রাজ।

সংবাদ সম্মেলনে পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী সাবরিনা শাহরিন রশিদ ও শাহরিয়ার আবেদিন, নৃবিজ্ঞান বিভাগের সজল কুন্ডু, পরিসংখ্যান বিভাগের নওরিন জামান, বায়োকেমিস্ট্রি অ্যান্ড মলিকুলার বায়োলজি বিভাগের হালিমা খানম ও কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের রক্তিম সাদমানসহ আরও অনেকে উপস্থিত ছিলেন। 

সংবাদ সম্মেলনে মুহাইমিনুল বাশার রাজ বলেন, পুলিশি হামলার ঘটনায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হন নৃবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী সজল কুন্ডু। শরীরে ৮৩টি স্প্লিন্টার বিদ্ধ হন তিনি। অস্ত্রপাচারে আটটি স্প্লিন্টার বের করা সম্ভব হলেও এখনও ৭৫টি স্প্লিন্টার রয়েছে তার শরীরে। তিনি লেখাপড়ার পাশাপাশি চালাতেন বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে আইআইসিটি ভবনের ক্যাফেটেরিয়া। আন্দোলনে সমর্থন করা ও প্রশাসনের বিরোধিতার অভিযোগ এনে কৌশলগতভাবে ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে এ ক্যাফেটেরিয়া। এর প্রেক্ষিতে গত ৪ সেপ্টেম্বর থেকে তিনদফা দাবিতে একক অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন সজল। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সজলের দাবিগুলো মানার ক্ষেত্রে কোনও পদক্ষেপ নেয়নি।

এ সময় ‘সজলের তিন দফা দাবির সঙ্গে আন্দোলনকারীরা সংহতি জানাচ্ছে’ উল্লেখ করে সংবাদ সম্মেলনে রাজ বলেন, সজলের তিন দফা দাবি যৌক্তিক। তার সঙ্গে বিশ্ববিদ্যারয় প্রশাসন অন্যায় করেছে।

সজলের তিন দফা দাবির মধ্যে রয়েছে- শিক্ষার্থীদের নামে করা মামলা প্রত্যাহার, শিক্ষার্থীদের দেওয়া প্রতিশ্রুতিসমূহ বাস্তবায়ন এবং তার থেকে ‘অন্যায়ভাবে’ কেড়ে নেওয়া ক্যাফেটেরিয়া পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া।

রাজ আরও বলেন, ‘পুলিশের হামলায় আহত সজলকে নগদ ক্ষতিপূরণ ও চাকরির আশ্বাস দিয়েছিলেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। কিন্তু শিক্ষামন্ত্রীর দেওয়া প্রতিশ্রুতি, ক্ষতিপূরণ বা চাকরি কোনোটাই এখনও মেলেনি। উল্টো তার থেকে ক্যাফেটেরিয়ার দায়িত্ব কেড়ে নেওয়া হয়েছে। এতে স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে হিমশিম খাচ্ছেন তিনি। চরম অর্থ সংকটেও পড়েছেন। চিকিৎসকদের পরামর্শ অনুযায়ী প্রথম কিছুদিন সরকারি তত্ত্বাবধানে সজলের নিয়মিত চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হলেও গত তিনমাস ধরে তাও বন্ধ রয়েছে। বারবার সরকার বা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে অবহিত করার পরও তার চিকিৎসার দায়িত্ব নেওয়া হচ্ছে না।’

‘তোলা হয়নি মামলাগুলো’ উল্লেখ করে রাজ বলেন, স্বল্প সময়ের মধ্যে মামলা প্রত্যাহারের কথা বলা হলেও ইতোমধ্যে ৮ মাস পেরিয়ে গেছে, কিন্তু শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে হওয়া মামলা তোলা হয়নি। তবে সাবেকদের অর্থ সরবরাহের প্রেক্ষিতে দায়েরকৃত মামলা নিষ্পত্তির জন্য সম্প্রতি একটি আপসনামা আমাদের হাতে এসেছে। তবে অজ্ঞাতনামা মামলা সমাধানে এখনও কোনও দৃশ্যমান অগ্রগতি দেখা যায়নি। 

‘আন্দোলনের সম্মুখসারির শিক্ষার্থীদের হেনস্তা করা হচ্ছে’ অভিযোগ তুলে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, শিক্ষার্থীদের কোনও ক্ষতি হবে না এমন শর্তে আন্দোলন স্থগিত করা হয়েছিল। কিন্তু কিছু শিক্ষক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদের মন জয় করে বিভিন্ন সুবিধা আদায়ের লক্ষ্যে পেশাগত দায়িত্ব ভুলে আন্দোলনে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীদের শ্রেণিকক্ষ ও ক্যঅম্পাসে বিভিন্নভাবে হেনস্তা করছেন। এক শিক্ষার্থী থিসিস করতে চাইলে তার বিভাগের কোনও শিক্ষকই তাকে সুপারভাইজের দায়িত্ব নিতে চাননি। 

সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষার্থী রাজ আরও বলেন, গত আট মাসেও ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটি কোনও রিপোর্ট জমা দেয়নি। এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, পুলিশের হামলার সুষ্ঠু তদন্তের লক্ষ্যে গত ১৬ জানুয়ারি রাতে ভৌত বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক রাশেদ তালুকদারকে সভাপতি করে আট সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। তবে আট মাস পেরিয়ে গেলেও এখনও রিপোর্ট দিতে পারেনি তদন্ত কমিটি।

এ বিষয়ে তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক রাশেদ তালুকদার সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা বেশ কয়েকজন প্রতক্ষদর্শীর সাক্ষ্য নিয়েছি। সুষ্ঠু তদন্তের জন্য আমাদের কার্যক্রম চলছে। সম্পূর্ণ রিপোর্ট তৈরি করতে আমাদের আরও সময় লাগবে।’ তবে তদন্তের কাজে শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে তেমন কোনও সাড়া পাওয়া যায়নি বলে অভিযোগ তুলেন তিনি।