সিলেটের ভূমিকম্প নিয়ে ঢাকায় বিশেষজ্ঞ কমিটি

সিলেটের ভূমিকম্প নিয়ে ঢাকায় বিশেষজ্ঞ কমিটি

সিলেটে কয়েকদফা সিরিজ ভূমিকম্প ভাবনায় ফেলে দিয়েছে বিশেষজ্ঞদের। বিষয়টি নিয়ে সরকারও বেশ উদ্বিগ্ন। বিশেষ করে দেশের পেট্রোলিয়াম ও গ্যাসের মজুদের বড় একটি অংশ সেখানে রয়েছে। ভূমিকম্পে পেট্রোলিয়াম ও গ্যাসের মজুদের উপর কোনো প্রভাব পরছে কিনা সে বিষয়গুলো নিয়ে কিছুটা চিন্তিত সংশ্লিষ্টরা।

এমন বাস্তবতায় বিশেষজ্ঞদের নিয়ে একটি জাতীয় কমিটি গঠন করেছে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ। গঠিত এ কমিটি সিলেট সরেজমিনে পরিদর্শন গিয়ে সার্বিক বিষয় বিশ্লেষণ করে প্রতিবেদন আকারে মন্ত্রণালয়ে জমা দেবে।

এ বিষয়ে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের যুগ্মসচিব (পরিকল্পনা) ড. মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘মন্ত্রণালয় থেকে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। এটি নিয়ে কাজ করছে পেট্রোবাংলা ও বাপেক্স। কমিটিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন এক্সপার্ট রাখা হয়েছে।’

সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, সিলেটে ভূমিকম্প হওয়ার বিষয়ে বুধবার জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. আনিছুর রহমানের নেতৃত্বে একটি দীর্ঘ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে ভূমিকম্পের বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের মতামত নেয়া হয়। বিশেষজ্ঞরা বৈঠকে সিলেটে ভূমিকম্পের বিষয়টি ব্যাখ্যা করেন।

সূত্র আরো জানায়, সিলেটে পেট্রোলিয়াম ও গ্যাসের উৎপাদনে ভূমিকম্পের কোন প্রভাব আছে কিনা সে বিষয়েও মতামত দেন বিশেষজ্ঞরা। সার্বিক বিষয় আলোচনা শেষে পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করতে বলা হয়। কমিটিতে পেট্রোবাংলা, বাপেক্সের বিশেষজ্ঞদের পাশাপাশি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুইজন অধ্যাপক রাখা হয়েছে। গঠিত এই কমিটিকে পাঁচদিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।

কমিটিতে থাকা একজন বিশেষজ্ঞ বলেন, ‘ভূমির ৪০/৫০ কিলোমিটার নিচে ভূমিকম্পের উৎপত্তি হয়। আর হাইড্রোকার্বন (গ্যাস বা পেট্রোলিয়াম) উৎপাদনের কাজ করা হচ্ছে মাত্র সাড়ে তিন কিলোমিটার নিচে। তাই ভূমিকম্প হওয়ার সাথে হাইড্রোকার্বন (গ্যাস বা পেট্রোলিয়াম) উৎপাদনে কোনো প্রভাব পড়ার আশঙ্কা নেই। তবে উল্টো ঘটনাও ঘটতে পারে।’

‘সেটি হলো ভূমিকম্পে হাইড্রোকার্বন উৎপাদনে কোনো প্রভাব পরছে কিনা। যদিও যে মাত্রার ভূমিকম্প হচ্ছে সেটি প্রভাব পড়ার কথা নয়। কিন্তু মানুষ টেকনিক্যাল বিষয়গুলো না জানার কারণে নানা কথা বলছে। তবে বড় মাত্রার ভূকম্পন হলে হাইড্রোকার্বন উৎপাদনে প্রভাব পরতে পারে।’

বিশেষজ্ঞদের মতে, ১ মিলিয়নের ওপরে এটেম বোমা একসঙ্গে ফাটলে যে শক্তি উৎপন্ন হয় সেটিতে দুই মাত্রার ভূকম্পন অনুভূত হয়। আর দুই মাত্রার কম্পন হলে সেটি ভূমির উপরে কোনো কিছুই অনুভব করা যায় না। এক্ষেত্রে ভূকম্পনে হাইড্রোকার্বন উৎপাদনেও কোন প্রভাব পড়ার কথা নয়। এরপরও সার্বিক বিষয়গুলো সরেজমিনে বিশ্লেষণ করে দেখবে গঠিত কমিটি। বিশেষ করে স্থানীয় মানুষদের মাঝে যে প্রশ্ন তৈরি হয়েছে সেটি খোঁজার চেষ্টা করা হবে।

গত ২৯ মে সিলেটে সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত চার দফাসহ মোট ৬ বার ভূকম্পন অনুভূত হয়। এরপরও বেশ কয়েকবার ভূকম্পন অনুভূত হওয়ার কথা জানায় আবহাওয়া অধিদপ্তরের ভূমিকম্প পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র। এরই মধ্যে গত সোমবারও (৭ জুন) সন্ধ্যা ৬টা ২৮ মিনিট ও ৬টা ৩০ মিনিটে সিলেট শহর ও এর আশেপাশের এলাকায় ভূমিকম্প হয়। এ নিয়ে সিলেটবাসীর মধ্যে এক ধরণের চাপা আতঙ্ক বিরাজ করছে। যদিও বিশেষজ্ঞরা বলছে, এটা স্বাভাবিক বিষয়। এমন ভূমিকম্পে আতঙ্ক নয়, সতর্ক ও প্রস্তুতি থাকা দরকার।

এদিকে টানা ভূমিকম্পের পর সম্ভাব্য বিপর্যয় আমলে নিয়ে জানমালের নিরাপত্তার স্বার্থে নগরীর ঝুঁকিপূর্ণ ভবন পরীক্ষা-নিরীক্ষায় নেমেছেন সিলেটের বিশেষজ্ঞরা। এর অংশ হিসেবে বৃহস্পতিবার (১০ জুন) দুপুরে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পৃথক দু’টি বিশেষজ্ঞ দল বৃহস্পতিবার প্রথম দিনের পর্যবেক্ষণে নামেন।

এ সময় তারা নগরীর মধুবন সুপার মার্কেট, মিতালি ম্যানশন, সমবায় ভবন, সিটি সুপার মার্কেটসহ চিহ্নিত ঝুঁকিপূর্ণ কয়েকটি ভবন পরিদর্শন করেন।

পর্যবেক্ষণের পর শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব এপ্লাইড সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি বিভাগের ডিন প্রফেসর ড. মোশতাক আহমেদ জানান, বন্ধ থাকা ৬টি মার্কেটের গুরুত্ব বিবেচনায় এগুলো দিয়েই তারা ভবনগুলোর সক্ষমতার বিষয়ে প্রাথমিক পর্যবেক্ষণ কার্যক্রম শুরু করেছেন। আরও বিভিন্ন বিষয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর ভবনগুলোর সক্ষমতা নিয়ে প্রতিবেদন জমা দেওয়া হবে।

তিনি জানান, এটি তাদের প্রাথমিক কার্যক্রম। ভবনগুলো সম্পর্কে জানতে তাদের আরও পরীক্ষা-নিরীক্ষা প্রয়োজন। পর্যায়ক্রমে নগরীর সবগুলো ভবন সার্ভে করে ঝুঁকি নির্ণয় করবেন তারা।

জানা গেছে, এই মুহূর্তে বিশেষজ্ঞরা ভূমিকম্প নিয়ে গবেষণার চেয়ে ভূমিকম্প ঝুঁকির শহরে মানুষকে বাঁচানো বা ক্ষয়ক্ষতি কিভাবে কমিয়ে আনা যায় সেদিকে লক্ষ রেখেই কাজ শুরু করেছেন। এর অংশ হিসেবে আগামী ৬ মাসের মধ্যে নগরীর সকল ভবনের সক্ষমতা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে প্রতিবেদন জমা দেবেন। চিহ্নিত করবেন ঝুঁকিপূর্ণ সব ভবন। এ বিষয়ে করণীয় ঠিক করতে বুধবার (৯ জুন) বিকেলে শাবিপ্রবিতে জরুরি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

এ সময় সিলেট সিটি কর্পোরেশনের সাথে কাজ করতে আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্তে পৌঁছান শাবির বিশেষজ্ঞরা।