সুনামগঞ্জের ফসল রক্ষা বাঁধ: সময় যায় শঙ্কা বাড়ে

সুনামগঞ্জের ফসল রক্ষা বাঁধ: সময় যায় শঙ্কা বাড়ে

ফসল রক্ষা বাঁধের কাজে বর্ধিত সময়ের শেষ। কিন্তু বাঁধের অনেক কাজ বাকি রয়ে গেছে। দূর্বা রোপণ, দুরমুশ করা, প্যালিসাইডিং দূরের কথা, এখনও মাটি ফেলার কাজই শেষ হয়নি কোনো কোনো বাঁধে। ঝুঁকিপূর্ণ ক্লোজারও রয়েছে অরক্ষিত অবস্থায়। উৎকণ্ঠা আর উদ্বেগ নিয়ে বাঁধের ওপর দাঁড়ানো কৃষকদের চোখেমুখে সব হারানোর ভয়।

যেখানে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ সহজে পৌঁছাতে পারছে সেখানে কাজের গতি এক ধরনের, অন্য ক্ষেত্রে আরেক অবস্থা। এখন পর্যন্ত বাঁধের কাজ যতটুকু এগিয়েছে তাতে পানি উন্নয়ন বোর্ডের গড় হিসাব ৮৭ শতাংশ। বাস্তবে সেটি আরও অনেক কম। পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব গত সপ্তাহে সুনামগঞ্জের হাওর রক্ষাবাঁধের নির্মাণকাজ ঘুরে দেখার সময় বাঁধের কাজে অনিয়ম হলে ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দেওয়া সত্ত্বেও তেমন প্রভাব পড়েনি দায়িত্বশীলদের ওপর।

জেলার দিরাই উপজেলার উজান ধলের পাশের তুফানখালী বাঁধে সম্প্রতি গিয়ে দেখা গেছে, গুরুত্বপূর্ণ বাঁধটির ক্লোজার অংশ এখনও অরক্ষিত। বাঁধের দুই পাশে কাজ করে মাঝখানে একটি এক্সক্যাভেটর দিয়ে শেষ সময়ে নরম কাদামাটি তোলা হচ্ছে। বাঁধের পাশে দাঁড়ানো ধল আশ্রম গ্রামের কৃষক রূপণ মিয়া জানান, কালনী নদীতে জোয়ার আসার সময় এসেছে। এখন এক্সক্যাভেটর দিয়ে মাটি তুলে বাঁধের দায়সারা কাজ হচ্ছে। বুরঙ্গা দিয়ে হাওর ডুবলে কেবল দিরাই-শাল্লার মানুষ নয়, নেত্রকোনা-কিশোরগঞ্জে গিয়ে ঠেকবে পানি। আরেক কৃষক জানান, অসময়ে দেওয়া দুর্বল বাঁধ পানির বড় ধাক্কা সামলাতে পারবে না।

জানা গেছে, কালনী নদীর কূল ঘেঁষে বিশাল বরাম হাওরে পানি ঢোকার সবচেয়ে বড় ক্লোজার তুফানখালী। এমন গুরুত্বপূর্ণ অংশের বাঁধের কাজ এভাবে কেন হলো তা নিয়ে ক্ষুব্ধ স্থানীয়রা।

এমন প্রশ্নের জবাবে দিরাই উপজেলা হাওর রক্ষাবাঁধ নির্মাণ ও মনিটরিং কমিটির সদস্য সচিব পাউবো প্রকৌশলী আব্দুল মোনায়েম জানান, বাঁধের দুই পাশের কাজ করা হয়েছে মাঝখান দিয়ে মাটি তুলে, পরে এই অংশে যখন কাজ ধরা হয়, তখন এক্সক্যাভেটর মেশিন বারবার নষ্ট হওয়ায় এখানে কাজ শুরু করতে দেরি হয়েছে। দুই দিনের মধ্যে কাজ শেষ হয়ে যাবে।

তবে প্রকৌশলী মোনায়েমের বক্তব্যের সঙ্গে মিল নেই এই বাঁধের (১৩৮ নম্বর) প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির (পিআইসি) সভাপতি আব্দুল হালিমের বক্তব্যের। তিনি বললেন, শুরুর দিকে এক্সক্যাভেটর মেলানো যায়নি। এখন যেহেতু কাজ শুরু করেছি, শেষ হয়ে যাবে আগামী দু’দিনের মধ্যে।

সুনামগঞ্জে এবার ২০৩ কোটি টাকা ব্যয়ে ১ হাজার ৭৮টি পিআইসির মাধ্যমে ৭৩৫ কিলোমিটার বাঁধের কাজ হচ্ছে। এ পর্যন্ত বরাদ্দ পাওয়া গেছে ১০০ কোটি টাকা। নীতিমালা অনুযায়ী ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যে শুরু হওয়া কাজ শেষ হওয়ার নির্দেশনা ছিল ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে। পরে মেয়াদ বাড়িয়ে সাত মার্চ পর্যন্ত করা হয়। তবে শনিবার পর্যন্ত ধর্মপাশার গাগলাখালী, শয়তানখালী, মধ্যনগরের আবিদনগর বাজারসংলগ্ন বাঁধ, জিনাইরা বাঁধ, তাহিরপুরের মহালিয়া হাওরের ১৯ ও ১৪ নম্বর প্রকল্প, মাটিয়ান হাওরের বনোয়া বাঁধ, জামালগঞ্জের হালির হাওরের পুরোনো গনিয়াখাড়া, দোয়ারাবাজারের নাইন্দার হাওরের ২, ২৮ ও ৩৫ নম্বর প্রকল্পের কাজ শেষ হয়নি। শাল্লায় ভান্ডাবিল হাওরের ৩৪ ও ভেড়া মোহনার দুটি গুরুত্বপূর্ণ বাঁধ এবং জগন্নাথপুরের নলুয়ার হাওরের ১, ৯, ১০, ১১, ১৪ ও ১৮ নম্বর পিআইসির কাজ শেষ হয়নি।

হাওরের কৃষি ও কৃষক রক্ষা সংগ্রাম পরিষদের সদস্য সচিব চিত্ত রঞ্জন তালুকদার বললেন, ‘জেলাজুড়েই এমন অবস্থা। অনেক বাঁধেই দায়সারাভাবে মাটি ফেলে ঘাস লাগানোর কাজ শেষ না করেই কমিটি বাঁধ ছেড়ে চলে এসেছে।’

জেলা হাওর রক্ষাবাঁধ নির্মাণ ও মনিটরিং কমিটির সভাপতি জেলা প্রশাসক দিদারে আলম মোহাম্মদ মাকসুদ চৌধুরী বলেন, ‘হাওর রক্ষাবাঁধের কাজ শেষ পর্যায়ে। দুই দিনের মধ্যে কাজ শেষ না করলে পিআইসির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’