স্কুল খুলে দেওয়ার আহ্বান ইউনিসেফ ও ইউনেস্কোর

স্কুল খুলে দেওয়ার আহ্বান ইউনিসেফ ও ইউনেস্কোর

স্কুল চালু করতে আর অপেক্ষা করা যায় না বলে মনে করে ইউনিসেফ ও ইউনেস্কো। জাতিসংঘের এ দুটি সংস্থা এক বিবৃতিতে বলেছে, বন্ধের ক্ষেত্রে স্কুলগুলো সবার শেষে এবং খোলার ক্ষেত্রে সবার আগে থাকা উচিত।

ইউনিসেফের নির্বাহী পরিচালক হেনরিয়েটা ফোর ও ইউনেস্কোর মহাপরিচালক অড্রে অ্যাজুল সোমবার এক যৌথ বিবৃতিতে তারা এ কথা বলেন।

জাতিসংঘের সংস্থা ‘ইউনাইটেড নেশনস চিলড্রেনস এমার্জেন্সি ফান্ড’ বা ইউনেস্কো সারা বিশ্বের শিশুদের মানবিক সহায়তা ও উন্নয়ন নিয়ে কাজ করে। এ ছাড়া ইউনাইটেড নেশনস এডুকেশন, সায়েন্টিফিক অ্যান্ড কালচারাল অর্গানাইজেশন বা ইউনেস্কো শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতিবিষয়ক সহযোগিতা দিয়ে থাকে।

যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়, কোভিড-১৯-এর প্রাদুর্ভাব শুরু হওয়ার পর ১৮ মাস পেরিয়ে গেছে। লাখ লাখ শিশুর পড়াশোনা এখনও ব্যাহত হচ্ছে। ১৯টি দেশে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয় বন্ধ রয়েছে, যা ১৫ কোটি ৬০ লাখেরও বেশি শিক্ষার্থীকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। এটা চলতে পারে না।

বাংলাদেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠাত ২০২০ সালের ১৭ মার্চ থেকে বন্ধ রয়েছে। ক্লাস চলছে অনলাইনে। বিশ্ববিদ্যালয়ে কিছু পরীক্ষাও নেয়া হচ্ছে এভাবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে দাবি উঠেছে সশরীরে ক্লাস করার সুযোগ দিতে।

গত জুনে শিক্ষাঙ্গন খোলার কথা থাকলেও করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে মানুষের জনসমাগম সীমিত করেছে যা এবার শাটডাউন নামে পরিচিতি পেয়েছে।

ইউনিসেফের বিবৃতিতে বলা হয়, ‘সংক্রমণ সীমিত পর্যায়ে রাখার প্রচেষ্টায় সরকারগুলো অনেক সময়ই স্কুল বন্ধ করে দিয়েছে এবং দীর্ঘকাল ধরে সেগুলো বন্ধ রেখেছে, এমনকি মহামারিজনিত পরিস্থিতি যখন এটা দাবি করে না তখনও। প্রায়শই এই ব্যবস্থাগুলো শেষ পদক্ষেপ হিসেবে নেয়ার বদলে প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে নেয়া হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে স্কুলগুলো বন্ধ রাখা হলেও বার ও রেস্তোরাঁগুলো খোলা ছিল।

‘স্কুলে যেতে না পারার কারণে শিশু এবং তরুণ জনগোষ্ঠী যে ক্ষতির সম্মুখীন হবে তা হয়তো কখনোই পুষিয়ে নেয়া যাবে না। শেখার ক্ষতি, মানসিক সংকট, সহিংসতা ও নির্যাতনের সম্মুখীন হওয়া থেকে শুরু করে স্কুলভিত্তিক খাবার ও টিকা না পাওয়া বা সামাজিক দক্ষতার বিকাশ কমে যাওয়া – শিশুদের ক্ষেত্রে তাদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের পাশাপাশি তাদের শিক্ষাগত অর্জন এবং সামাজিক সম্পৃক্ততায় এর প্রভাব পরিলক্ষিত হবে।’

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, এটি সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত যে, সংক্রমণের প্রধান চালিকাশক্তিগুলোর মধ্যে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলো নেই। এদিকে, বেশির ভাগ ক্ষেত্রে উপযুক্ত প্রশমন কৌশল অবলম্বনের মাধ্যমে স্কুলগুলোতে কোভিড-১৯ সংক্রমণের ঝুঁকি সামাল দেয়া সম্ভব। স্কুল খুলে দেয়া বা বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত ঝুঁকি বিশ্লেষণের ভিত্তিতে এবং যে কমিউনিটিতে স্কুল অবস্থিত সেখানকার মহামারি পরিস্থিতি বিবেচনা করে নেয়া উচিত।

টিকা দিয়ে স্কুল খুলে দেয়ার বিষয়ে বিবৃতিতে বলা হয়, ‘স্কুলগুলো পুনরায় চালুর ক্ষেত্রে সব শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর টিকা দেয়ার জন্য অপেক্ষা করা যায় না। বৈশ্বিক পর্যায়ে টিকা ঘাটতি নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোকে বিপর্যয়ের মুখে ফেলেছে। এ অবস্থায় টিকাদানের ক্ষেত্রে সম্মুখসারির কর্মী ও মারাত্মক অসুস্থতা ও মৃত্যুর ঝুঁকিতে থাকা জনগোষ্ঠীকে অগ্রাধিকার প্রদান অব্যাহত থাকবে। স্কুলে প্রবেশের আগে টিকাদান বাধ্যতামূলক না করাসহ সব স্কুলের উচিত যত দ্রুত সম্ভব ব্যক্তিগতভাবে স্কুলে উপস্থিত হয়ে শিক্ষার্থীরা যাতে কোনো ধরনের বাধা ছাড়াই শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে সে ব্যবস্থা করা।’

আরও বলা হয়, ‘বর্তমানের অস্পষ্ট সুবিধার জন্য স্কুল বন্ধ রাখার মাধ্যমে আমাদের ভবিষ্যৎকে জিম্মি রাখা হচ্ছে। অগ্রাধিকার দেয়ার ক্ষেত্রে আমাদের অবশ্যই আরও বিবেচক হতে হবে। আমরা নিরাপদে স্কুলগুলো পুনরায় চালু করতে পারি এবং আমাদের অবশ্যই এটি করা উচিত। ’