ইউপি নির্বাচন: আমাদের ভাবনা, সম্ভাবনা ও প্রত্যাশা

নির্বাচন হলো সিদ্ধান্ত গ্রহণের এমন একটি আনুষ্ঠানিকতা, যার মাধ্যমে জনগণ প্রশাসনিক কাজের জন্য একজন প্রতিনিধিকে বেছে নেয়।
সপ্তদশ শতক থেকে আধুনিক প্রতিনিধিত্বমূলক গণতন্ত্রে নির্বাচন একটি আবশ্যিক প্রক্রিয়া হয়ে দাঁড়িয়েছে। নির্বাচনের মাধ্যমে আইনসভার পদগুলি পূরণ করা হতে পারে, কখনও আবার কার্যনির্বাহী ও বিচারব্যবস্থা ছাড়াও আঞ্চলিক এবং স্থানীয় সরকারে প্রতিনিধি বাছাইও নির্বাচনের মাধ্যমে করা হয়ে থাকে।
উৎসবপরায়ণ বাঙালির জন্য অন্যান্য উৎসবগুলোর মতোই নির্বাচন একটি সার্বজনীন উৎসব। জাতীয় ও স্থানীয় নির্বাচনের সময় চারদিকে উৎসবের আমেজ বিরাজ করে।
নির্বাচনকালীন সময়ে মিডিয়ার টেবিল টক-শো থেকে শুরু করে গ্রামের চায়ের দোকান পর্যন্ত সর্বত্র বিরাজ করে রমারমা তর্কযুদ্ধ, গভীর বিশ্লেষণ, রাজনীতির মাঠ থাকে বেশ গরম ও সরব।
শহরের অলি-গলি থেকে গ্রামের টং দোকান সবখানে চায়ের চুমুকে জমে যায় নির্বাচনী সংলাপ। দোকানে দোকানে মুরুব্বীদের ঝড়তোলা তর্কবিতর্ক,রাজপথের স্লোগান - যা সত্যিই সুন্দর দৃশ্য।
অলসপ্রিয় বাঙালি অন্যের কথাবার্তায় মগ্ন থাকতে খুব বেশি ভালোবাসে তাইতো নির্বাচন আসলেই শুরু হয় ব্যক্তিবিশ্লেষণ যেটা অবশ্য গণতান্ত্রিক দেশের নাগরিক হিসেবে অধিকার রাখে।
বর্তমানকালে সুষ্ঠু নির্বাচন অনেকটা অমাবস্যার চাঁদের মতো তবুও আমরা আশাবাদী।ভোটকেন্দ্রে লোকে লোকারণ্য হয়ে সারিবদ্ধভাবে ভোট প্রদান করবে এমনটা ভাবতেই পারি।
আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদে নির্বাচনে দলীয় প্রতীকে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে এটাতে ভাবনা ও সম্ভাবনা দুটোই রয়েছে। দিনশেষে একজন সৎ,যোগ্য, শিক্ষানুরাগী,দেশপ্রেমিক,অসাম্প্রদায়িক,মেধাবী মানুষ নির্বাচিত হউক এটাই আমাদের প্রত্যাশা।
আমার নিজ ইউনিয়ন কিংবা উপজেলার কথা বলছি না দেশের প্রতিটা ইউনিয়নে যোগ্য ব্যক্তিরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হউক এটা আমাদের দাবী ও অধিকার।
আমাদের প্রত্যাশা-
নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের কাছে একজন সাধারণ সচেতন নাগরিক হিসেবে আমাদের কিছু আশা প্রত্যাশা রয়েছে। যে আশা-প্রত্যাশার ভরসা কিংবা অধিকারে দেশের একজন নাগরিক বা উক্ত ইউনিয়নের স্থায়ী বাসিন্দা হিসেবে আমাদের প্রাপ্য অধিকারগুলো হল -
১. মাদকমুক্ত সমাজ বিনির্মাণের প্রতিশ্রুতি ও বাস্তবায়ন
২. জল মহালের সীমানা নির্ধারণ ও সুষ্ঠু বন্টণ
৩. প্রশাসনিক হয়রানী থেকে সাধারণ মানুষের মুক্তি
৪. দুস্থ-বিধবা,প্রতিবন্ধি, বয়স্কভাতা ও ভিজিএফের ত্রাণ বিতরণে বৈষম্য ও দুর্নীতিমুক্তকরণ
৫. নদীশাসন ও নৌ-পথে চাঁদাবাজি নিরসন
৬. হাওররক্ষা বেড়িবাঁধ ও অকালবন্যায় ফসলহানীর বিষয়ে সার্বিক তত্ত্বাবধান
৭. গ্রাম্য সালিশে স্বজনপ্রীতি ও দুর্নীতিমুক্তকরণ
৮.এলাকার অবকাঠামোগত উন্নয়ন
৯.যোগাযোগব্যবস্থা উন্নীতকরণ
১০.ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকমপ্লেক্স ও এর সঠিক তদারকি
১১.জন্মসনদ,মৃত্যুসনদ ও চারিত্রিক সনদপত্র
তৈরীতে ভুক্তভোগীদের হয়রানীমুক্তকরণ ইত্যাদি।
আমাদের সম্ভাবনা-
প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর এক জনপদে আমরা বসবাস করছি। প্রাকৃতিক এই সম্পদকে আমরা কাজে লাগাতে পারছি না সঠিকভাবে বরং দিনদিন ধ্বংশের মুখে ঠেলে দিচ্ছি।
প্রতিবছর হিজল-করচের গাছ হ্রাস পাচ্ছে,অতিথি পাখি শিকার হচ্ছে,মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্রগুলোর ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে এ ব্যাপারে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের আরো সচেতন হতে হবে। প্রাকৃতিক সম্পদ রক্ষায় যুগান্তকারী পদক্ষেপ নিতে হবে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের।
সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় বাঁচাতে হবে হাওর,কৃষি,মৎস্য ও সৃষ্টিকর্তা প্রদত্ত-
১. প্রাকৃতিক সৌন্দর্য
২. জনসম্পদ
৩. প্রাকৃতিক সম্পদ ইত্যাদি।
আমাদের সমস্যা-
পুরো দেশ যখন উন্নয়নের জোয়ারে ভাসছে তখনো বঞ্চিত বংশীকুন্ডা তথা আমরা মধ্যনগরবাসী। শিক্ষা,স্বাস্থ্য, যোগাযোগের নাজুক পরিস্থিতি ও দুর্নীতির যাঁতাকলে পিষ্ট বারবার। আমরা এ অবস্থান থেকে উত্তরণ চাই। জনপ্রতিনিধিরা আমাদের পক্ষে প্রতিনিধিত্বমুলক দাবীর লক্ষ্যে লড়বে,কথা বলবে এটা আমাদের বিশ্বাস। সেসব সমস্যার আশু সমাধান করবে তা হলো-
১. যোগাযোগ
২. দুর্নীতি
৩. মাদক-চোরাচালান
৪. প্রশাসনিক ঝামেলা
আমাদের ভাবনা, তারুণ্যের ভাবনা-
তারুণ্যের বিজয়ের প্রতীক। তারুণ্যের জয় হলে জিতে যায় দেশ ও দেশের মানুষ। তারুণ্যের ভাবনা যুগোপযোগী ও বাস্তবিক হয়। তাই তরুণদের ভাবনাকে সসবসময় গুরুত্বসহকারে দেখতে হবে এবং ভাবতে হবে তারুণ্যের ভাবনায়।
তরুণ হিসেবে আমাদের ভাবনা হলো-
১. ডিজিটাল ইউনিয়ন সেবা
২. তারুণ্যের জয়
৩. শিক্ষা ও পরিবেশবান্ধব ইউনিয়ন
৪. প্রবীণ-নবীনের সেতুবন্ধনে সমৃদ্ধ ইউনিয়ন
৫. সমৃদ্ধ সোনার বাংলা বিনির্মাণে ইউনিয়নের সুদূরপ্রসারি পরিকল্পনা
৬. মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় অসাম্প্রদায়িক সমাজ গঠন
৭. ইউনিয়নের সেবা প্রদানে মুক্তিযোদ্ধা,প্রবীণ ও শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন।
৮. একতা,স্বাধীনতা,স্বকীয়তার ভিত্তিতে আদর্শ ইউনিয়ন গঠন।
গণতন্ত্র ও উন্নয়নের যাত্রা শুরু হোক গ্রাম থেকে শহর,শহর থেকে দেশব্যাপী। আমাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় প্রতিটা ইউনিয়ন হোক সোনার বাংলার এক একটি সোনার ইউনিয়ন।
দেশ ও দেশের মানুষ বসবাস করুক শান্তি,সম্প্রীতি ও শৃঙ্খলার সাথে। জয় হোক তারুণ্যের, জয় হোক গণতন্ত্রের।
লেখক
জেনারুল ইসলাম
কবি ও গল্পকার