‘পুলিশহীন’ নগরে অগ্নিদগ্ধ স্থাপনা থেকে উড়ছে ধোঁয়া
মঙ্গলবার থেকে স্বাভাবিক রূপে ফিরতে শুরু করেছে সিলেট নগরী। সড়কে বেড়েছে যান চলাচল। তবে নেই কোন ট্রাফিক পুলিশ। এমনকি থানা-পুলিশ ফাঁড়িতেও নেই পুলিশ। এসব স্থাপনা ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়েছে।
মঙ্গলবার ভোর ৬টা থেকে কারফিউ তোলে নেয়া হয়। খুলেছে সরকারি-বেসরকারি অফিস এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও। সড়কে যান চলাচল বাড়লেও কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে কয়েকদিনের সহিংসতা এবং শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর সোমবারের হামলা-লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ফলেমিানুষের মনে চাপা আতঙ্ক বিরাজ করছে। কিছু দোকানপাট খুললেও সামনের কলাপসিবল গেট বন্ধ রাখা হয়েছে।
মঙ্গলবার নগরেরর প্রাণকেন্দ্র জিন্দাবাজার, চৌহাট্টা, বন্দরবাজার, তালতলা ঘুরে দেখা গেছে, এসব এলাকায় অধিকাংশ মার্কেট ও বিপনি বিতান বন্ধ রয়েছে। কিছু কিছু বিপনি বিতানের বেশির ভাগ ব্যবসায়ী তাদের প্রতিষ্ঠান খুলেনি।
সড়কগুলোতে সিএনজি চালিত অটোরিকশা সহ ছোট বড় প্রায় সব ধরণের গাড়ি চলাচল করছে। সড়কে আছে প্রাইভেট যানবাহনও। তবে মানুষের আনাগোনা অন্যান্য দিনের তুলনায় কিছুটা কম।
এদিকে, নগর জুড়ে এখনো রয়ে গেছে ধ্বংসযজ্ঞের চিহ্ন। আগুনে পোড়ার গন্ধ ভাসছে বাতাসে।
দুপুরে সিলেট পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, এখনো আগুনের ধোয়া উড়ছে। পুরে ছাইভস্ম হয়ে গেছে পুরো কার্যালয়।
কার্যালয়ে কোনো পুলিশ কর্মকর্তা-কর্মচারী দেখা যায়নি। সব ফাইল কাগজপত্র পুড়ে ছাই। আঙ্গিনায় থাকা কয়েকটি গাড়িও জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে। অফিসটির সামনে রাস্তায় ছিল শ শ উৎসুক জনতার ভীড়। সড়কে দাঁড়িয়েছিল দুটি সেনাবাহিনীর গাড়ি।
দুপুর ১২টার দিকে ফায়ার সার্ভিসের একটি ইউনিট এসে ধোঁয়ায় পানি দিতে শুরু করে। আগুনের ধোয়া উড়ছে সিলেটকেতোয়ালি থানা থেকেও। এখানেও কোন পুলিশ সদস্যকে দেখা যায়নি।
এর আগে সোমবার শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর সিলেটে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে ছাত্র- জনতা আনন্দ মিছিল নিয়ে রাস্তায় নেমে আসেন। বিকেলে সিলেটের বিভিন্ন সরকারি স্থাপনা, সরকারি ও প্রশাসনিক বিভিন্ন অফিস, মন্ত্রী, আওয়ামী লীগের নেতা- কর্মীদের বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা-ভাঙচুর হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, রাত পর্যন্ত আওয়ামী লীগ ও সরকার সমর্থকদের বাসা বাড়িতে হামলা হয়।
এছাড়া বিভিন্ন থানা, পুলিশ ফাঁড়ি, সরকারি অফিস, আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের বাসা-বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ হয়। জেলা প্রশাসকের কার্যালয়সহ সরকারি দপ্তরের সামনে স্থাপিত বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল ভাঙচুর করা হয়।
তবে এসব ঘটনায় এখন পর্যন্ত সিলেটে কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।
এদিকে, বিক্ষোভকারীদের হামলা-ভাঙচুর থেকে বিরত থাকা আহবান জানিয়ে সোমবার সন্ধ্যার পর থেকে সিলেটের বিভিন্ন মসজিদে মাইকিং করা হয়। এতে বলা হচ্ছে-হিন্দু-মুসলিম সবাই ভাই ভাই। কেউ যাতে কোনো ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে হামলা-ভাঙচুর না করেন।
একই অনুরোধ জানিয়ে জেলা ও মাহনগর বিএনপির পক্ষ থেকেও মাইকিং করেন সাবেক মেয়র ও বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্ঠা আরিফুল হক চৌধুরী সহ নেতৃবৃন্দ।
আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা-কর্মী বলেন, শেখ হাসিনার পদত্যাগের খবর প্রচারিত হওয়ার পরপরই মিছিল নিয়ে বিক্ষুব্ধ লোকজন হামলাও ভাঙচুর চালান। এছাড়া কতোয়ালী থানা, বন্দরবাজার, লামাবাজার ও সোবহানিঘাট পুলিশ ফাঁড়ি, জালালাবাদ থানাসহ বিভিন্ন সরকারি স্থাপনায় এ হামলা চালানো হয়। সূত্র: সিলেট টুডে