কেউ নেই পুলিশের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার নিরাপত্তায়
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের ডাকে গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতন হয়েছে। তবে শুরু থেকে সরকারের পক্ষে আন্দোলনকারীদের দমনে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছে পুলিশ।
কোটা সংস্কার আন্দোলন ও সহিংসতার ঘটনায় দেশজুড়ে পাঁচ শতাধিক মামলা ও ১৩ হাজার জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশের বিভিন্ন ইউনিট। গণমাধ্যমের তথ্যানুযায়ী সারাদেশে সহিংসতায় মৃত্যু তিন শতাধিক।
এই মৃত্যুর পেছনে পুলিশ ও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনকে দায়ী করছেন নিহতের পরিবারের সদস্যরা।
ফলে সব মিলিয়ে আন্দোলনকারী থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষের ক্ষোভের শিকার হয়েছে পুলিশের সদস্য ও বাহিনীটির বিভিন্ন স্থাপনা। রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে অন্তত সাড়ে ৪০০ থানায় হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নি সংযোগ করা হয়। লুটে নেওয়া হয় পুলিশের বিভিন্ন মালামাল, অস্ত্র ও গোলাবারুদ। হামলায় বহু পুলিশ সদস্য নিহত হয়।
এর আগে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও দেশ ছাড়ার খবর ছড়িয়ে পড়লে পিছু হটে মাঠের পুলিশের কর্মকর্তারা। ফলে বিপদে পড়ে যান অধিনস্তরা। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সহযোগিতা ও নির্দেশনা না পেয়ে থানা ও পুলিশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ফেলে পালিয়ে গেছেন দায়িত্বরতরা। ফলে অনেকটাই নিরব ও নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছে পুলিশের গুরুত্বপূর্ণ সব ভবন ও প্রতিষ্ঠান।
মঙ্গলবার (৬ আগস্ট) বিকেল সাড়ে ৫টা থেকে সোয়া ৬টা পর্যন্ত রাজধানীর মিন্টো রোড, রমনার ক্যাপ্টেন মনসুর স্বরণি সড়ক, গুলিস্তানের বঙ্গ বাজার এলাকা ঘুরে এসব চিত্রে দেখা মিলেছে।
রাজধানীর রমনা থানার মন্ত্রীপাড়া হিসেবে পরিচিত মিন্টো রোডের প্রবেশ মুখের বাম পাশের কয়েকটা বাংলোর পরেই আইজিপির বাংলো। বাংলাদেশ পুলিশের প্রধানের বাস ভবনের সামনে অন্য সময়ে একাধিক পুলিশ সদস্যরা নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করেন। সার্বক্ষণিক সিসিটিভি ক্যামেরায় চলে নজররদারি। কিন্তু আজ সেই চিরচেনা দৃশ্যের কিছুই নেই। বরং বাংলোর সামনে 'পুলিশ ভবন' লেখা সাইনবোর্ড নেই। নেই সিসিটিভি ক্যামেরা। দেখে বোঝাই যাচ্ছে, ভবনের বাইরের অংশে হামলা হয়েছে। গেটের ভেতরের বাম পাশের গার্ড রুমেও কেউ নেই। কয়েকটি খাতা পড়ে রয়েছে। ডেকেও কাউকে পাওয়া গেলো না।
পুলিশ ভবন থেকে আধা কিলো সামনে এসে বিপরীত চিত্রের দেখা মিললো। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) কার্যালয়ের গেটের ডান পাশের দেয়ালে লেখা হারুন ভাইয়ের ভাতের হোটেল বন্ধ।
কয়েকজন তরুণ গেটের নিরাপত্তায় রয়েছেন। ভেতরে বাহিরে দুজন করে চারজন। কথা বলে জানা গেলো তারা কেউই পুলিশের সদস্য নয়। বরং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। ডিবি কার্যালয়ের নিরাপত্তায় তারা স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক স্বেচ্ছাসেবক বলেন, ডিবি কার্যালয় দেশের সম্পদ। এখানে শতশত সরকারি গাড়ি রয়েছে। বিপুল পরিমাণ অস্ত্র ও গোলাবারুদ রয়েছে৷ পুলিশের কেউ না থাকলেও আমরা আছি।
গেটের নিরাপত্তায় দায়িত্বরতদের সঙ্গে কথা বলা অবস্থায় ছয়টি গাড়িতে করে কয়েকজন নানা বয়সী ব্যক্তি আসেন। জানা গেলো তারা পুলিশের বিভিন্ন পদের সাবেক ও চাকরিচ্যুত কর্মকর্তা। ইস্কাটন রোডে তাদের একটি সংবাদ সম্মেলন শেষ করে যাওয়ার পথে তারা এখানে থেমেছেন। স্বেচ্ছাসেবকদের দেখে তারা ধন্যবাদ দিয়ে গেট থেকে বিদায় নেন।
পুলিশ ভবনের মতোই নিষ্প্রাণ ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) সদরদপ্তর। গেটে তালা থাকলেও ভেতরে কেউ নেই। অনেক ডেকেও কাউকে পাওয়া গেলো না।
ডিএমপি সদর দপ্তর থেকে প্রায় তিন কিলোমিটার পর্যন্ত দূরে রাজধানীর গুলিস্তানের বঙ্গবাজারে বাংলাদেশ পুলিশের সদর দফতর।
সদর দফতরের সামনে গিয়ে দেখা যায়, নেভী ব্লু কালারের পোশাকে মাত্র চারজন নিরাপত্তা কর্মী নিরাপত্তায় দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। গেটে গিয়ে সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে জানা যায়, তারা সবাই পুলিশ কল্যাণ ট্রাস্টের নিরাপত্তা বিভাগের কর্মী। অন্যান্য সময়ে ডিএমপির গুলশান থানার হাতিরঝিলে পুলিশ প্লাজায় দায়িত্ব পালন করতেন। মঙ্গলবার সকালে তাদের এখানে দায়িত্ব পালন করতে বলা হয়েছে।
দায়িত্ব নিরাপত্তা কর্মীদের একজন মো. রাজু আহমেদ বলেন, আমরা পুলিশ কল্যাণ ট্রাস্টের নিরাপত্তা কর্মী। আজ সকাল থেকে পুলিশ সদর দফতরে দায়িত্ব পালন করতে পাঠানো হয়েছে। ভেতরে কেউ নেই। সারা দিনে কয়েকজন সাংবাদিক ছাড়া কেউ আসে নি। পরবর্তী নির্দেশনা না আসা পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করতে বলা হয়েছে। সূত্র: বার্তা ২৪