আল্লামা ফুলতলীর কুরআনের খেদমত একটি বিরল ইতিহাস

- আবিদ কাওসার ||
উলামায়ে কিরামগণ নবীগণের উত্তরসূরি’ -বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর এ শাশ্বত বাণীর সত্যায়নে যুগে যুগে এমন কিছু উলামায়ে কিরামের আবির্ভাব ঘটেছে যারা নিজেদের জীবন বাজী রেখে আল্লাহর মনোনীত ধর্মকে পৃথিবীর বুকে প্রচার করেছেন, উম্মতে মুহাম্মদীকে সত্য সঠিক সিরাতুল মুস্তাকীমে পরিচালিত করতে যুগোপযোগী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। তেমনি এক মহান ব্যক্তিত্ব হলেন আলেমকুলের শিরোমনি, যুগের মুজাদ্দিদ, রঈসুল কুররা ওয়াল মুফাসসিরীন, উস্তাদুল উলামা ওয়াল মুহাদ্দিসীন, সিলেট তথা বাংলাদেশের গৌরব শামসুল উলামা হযরত আল্লামা মুহাম্মদ আবদুল লতিফ চৌধুরী ফুলতলী ছাহেব কিবলাহ (রহ.)
বিশাল কর্মময় জীবনের অধিকারী আল্লামা ফুলতলী ছাহেব কিবলাহ (রহ.) ইসলাম ও মুসলমানের স্বার্থে সময়ে সময়ে গড়ে তুলেছেন জাগরণী আন্দোলন, ইসলাম বিরোধী কার্যকলাপ দেখলেই ফেটে পড়েছেন বিক্ষোভে, শাসক-শোষকের বিরুদ্ধে গড়ে তুলেছেন সময়োপযোগী সংগ্রাম। আল্লামা ফুলতলী ছাহেব কিবলাহ (রহ.) এর এ সংগ্রামী জীবনের চিত্র তুলে ধরতে গেলেও একটি বিশাল গ্রন্থ রচনা করা সম্ভব।
আজকের এ নিবন্ধে আমি তাঁর জীবনের পবিত্র কুরআনুল কারিমের খেদমত সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করতে চাই।শামসুল উলামা আল্লামা ফুলতলী ছাহেব কিবলাহ (রহ.)’র জীবনের সিংহভাগ সময় ব্যয় করেছেন কুরআন কারীমের খেদমতে। আমাদের মতো অনারবীদেরকে বিশুদ্ধ উচ্চারণে তারতীল-তাজবীদের সহিত কুরআন তিলাওয়াতের শিক্ষা দিয়েছেন। যখন যেখানে সুযোগ পেয়েছেন সহীহ শুদ্ধভাবে কুরআন কারীমের দারসে ব্যস্ত সময় পার করেছেন।
যখন দেশের বড় বড় আলেম উলামা সহ ফুলতলী ছাহেব কিবলাহ রহ. কারাগারে ছিলেন তখন কারাগারও পরিণত হয়েছিল তাঁর কুরআন শিক্ষা দেওয়ার মাজলিসে, যিকিরের খানকায়। জীবনের প্রথম ভাগে দীর্ঘ পথ পায়ে হেঁটে দূর দূরান্তে নির্দিষ্ট সময়ে কুরআন শিক্ষা দিতেন।
মহান আল্লাহর পবিত্র কালামের সহীহ পঠন রীতি শিখার গুরুত্ব এবং প্রয়োজনীয়তা বুঝতে পেরে তৎকালিন প্রসিদ্ধ আলেমগণ হযরত ফুলতলী ছাহেব কিবলাহ রহ. এর দারসে বসতেন। ধীরে ধীরে ছাত্র সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় একটি ট্রাস্টের মাধ্যমে ছাহেব কিবলাহ রহ. এর কাছ থেকে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কারী ছাহেবগণের মাধ্যমে দূর দূরান্তে কিরাআত প্রশিক্ষণ শুরু হয়। আজ দেশ বিদেশে হাজার হাজর শাখার মাধ্যমে কিরাত প্রশিক্ষণ অব্যাহত রয়েছে।
আলহামদুলিল্লাহ, আল্লামা ফুলতলী ছাহেব কিবলাহ রহ. এর বদৌলতে আজ ছোট ছোট শিশুরাও সহীহ-শুদ্ধভাবে কুরআন কারীম তিলাওয়াত করতে পারে। রামাদান মাস কুরআন নাযিলের মাস। এ মাসের সাথে কুরআন কারীমের নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ মাসে অন্যান্য মাসের তুলনায় বেশি কুরআন তিলাওয়াত করতেন।
সালফে সালেহীনের অনেকে এ মাসে শুধু কুরআন কারীম নিয়ে ব্যস্ত থাকতেন। ইমাম মালিক র. রামাদান মাসে হাদীস ফিকাহর সব দারস-তাদরীস বন্ধ করে কুরআন কারীম নিয়ে ব্যস্ত থাকতেন। ইমাম সুফয়ান সাওরী র. রামাদান মাসে সকল নফল ইবাদত বাদ দিয়ে শুধু কুরআন করীম নিয়ে পড়ে থাকতেন। ইমাম আবূ হানীফা র. রামাদান মাসে প্রতিদিন ২ খতম কুরআন কারীম তিলাওয়াত করতেন।
হযরত আল্লামা ফুলতলী ছাহেব কিবলাহ রহ. কিরাআত শিক্ষা দেওয়ার জন্য জন্য রামাদান মাসকে নির্বাচন করেছেন। কয়েক যুগ থেকে রামাদান মাসে দারুল কিরাত মজিদিয়া ফুলতলী ট্রাস্টের অধীনে দেশ বিদেশে বিশেষত আমাদের সিলেটের প্রতিটি গ্রামে সকাল থেকে কুরআনের আওয়াজ শুনা যায়। দারুল কিরাতের শাখা থেকে ভেসে আসা কুরআন কারীমের সুললিত আওয়াজ আমাদের জানিয়ে দেয়, এটি রামাদান মাস, এটি কুরআনের মাস। দারুল কিরাতের মাধমেই আমরা কুরআন নাযিলের এ মাসে কুরআন কারীম নিয়ে ব্যস্ত থাকার সুযোগ পাই। সারা দিন কুরআন শিক্ষা করা, শিক্ষা দেওয়ার মধ্যেই পার হয়ে যায়।
রামাদান মাস আর দারুল কিরাত যেন একটি আরেকটির সাথে ওতোপ্রোতোভাবে জড়িয়ে আছে শুধু মাত্র (২০২০-২০২১ সাল) করোনার কারণে দারুল কিরাত বন্ধ ছিল। (আমার জানা মতো) দারুল কিরাতের ইতিহাসে হয়ত এই প্রথম লাগাতার দুই বছর দারুল কিরাত হয় নি। যারা দারুল কিরাতের সাথে সম্পর্কিত আছেন সকলের কাছেই এ রামাদান মাস অন্যরকম এক রামাদান ছিল। রামাদানের আবেগ, সজিবতা সব যেন হারিয়ে গিয়েছিল। কায়মনোবাক্যে আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ করি, দারুল ক্বিরাতের এই মহান খিদমতকে আল্লাহ যেন কিয়ামত পর্যন্ত জারী রাখেন।
লেখক
সভাপতি, উদ্দীপ্ত সিলেট