আমি মাহাত্ম্যের কাছে মাথা নত করি: সম্মাননা পেয়ে মুহিত

আমি মাহাত্ম্যের কাছে মাথা নত করি: সম্মাননা পেয়ে মুহিত

সাম্প্রদায়িক অনুভূতি নিয়ন্ত্রণ জীবনের সবচেয়ে বড় উদ্দেশ্য হওয়া উচিত বলে মনে করেন সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। এই উদ্দেশ্য নিয়েই তিনি ৮৮ বছর পূর্ণ করেছেন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এটাই আমার মহা তৃপ্তির কারণ। এটাই মহা প্রাপ্তির কারণ।’

বুধবার রাতে সিলেট সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে তাকে ‘গুণীশ্রেষ্ঠ সম্মাননা’ দেয়া হয়। এই সম্মাননার জবাবেই এমনটি বলেন মুহিত।

তিনি বলেন, ‘আমি আমার জীবন নিয়ে গর্বিত। নিজেকে নিয়ে গর্ব করার মতো মহৎ কিছু নেই। অনেকে হয়তে একে আত্মগরিমা বলবেন। কিন্তু এটা অন্যায় নয়। বরং এর জন্য নিজেকে গড়ে তুলতে হয়।’

নিজের শৈশবের স্মৃতিচারণ করে মুহিত বলেন, ‘আমার শৈশব কেটেছে গ্রামে। গ্রামের জীবন খুব উপভোগ্য ছিল। সেখানে যে স্বাধীনতা পাওয়া যায় তা আর কখনো পাওয়া যায় না। পরে সিলেট শহরে এসে সুরমা নদীর পাড়ে স্কুলে ভর্তি হই। সেই সময়টাও ছিল আনন্দের।’

মুহিতের ‘আজীবন সুকীর্তির স্বীকৃতি স্বরূপ’ তাকে এ সম্মাননা দেয় সিটি করপোরেশন। রাত ৮ টায় সুরমা নদীর তীরের চাঁদনীঘাটে সিটি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর সভাপতিত্বে শুরু হয় অনুষ্ঠান।

সম্মাননার জবাবে মুহিত বলেন, ‘আমি একান্তভাবে সিলেটের মানুষ। আমার জন্মভূমি আমার জন্য কৃতজ্ঞতা স্বীকার করছে, এটার চেয়ে বড় প্রাপ্তি তো আর কিছু হতে পারে না। প্রাপ্তির নিয়মকানুন ঠিক করা এবং সেগুলো প্রতিপালনের দায়িত্ব নেয়া, এটা জীবনের একটি বড় শিক্ষা। এটা আমাদের প্রত্যেকের জীবনে হয়। সকলকে এটি প্রতিপালনের দায়িত্বের ব্যাপারে সচেতন হতে হবে।’

‘কাউকে সম্মান জানানোর জন্য মনের প্রয়োজন, মাহাত্ম্যের প্রয়োজন। এই যে আমাকে সম্মান জানাচ্ছেন, আমি সেই মাহাত্ম্যের কাছে মাথা নত করি।’

সংসদে সর্বোচ্চ ১২ বার বাজেট প্রদানকারী সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ছিলেন সিলেট-১ আসনের সাংসদ। ৮৮ বছর বয়সী মুহিত বর্তমানে অসুস্থতায় ভুগছেন। সম্প্রতি হাসপাতালেও ভর্তি হতে হয় তাকে। হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়ে গত সোমবার সিলেট আসেন তিনি।

সম্মাননা অনুষ্ঠানের সিলেটের নাগরিক সমাজের পক্ষ থেকে স্বাগত নর্থইষ্ট ইউনিভার্সিটির উপাচার্য অধ্যাপক ড. ইলিয়াস উদ্দিন বিশ্বাস।

তিনি বলেন, ‘ভাষা আন্দোলন, স্বাধীনতা সংগ্রাম থেকে শুরু করে বাঙালির প্রতিটি অধিকার আদায়ের সংগ্রামে মুহিত সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেছেন। স্বাধীনতার পর দেশ গঠনের কাজেও তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। কখনও প্রশাসনের কর্মকর্তা আবার কখনও সরকারের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী হিসেবে বাংলাদেশের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করতে অনন্য অবদান রেখেছেন।

‘রাষ্ট্রচিন্তক, কূটনীতিক ও প্রাজ্ঞ ব্যক্তি হিসেবে আবুল মাল আবদুল মুহিতের জুড়ি মেলা ভার। তার পাঠ, পঠন, জ্ঞান ও প্রাজ্ঞতা বাংলাদেশের অনন্য সম্পদ। তিনি সত্যিকার অর্থেই এক আলোকিত মানুষ।’

অনুষ্ঠানে মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বিধায়ক রায় চৌধুরী।

তিনি বলেন, ‘আবুল মাল আবদুল মুহিতের জীবন সিলেটের দীর্ঘতম নদী সুরমার মতো বহমান। বহুমাত্রিক প্রতিভাধর গুণী এই মানুষটির সুস্থ-সুন্দর জীবন কামনা করি।’

অনুষ্ঠানে সিলেটের বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের প্রতিনিধিগণ, সংবাদকর্মী, বিভিন্ন সরকারি দপ্তর সংস্থার প্রতিনিধিগণ, সিলেট সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা উপস্থিত ছিলেন।

অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সংস্কৃতিকর্মী সাইমুম আনজুম ইভান।