এ এক মধুর প্রতিশোধ!

এ এক মধুর প্রতিশোধ!

দুর্নীতির মিথ্যা অভিযোগ এনে পদ্মা সেতু নির্মাণে অর্থায়ন থেকে সরে গিয়েছিল বিশ্বব্যাংক। যা নিয়ে দেশি-বিদেশি গণমাধ্যমও তখন নানা নেতিবাচক খবর প্রকাশ করেছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত নানা-চড়াই উৎরাই পেরিয়ে নিজস্ব অর্থায়নেই বহুল প্রতীক্ষিত পদ্মা সেতু নির্মাণ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার।

সোমবার (১ মে) ওয়াশিংটনে বিশ্বব্যাংক সদর দফতরে ঋণদান প্রতিষ্ঠানটির প্রেসিডেন্ট ডেভিড ম্যালপাসের হাতে উপহার হিসেবে সেই পদ্মা সেতুর একটি বাঁধাই করা ছবি তুলে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিশ্বব্যাংক সদর দফতরে দাঁড়িয়ে সংস্থাটির প্রেসিডেন্টের হাতে পদ্মা সেতুর ছবি তুলে দিয়ে যেন মধুর প্রতিশোধ নিলেন তিনি। 

বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্টের হাতে ছবি তুলে দেয়া ছাড়াও এই প্রথম বিশ্বব্যাংক সদর দফতরে দাঁড়িয়ে শেখ হাসিনা বলেছেন, পদ্মা সেতুতে দুর্নীতির অভিযোগ ছিল সম্পূর্ণ মিথ্যা। মূলত বাইরের চাপে বিশ্বব্যাংক অর্থায়ন থেকে সরে গিয়েছিল।

২০০১ সালের ৪ জুলাই স্বপ্নের পদ্মা সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেতুতে অর্থায়নের কথা ছিল বিশ্বব্যাংকসহ বাংলাদেশের অন্যান্য উন্নয়ন সহযোগী প্রতিষ্ঠানের। কিন্তু ২০১১ সালে সেতু নির্মাণের সব আয়োজন যখন শেষ তখনই আসে অপ্রত্যাশিত এক আঘাত।

ঠিকাদার নিয়োগ প্রক্রিয়ায় মিথ্যা দুর্নীতির অভিযোগ তোলে প্রথমে বিশ্বব্যাংক এবং পরে অন্যান্য উন্নয়নসহযোগী প্রকল্পটিতে অর্থায়ন স্থগিত করে। বিশ্বব্যাংকের অর্থায়ন ছাড়া বাংলাদেশ পদ্মা সেতু নির্মাণে সক্ষম নয় বলেও সে সময় অনেকে মন্তব্য করে।

তবে কোনো কিছুই আর তখন স্বপ্নের সেতু নির্মাণে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি। দেশের জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতি সম্মান জানিয়ে বাংলাদেশ সরকার উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার সহায়তা ছাড়াই নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের সাহসী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে এবং শেষ পর্যন্ত সেতু নির্মাণ করে। গত বছরের (২০২২) জুনে পদ্মা সেতুর উদ্বোধন ও সেই সঙ্গে জনগণের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হয়।

সোমবার (১মে) ছিল বাংলাদেশ ও বিশ্বব্যাংক অংশীদারত্বের ৫০ বছর। দিবসটি উদ্‌যাপন উপলক্ষে এদিন সকাল থেকে বিশ্বব্যাংক সদর দফতরে বেশ কয়েকটি কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেন যুক্তরাষ্ট্র সফররত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

প্রথম কর্মসূচি হিসেবে এদিন সকালে জাতিসংঘ সদর দফতরে একটি ছবি প্রদর্শনী উদ্বোধন করা হয়। এই ছবির প্রদর্শনীটি যৌথভাবে উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিশ্ব ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট ডেভিড ম্যালপাস। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পারস্পরিক বিশ্বাসের মনোভাব নিযে উজ্জ্বলতর ভবিষ্যত বিনির্মাণে বিশ্বব্যাংককে এক সঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানান।

এরপর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্বব্যাংকের নির্বাহী পরিচালকদের সঙ্গে একটি অনানুষ্ঠানিক মতবিনিময়ে অংশগ্রহণ নেন। এ মতবিনিময়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বাইরের চাপেই সেই সময় বিশ্বব্যাংক দুর্নীতির অভিযোগ এনে পদ্মা সেতুর মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পে অর্থায়ন থেকে সরে এসেছিল।

এরপর বাংলাদেশ-বিশ্বব্যাংক অংশীদারত্বের ৫০ বছর উদ্‌যাপনে আয়োজিত মূল অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ‘৫০ বছরে বাংলাদেশ-বিশ্বব্যাংক অংশীদারত্বের প্রতিফলন’ শীর্ষক এ প্লেনারি সেশনে তিনি বলেন, ‘পদ্মা সেতু যখন আমরা বানাতে যাই তখন আমাদের ওপর দুর্নীতির একটা মিথ্যা অভিযোগ আনা হয়েছিল। এটাকে আমি চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছিলাম। আমি বাবা-মা, সব হারিয়ে দুর্নীতি করতে আসিনি, নিজের ভাগ্য গড়তে আসিনি। আমি এসেছি বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য গড়তে।’