সিলেট মহানগর

এ যেন ধুলায় ধূসর এক শহর!

এ যেন ধুলায় ধূসর এক শহর!

এক সময় পরিচ্ছন্ন ও পরিবেশবান্ধব নগর হিসেবে খ্যাত ছিলো পূণ্যভ‚মি সিলেট। নগরীর শীতল বাতাস মন জুড়াতো। অন্যান্য জেলার অধিকাংশ মানুষ সিলেটে বসবাস গড়ে তোলেন মনোরম পরিবেশের প্রেমে পড়ে। সরকারি ও বেসরকারি উচ্চপদস্থ অনেক চাকরিজীবী বসবাসের জন্য বেছে নেন সিলেটকে। মুক্ত বাতাস, সুন্দর পরিবেশ, পরিচ্ছন্ন ও কোলাহলমুক্ত এ নগরকে ভালোবেসে স্থায়ী আবাসস্থল গড়ে তোলেছেন বাইরের অনেক লোকজন। দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় এ বিভাগীয় শহর বছরভর পর্যটকদের পদচারণায় মুখর থাকে। আর অতি গুরুত্বপূর্ণ এই শহরে শুল্ক মৌসুমে অন্যতম প্রধান সমস্যা সড়কে ধুলাবালু।

নগরের অভ্যন্তরে নালা, সড়ক সংস্কার, বৈদ্যুতিক খুঁটি অপসারণ ও বিদ্যুতের ঝুলন্ত তার মাটির নীচে স্থানান্তরের কাজ চলমান থাকায় ধুলাবালুতে ধূসর হয়ে পড়েছে সবুজ প্রকৃতির সিলেট নগর। এতে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে শহুরে মানুষ এবং সিলেটে ঘুরতে আসা পর্যটকরা।

নগরের মদিনা মার্কেট, লামাবাজার, নাইওরপুল, আম্বরখানা, শাহী ঈদগাহ, বালুচর, পাঠানটুলা, টিলাগড়, সোবহানীঘাট, শাহজালাল উপশহর, কদমতলী এলাকায় সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, সড়কে সমানে উড়ছে ধুলাবালু। রাস্তাঘাট থেকে অলিগলি সবখানইে ধুলার রাজত্ব। ধুলার আস্তরণ পড়েছে আশপাশের বাসাবাড়ি ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানেও। গাছগাছালির রঙও মরে গেছে অনেক জায়গায়। এ যেন ধুলায় ধুসর এক শহর।

কয়েস আহমদ নামে নগরের পায়রা এলাকার এক বাসিন্দা জানান, ‘বর্ষা মৌসুমে বড় বড় গর্ত থেকে গাড়ির চাকার চাপে পানি ছিটকে এসে পড়ে শরীরে। এখন পানি নেই তবে ধুলার কারণে রাস্তায় চলাচল মুশকিল হয়ে পড়েছে। অবস্থা এমন পর্যায়ে যে, যখন বাসা থেকে বের হই, তখনই মাথায় আসে কোন পথে গন্তব্যে গেলে অন্তত ধুলাবালি থেকে মুক্তি মিলবে।’ 

নগরের প্রাণকেন্দ্র বন্দরবাজারের ব্যবসায়ী ইমরান আহমদ বলেন, ‘প্রতিদিনই এসব সড়কে আসা-যাওয়া করতে হয়। খুব অসুবিধা হয়। ধুলাবালি নিয়ে নগর কর্তৃপক্ষের কোনো মাথাব্যথা নেই। অফিসাররা গাড়ির গ্লাস লাগিয়ে নগরে চলাফেরা করেন। তাদের সমস্যা হয় না। ধুলাবালির জন্য সামান্য পানিও ছিটাতে পারেন না তারা। শহরের ব্যস্ততম সড়কের সংস্কার দ্রæত এবং দিনরাত করা দরকার থাকলেও কাজগুলো ধীরে ধীরে হচ্ছে, তাই ধুলাবালির এ কষ্ট আমাদের পোহাতে হচ্ছে।’

সিলেটের ডেপুটি সিভিল সার্জন জন্মেজয় দত্ত বলেন, ‘ধুলায় শ্বাসপ্রশ্বাসের সাথে প্রবেশ করে ফুসফুসে ও শ্বাসতন্ত্রের অনেক রোগে আক্রান্ত হবার শঙ্কা আছে। যাদের অ্যালার্জি ও অ্যাজমা আছে, তাদেরও সমস্যা হবে ধুলায়। ধুলাবালু থেকে রক্ষার জন্য ঘর থেকে বাইরে বের হলে মাস্ক ব্যবহার করলে সুফল পাওয়া যাবে। এমনিতেই তো আমারা করোনার কারণে মাস্ক ব্যবহারে আমরা অভ্যস্ত হচ্ছি।’

এ ব্যপারে সিলেট সিটি করপোরেশনের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রুহুল আলম বলেন, ‘ শহরের প্রায় সাড়ে ২১ কোটি টাকা ব্যয়ে দুই প্রকল্পের কাজ চলমান আছে। নতুন বছরের শুরতেই এ কাজ সম্পন্ন হবে। এতে নগরের মানুষরা যে ভোগান্তির শিকার হচ্ছে সেটি কমবে। রাস্তায় ধুলাবালু যাতে না উড়ে সে জন্য প্রতিদিনই পানি ছিটানো হয়। বিভিন্ন জায়গায় এক সাথে কাজ হওয়াতে একদিনে হয়তো সব জায়গায় পানি ছিটানো সম্ভব হয় না।’