এক বছর ধরে বন্ধ সেতুর কাজ, ৭ মাস আগেই শেষ মেয়াদ

এক বছর ধরে বন্ধ সেতুর কাজ, ৭ মাস আগেই শেষ মেয়াদ

মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলার বৃন্দারঘাট সেতুর কাজের মেয়াদ সাত মাস আগে শেষ হলেও সেতুর ৭০ ভাগ কাজ এখনো বাকী রয়েছে। সেতুর কাজ ফেলে রাখায় দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন স্থানীয়রা।

জানা যায়, উপজেলা, ইউনিয়ন ও গ্রাম সড়কে অনুর্ধ্ব ১০০ মিটার সেতু নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় জুড়ী নদীর উপর (কাপনা পাহাড়-কাশিনগর) ৬০ মিটার দীর্ঘ আরসিসি গার্ডার বৃন্দারঘাট সেতু নির্মাণ কাজ ২০২০ সালের নভেম্বর মাসে শুরু হয়।

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি), জুড়ী বাস্তবায়নে ৪ কোটি ৩০ লাখ ৮২ হাজার টাকা চুক্তিমূল্যে ভোলার মেসার্স মনির ট্রেডার্স নামক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজ পায়। তবে প্রিন্স এন্টারপ্রাইজ নামক একটি প্রতিষ্ঠান সাজ-কন্ট্রাক্ট নিয়ে কাজটি করছে। ২০২১ সালের অক্টোবরে কাজ শেষ করার কথা। কিন্তু এই সময়ে বৃন্দারঘাট সেতুর দুই দিকের গার্ডার (অ্যাপার্টমেন্ট ওয়াল) ঢালাই দিয়েই ঠিকাদার কাজ ফেলে রেখেছেন। ৩০ ভাগ কাজ করে বাকী ৭০ ভাগ কাজ বাকি রেখে প্রায় এক বছর থেকে কাজ বন্ধ রয়েছে।

দ্রুত কাজ শেষ করতে স্থানীয় সংসদ সদস্য, পরিবেশ, বন ও জলবায়ূ পরিবর্তনমন্ত্রী ও সংশ্লিষ্ট দপ্তর থেকে ঠিকাদারকে একাধিকবার তাগিদ দেয়ার পরেও ঠিকাদার কাজ শুরু করেন নি। যে কারণে স্থানীয় লোকজন চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন।

দীর্ঘ দিন থেকে এ এলাকার বাসিন্দারা চলাচলের একমাত্র ভরসা খেয়া নৌকা। প্রতিদিন কয়েকশ শিক্ষার্থী বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে খেয়া নৌকা যাতায়াত করেন।

সেতুর কাজ শুরু হবার পর খেয়া নৌকা সংখ্যাও কমে গেছে। যার ফলে বৃষ্টি ও বর্ষার শুরু হয়ে গেলে লোকজন জীবন ঝুঁকির মধ্যে পড়বেন। এদিকে কাজ শুরুর সময় কাজের সুবিধার্থে সেতুর কাপনাপাহাড় প্রান্তের ৫টি দোকান উচ্ছেদ করা হয়। কিন্তু সেতুর কাজ শেষ না হওয়ায় ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।

বর্ষার আগেই সেতুর কাজ শেষ করার দাবি জানিয়ে স্থানীয় বাসিন্দা ও ব্যবসায়ী কোমল বোনার্জী, মানিক পট্টনায়ক দমন, কিশোর বোনার্জী, শাহ এমরান মিরন, আব্দুস সহিদ, প্রমেশ বাউরী, কিরণ বোনার্জী, দিলিপ বোনার্জী প্রমুখ বলেন, নদীর একদিকে কাপনা পাহাড় চা বাগান ও কাশিনগর বাজার এলাকা। অপরদিকে কাশিনগর গ্রাম, বটনিঘাট, পাতিলাসাঙ্গন, চুটিয়াবাড়ি এলাকা। এ এলাকার লোকজন শত বছর ধরে জুড়ী নদীর বৃন্দারঘাট দিয়ে নৌকায় চলাচল করে আসছেন। প্রায় তিনশত শিক্ষার্থী নদী পাড়ি দিয়ে বিভিন্ন স্কুল-কলেজে যাতায়াত করেন। প্রবল স্রোরাতের ফলে প্রায়ই নৌকা থেকে পড়ে ও নৌকা ডুবে শিক্ষার্থীদের বইপত্র নষ্ট হয়। তবুও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে খেয়ায় চলাচল করতে হয়।

তারা বলেন, শোনেছি দেশের বিভিন্ন স্থানে উক্ত ঠিকাদারের প্রায় বিশটি কাজ চলমান। আমাদের এখানে কথা বলার লোক না থাকায় কাজ ফেলে রেখে তিনি অন্যদিকে কাজ করছেন। তাছাড়া ঠিকাদারের আর্থিক লেনদেন ভাল না হওয়ায় কেহ তাকে মাল বাকি দিতে চায় না। এমনকি শ্রমিক তার কাজ করতে রাজি হয় না।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রিন্স এন্টারপ্রাইজের ব্যবস্থাপক মিজানুর রহমান বাবলু বলেন, বর্তমানে সারাদেশে কাজের মওসুম চলছে, তাই রিগ মিশিন পাওয়া যাচ্ছে না। আশা করি সপ্তাহ খানেকের মধ্যেই মিশিন পাওয়া যাবে। পেলেই আমরা কাজ শুরু করব।

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি), জুড়ী উপজেলা প্রকৌশলী ননী গোপাল দাস বলেন, সেতুর কাজ শেষ করার জন্য সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে একাধিকবার চিঠি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু ঠিকাদার বারবার তালবাহানা করে যাচ্ছেন। নানা অজুহাতে কাজ শুরু করছেন না। চুক্তি বাতিল ও নতুন করে টেন্ডার প্রক্রিয়া প্রস্তুত করা আছে। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে কাজ শুরু না করলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।