কুমিল্লার তৃতীয় শিরোপা

কুমিল্লার তৃতীয় শিরোপা

শ্বাসরুদ্ধকর ফাইনালে সাকিবের ফরচুন বরিশালকে ১ রানে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানস। বিপিএলে এ নিয়ে তৃতীয় শিরোপা জিতল কুমিল্লা। এর আগে ২০১৫ সালে প্রথম এবং ২০১৯ সালে দ্বিতীয় শিরোপা জিতেছিল ফ্রাঞ্চাইজিটি। শুরুতে ব্যাট করে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৯ উইকেটে ১৫১ রান তোলে কুমিল্লা। জবাবে ৮ উইকেট হারিয়ে শেষ পর্যন্ত ১৫০ রানে থামে বরিশাল।১৫১ রানের পুঁজি নিয়ে শুরুতেই মোস্তাফিজকে আক্রমণে আনে কুমিল্লা।

পরের ওভারে শহীদুলের দ্বিতীয় বলে মুনিমের উইকেট হারায় বরিশাল। ৭ বল খেলে খালি হাতেই সাজঘরে ফেরেন এই ওপেনার। শুরুর উইকেট হারানোর ধাক্কা সামাল দেন সৈকত আলী। শহিদুলের টানা তিন বলে তিন চার মেরে শুরু করেন নিজের ইনিংস। মোস্তাফিজের ওভারে তিন চারে নেন ১৪ রান। মূলত তার ব্যাটেই পাওয়ার প্লে থেকে বরিশাল পায় ৫১ রান। পাওয়ার প্লের পরের ওভারে টানা দুই চারে ২৬ বলে ফিফটি করেন সৈকত।

সৈকত তাণ্ডব চালালেও ঘুমিয়ে ছিলেন গেইল। শেষ পর্যন্ত তাকে রেখেই দলীয় ৭৯ রানে তানভীরের বাঁহাতি স্পিনে সাজঘরে ফেরেন সৈকত। ফেরার আগে করেন ৩৪ বলে ৫৮ রান। ১১তম ওভারে এসে মঈন আলীকে ছক্কা মেরে নিজের প্রথম বাউন্ডারি পান গেইল। তার দ্বিতীয় ছক্কা আসে তানভীরের বলে।

দলীয় ১০৭ রানে এলবির ফাঁদে ফেলে গেইলকে থামায় নারিন। ফেরার আগে ৩১ বলে ৩৩ রান করেন গেইল।ইউনিভার্সের বিদায়ে ক্রিজে আসেন সাকিব। কিন্তু বরিশালের অধিনায়ককে বেশিক্ষণ ক্রিজে থাকতে দেননি তানভীর। বাজে এক শটে মোস্তাফিজের তালুবন্দি হয়ে ৭ বলে ৭ রান করে ফিরেন সাকিব।

শেষ ১৯ বলে প্রয়োজন ছিল ১৮ রান। নারিন ১৮তম ওভারের প্রথম বলেই ফেরান ব্রাভোকে। এই ওভারে মাত্র ২ রান দিয়ে ১ উইকেট নেন। চাপে পড়ে যায় বরিশাল। পরের ওভারে মোস্তাফিজ এলবিডব্লিউ করে ফেরান শান্তকে। এই ওভারে মোস্তাফিজ দেন ৬ রান। শেষ ওভারে প্রয়োজন ছিল ১০ রান।

শহিদুলের করা শেষ ওভারে বরিশাল নেয় ৮ রান। ১ রানে জিতে তৃতীয়বারের মতো চ্যাম্পিয়ন হয় কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স।এর আগে শুরুতে টস জিতে কুমিল্লার হয়ে ওপেন করতে নামেন লিটন দাস ও সুনীল নারিন। আগের ম্যাচে বিপিএলে সবচেয়ে দ্রুতগতির অর্ধশতক তুলে নেন নারাইন (১৩ বলে ৫০)। ফাইনালের মহারণেও আগুনে ব্যাটিং শুরু করেন নারিন।

প্রথম ওভার শেষে কুমিল্লা বিনা উইকেটে ১২। ৫ বলে ১৭ রানে অপরাজিত নারিন। ২ ওভার শেষে কুমিল্লার ৩৬ রানের ৩৩ রানই নারিনের। কুমিল্লার ওপেনিং ঝড় থামাতে তৃতীয় ওভারে বল করতে আসেন বরিশাল অধিনায়ক সাকিব। মাত্র ৪ রান দিয়ে লিটনকে বোল্ড করেন সাকিব।

এরপর সাকিবের বলে টানা দুই চার মেরে ওই ওভারের শেষ বলে ৩ রান নিয়ে ২১ বলে অর্ধশতক তুলে নেন নারিন। টি-টোয়েন্টিতে এটি তার ১১তম ফিফটি। আগের ম্যাচের মত এই ম্যাচেও ঝড় উঠেছে নারিনের ব্যাটে। তবে নারিনকে বেশিক্ষণ তাণ্ডব চালাতে দেয়নি বরিশাল। ষষ্ট ওভারের দ্বিতীয় বলে রানার বলে উড়িয়ে মারতে গিয়ে শান্তর তালুবন্দি হয়ে ফেরেন নারিন।

সাজঘরে ফেরার আগে ২৩ বলে ৫ বাউন্ডারি ও ৫ ছক্কায় ৫৭ রানে থামেন ক্যারিবিয়ান এই ব্যাটার।নারিনের বিদায়ের পর হঠাৎ যেন তালগোল পাকিয়ে ফেলে কুমিল্লা। দলীয় ৭৩ রানে ব্রাভোর দুর্দান্ত থ্রো'তে রান আউটে কাটা পড়েন মাহুমুদুল হাসান জয়। ৭ বলে ৮ রান করে ফিরেন মাহমুদুল।

এরপর স্কোরকার্ডে ১০ রান যোগ হতেই ফেরেন কুমিল্লার প্রোটিয়া তারকা ফাফ ডু প্লেসি। নবম ওভারের প্রথম বলে মুজিবকে খেলতে গিয়ে তার ক্যাচ দিয়ে ফিরেন ফাফ ডু প্লেসি। ৭ বলে করেন মাত্র ৪ রান।শুরুতে ঝড় তুললেও একটা সময় গুটিয়ে যায় কুমিল্লা শিবির। নারিন ফেরার পর থেকেই জুটি খুঁজে বেড়াচ্ছে ভিক্টোরিয়ান্সরা।

দলীয় ৯৪ রানে ব্রাভোর বলে উইকেট বিলিয়ে দেন কুমিল্লার অধিনায়ক ইমরুল কায়েস। তার বিদায়ে বিপদে কুমিল্লাও। ১২ বলে ১২রান করে আউট হন কুমিল্লা দলপতি। একের পর এক উইকেট হারিয়ে ধুঁকতে থাকা কুমিল্লার বিপদ আরো বাড়লো আরিফুলের বিদায়ে। ১১তম ওভারে আরিফুলকে স্পিনে বোকা বানিয়ে বোল্ড করেন মুজিব উর রহমান।

৬ উইকেট হারিয়ে কুমিল্লা যখন খাদের কিনারায় তখন ক্রিজে কুমিল্লার স্বীকৃত ব্যাটসম্যান বলতে আছে মঈন আলী। পেসার আবু হায়দারকে নিয়ে শেষ পর্যন্ত কুমিল্লাকে সম্মানজনক স্কোর পাইয়ে দেন ইংলিশ এই অলরাউন্ডার।

শেষ ওভারের প্রথম বলে দুর্ভাগ্যক্রমে রান আউটে কাটা পড়েন মঈন। সাজঘরে ফেরার আগে ৩২ বলে ৩৮ রান তোলেন। শেষ ওভারে দুর্দান্ত বল করেন শফিকুল ইসলাম। মঈনকে সঙ্গ দেওয়া রনিকে ফেরান ১৯ রানে, পরের বলে শহিদুলকে রানের খাতাই খুলতে দেননি তিনি। শেষ পর্যন্ত ৯ উইকেট হারিয়ে ১৫১ রানে থামে কুমিল্লা।

২৭ রানে ২ উইকেট নেন বরিশালের স্পিনার মুজিব উর রেহমান। ৩১ রানে ২ উইকেট শফিকুল ইসলামের। ১টি করে উইকেট সাকিব ও ব্রাভোর।কুমিল্লার দলে কোনো পরিবর্তন নেই। একটি পরিবর্তন এনেছে বরিশাল। জিয়াউর রহমানের জায়গায় দলে ঢুকেছেন সৈকত আলী।

কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স:ইমরুল কায়েস (অধিনায়ক), লিটন দাস, আরিফুল হক, মোস্তাফিজুর রহমান, আবু হায়দার, তানভীর ইসলাম, শহীদুল ইসলাম, মাহমুদুল হাসান, সুনীল নারাইন, মঈন আলী ও ফাফ ডু প্লেসি।

ফরচুন বরিশাল:সাকিব আল হাসান (অধিনায়ক) মুনিম শাহরিয়ার, ক্রিস গেইল, নাজমুল হোসেন, সৈকত আলী, তৌহিদ হৃদয়, ডোয়াইন ব্রাভো, নুরুল হাসান, মেহেদী হাসান রানা, মুজিব উর রহমান ও শফিকুল ইসলাম।