নিজ শহরে সিলেট স্ট্রাইকার্স

নিজ শহরে সিলেট স্ট্রাইকার্স

নিজ শহরে এক সময় নিন্দার ঝড় উঠত তাদেরকে নিয়ে। নামে সিলেট থাকলেও জায়গা পায়নি স্থানীয়দের মনে। সেখানকার কারো সংশ্লিষ্টতাও থাকত না দলগুলিতে। দেখা যেত না কোনো তারকা ক্রিকেটারকেও। মাঠে নেমে পরাজয়ই ছিল দলটির নিয়তি। সেই দল সিলেট স্ট্রাইকার্স নাম নিয়ে বিপিএলের এই আসরে ঘুরে দাঁড়িয়েছে। ঢাকা চট্টগ্রামে তিন পর্বে ৭ ম্যাচে জয় পেয়েছে ছয়টিতেই। সেই অমৃত স্বাদ নিয়ে বুধবার তারা পৌঁছেছে নিজ শহরে। সেখানে তারা করেছে শো ডাউন, শহরের দু পাশের সড়ক থেকে লোকজন তাদের করে নিয়েছেন বরণ। নিজ ঘরে নিন্দিত দলটা যেন নন্দিত হয়ে উঠেছে।

বিপিএলে সিলেটের ফ্র্যাঞ্চাইজি মানেই যেন পয়েন্ট তালিকার তলানিতে থাকা একটি নাম। তারকাবিহীন আর সাফল্যহীন দল নিয়ে আক্ষেপ আর হতাশায় ভরা একটি নাম। যা চলে আসছিল টুর্নামেন্টের সূচনালগ্ন থেকেই। এর প্রতিবাদে সিলেট রয়্যালসের বিরুদ্ধে মাঠে নেমেছিল স্থানীয়রা। মানববন্ধন করে প্রতিবাদ জানিয়েছিল সিলেট সুপারস্টারসের বিরুদ্ধেও। দাবি জানিয়েছিল স্থানীয় মালিকানায় নিজেদের মাঠে খেলা আয়োজনেরও। উত্তাল সেই সময়ে এই ফ্র্যাঞ্চাইজিকে নিয়ে নিন্দার শেষ ছিল না।

টুর্নামেন্টের নবম আসরে গিয়ে সিলেটের মানুষদের সে দাবি পূরণ হয়েছে। সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে এখন নিয়মিত হয় খেলা। মালিকানাতেও এসেছেন স্থানীয় এক প্রবাসী। সিলেট স্ট্রাইকার্স নাম নিয়ে গড়া নতুন দলের ভার তুলে দেওয়া হয়েছে মাশরাফী বিন মোর্ত্তজার হাতে। আর তার ছোঁয়াতেই বদলে গেছে দলটি।

ঘরের দলকে বরণ করে নিতে কয়েকদিন আগে থেকেই শুরু হয় প্রস্তুতি। সেভ সিলেট নামে সামাজিক এক সংগঠনের স্বেচ্ছাসেবকদের সহায়তায় নগর ছেয়ে গেছে ব্যানার আর ফেস্টুনে। সিলেট স্ট্রাইকার্স দলকে বরণ করে নিতে গতকাল সকাল থেকেই ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ভিড় করেন মানুষেরা। দুপুর সাড়ে ১২টায় গিয়ে তারা পৌঁছান সেখানে। তারপর বাসে চড়ে সিলেট স্ট্রাইকার্স ক্রিকেটাররা যান নগর পরিভ্রমণে (শো ডাউনে)। তাদের ঘিরে ছিল দেড় হাজার মোটরসাইকেল। সঙ্গে ছিল ৫০০ স্বেচ্ছাসেবক। সবমিলিয়ে দুই সহস্রাধিক স্ট্রাইকার্স ভক্তের সমাগম। তাদের নিয়ে শো ডাউনের পিক-আপ ভ্যানে বেজে চলছিল দলটির থিম সং, ‘বুচ্ছ নিবা ভাই’।

সিলেট স্ট্রাইকার্সের এই শোভাযাত্রাটি বিমানবন্দর থেকে শুরু করে মালনীছড়া চা বাগান, লাক্কাতুরা, চৌকিদেখি, মজুমদারি, আম্বরখানা, শাহী ঈদগাহ, কাজীটুলা, কুমারপাড়া, নয়াসড়ক, মিরবক্সটুলা, চৌহাট্টা, রিকাবিবাজার, মিরের ময়দান, সুবিদবাজার, দর্শন দেউরি হয়ে আম্বরখানা থেকে বিমানবন্দর এলাকার গ্র্যান্ড সিলেটে গিয়ে শেষ হয়। স্ট্রাইকার্সের নগর পরিভ্রমণকালে রাস্তার দুই পাশে দাঁড়িয়ে মানুষেরা অভিবাদন জানিয়েছেন।

সিলেটে বিপিএল উন্মাদনা আগেও দেখা গেছে, তবে এভাবে শোভাযাত্রা করতে দেখা যায়নি কখনও। এ বিষয়ে জানতে চাইলে সেভ সিলেটের সমন্বয়ক আয়ান মুমিনুল হক বলেন, ‘ঢাকা আর চট্টগ্রামে সিলেট দল টানা জিতেছে। এবার তারা যেন নিজ শহরেও জয় পায় আমাদের প্রত্যাশা এটাই। তাদের একটি জয় দেখার জন্য স্থানীয়রা কতটা মুখিয়ে, সেটা ক্রিকেটারদের চাক্ষুশ দেখাতেই আমাদের এই আয়োজন। সবার প্রত্যাশা এবার সিলেট শিরোপা জিতবে।’

ভক্তদের প্রত্যাশা অমূলক নয়। কারণ চলমান আসরে যে দাপট দেখিয়ে চলেছে সিলেট। তারা জয় পেয়েছে টানা পাঁচ ম্যাচে। ষষ্ঠ ম্যাচে হারলেও ঢাকা পর্বের শেষ ম্যাচে তারা পরাজিত করেছে ফরচুন বরিশালকে। খাঁদের কিনার থেকে কিভাবে উঠে আসতে হয় সেটাও জানে এবারের সিলেট ফ্র্যাঞ্চাইজির ক্রিকেটাররা। শেষ বল অবধি তারা লড়াই করতে পারে। তাই তো ৬ ম্যাচ জিতে তারা রয়েছে পয়েন্ট তালিকার শীর্ষে। অথচ অন্যান্য বছরে তালিকার সবশেষ নাম থাকাটাই ছিল যাদের নিয়তি।

বিপিএলের চলতি আসরে সিলেট স্ট্রাইকার্স ১২ পয়েন্ট নিয়ে সবার শীর্ষে রয়েছে। এমনকি অন্যান্য বছরে সবক্ষেত্রে তলানিতে থাকা দলটির ক্রিকেটাররা সর্বোচ্চ রান ও উইকেট সংগ্রহের তালিকাতেও আছেন সেরা পাঁচের মধ্যেই। টানা তিন ফিফটি হাঁকানো তৌহিদ হৃদয় এখন পর্যন্ত টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ অর্ধশতক অর্জনকারি। এসব দেখে সিলেটের স্থানীয় ক্রিকেট পাগলরা কি আর ঘরে বসে থাকতে পারে। তাই এককালের নিন্দুক ক্রিকেট ভক্তরা এবার নন্দিত করলেন স্ট্রাইকার্স ক্রিকেটারদের।