নিরাপত্তা বাড়ছে ওসমানী বিমানবন্দরে

নিরাপত্তা বাড়ছে ওসমানী বিমানবন্দরে

সিলেটের ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরসহ দেশের সব আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ বিমানবন্দরের নিরাপত্তা আরও বাড়াতে আবার সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠিয়েছে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)। এ বিষয়ে মন্ত্রণালয় ও বেবিচকের কর্মকর্তারা কয়েক দফায় বৈঠকও করেছেন।

কিছুদিন আগে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ও বলেছে, ‘বিমানবন্দরে নিরাপত্তার ঘাটতি আছে। ঘাটতি পূরণে আরও কঠোর নিরাপত্তা বলয় গড়ে তুলতে হবে।’ এর পরই বেবিচক চিঠি পাঠায়। আগেও এ বিষয়ে একাধিক চিঠি দেওয়া হয়। কিন্তু কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ আছে। নতুন চিঠিতে আগ্নেয়াস্ত্রসহ নিরাপত্তা-সরঞ্জাম বাড়ানোর অনুরোধ করা হয়েছে। বিমানবন্দরে পাখি, বাদুড়, বেজি ও শেয়ালের উৎপাত বেড়ে যাওয়ায় চিন্তায় পড়েছে কর্তৃপক্ষ। কোনো বিমানবন্দরেই পাখি মারার অস্ত্র নেই। এজন্য শতাধিক আগ্নেয়াস্ত্র কেনার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।

বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল এম মফিদুর রহমান বলেন, ‘সব বিমানবন্দরে কঠোর নিরাপত্তা বলয় গড়ে তুলতে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সুপারিশ কার্যকর করা হচ্ছে। শাহজালালসহ সব বিমানবন্দরে নিরাপত্তার ফাঁক আছে; তা পূরণ করা হচ্ছে। নিরাপত্তার জন্য যা যা করা দরকার সবই করা হচ্ছে। আরও নিরাপত্তা-সরঞ্জাম আনা হচ্ছে। নিরাপত্তার জন্য কোনো ফাঁক রাখা হবে না।’     

বেবিচকের কর্মকর্তারা বলেন, ‘পাখি ও শেয়াল মারার অস্ত্রই (এয়ারগান) নেই কোনো বিমানবন্দরে। জনবল সংকটও আছে। এই নিয়ে আতঙ্কে থাকে সরকারি-বেসরকারি এয়ারলাইনসগুলো। পাখির সার্বক্ষণিক আনাগোনা থাকে বিমানবন্দরে। মাঝেমধ্যে পাখির আঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বিমান। বিমানের উড্ডয়ন ও অবতরণের সময় পাখির আঘাতের ঘটনা একাধিকবার ঘটেছে। বিভিন্ন দেশে পাখির আঘাতে বিমান দুর্ঘটনা ঘটেছে। ৩৭ বছরের পুরনো এয়ারগান রয়েছে বটে, তবে সেসব সচল নেই। এজন্য আমরা উদ্যোগ নিয়েছি অস্ত্র কেনার। আগামী ৬ মাসে অন্তত অর্ধশত এয়ারগান কেনা হবে। এই জন্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে।’

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, ‘বর্তমানে দেশি-বিদেশি প্রায় ৪০টি বিমান সংস্থা বাংলাদেশে তাদের ফ্লাইট পরিচালনা করছে। ৪৭টি দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের বিমান চলাচল চুক্তি রয়েছে। বাংলাদেশ বিমানের পাশাপাশি বেসরকারি কয়েকটি এয়ারওয়েজ যাত্রীবাহী বিমান এবং ১০-১২টি বিমান সংস্থা কার্গো বিমান ও হেলিকপ্টার পরিচালনা করছে। প্রতিদিন ৪০ হাজার থেকে ৫০ হাজার যাত্রী আসা-যাওয়া করেন। বিমানবন্দরে নিরাপত্তার ঘাটতি রয়েছে।’

তারা বলেন, ‘যাত্রী আসা-যাওয়ার সময় যেনতেনভাবে তল্লাশি করা হয়। রানওয়েতেও তেমন নিরাপত্তা নেই। খোদ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ও নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করে না।’

এসব অভিযোগ ওঠার পর নড়েচড়ে বসে বেবিচক। দেশের সব বিমানবন্দরের নিরাপত্তার বিষয়ে বেবিচক চেয়ারম্যান এবং ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা কয়েক দফা বৈঠক করেন। নিরাপত্তা-সরঞ্জামের জন্য বেবিচক একটি চিঠি পাঠায় সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে। চিঠিতে আরও কিছু সমস্যার বিষয়েও বলা হয়। ইডিএস, ডুয়েল ভিউ এক্সরে স্ক্যানিং মেশিন, ডুয়েল ভিউ এক্সরে স্ক্যানিং মেশিন ফর কেবিন উইথ ট্র্রে রিটার্ন সিস্টেম, আন্ডার ভেহিকল স্ক্যানিং মেশিন, এক্সপ্লোসিভ ট্রেস ডিটেক্টর (ইটিডি), লিকুইড এক্সপ্লোসিভ ডিটেকশন সিস্টেম, ডাবল ক্যাব পিকআপ, ইটিভি কনজুম্যাবলস ফর এক্সপ্লোসিভ ট্রান্স ডিটেক্টর মেশিনের কথা বলা হয় চিঠিতে। আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ বিমানবন্দরের রানওয়ের নিরাপত্তা বাড়াতেও বলা হয়। পুলিশের পাশাপাশি আনসারের সংখ্যাও বাড়াতে বলা হয়েছে।

এ বিষয়ে বেবিচকের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, ‘বিমানবন্দরগুলোতে কঠোর নিরাপত্তা বলয় গড়ে তুলতে একাধিকবার চিঠি দেওয়া হয়েছে মন্ত্রণালয়ে। কিন্তু কাজের কাজ হচ্ছে না। মাস ছয়েক আগে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় নিরাপত্তার প্রশ্ন তুললে চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে আবার চিঠি দেওয়া হয় মন্ত্রণালয়ে। আশা করি, এবার কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’ তিনি বলেন, ‘বিমানবন্দরে ভিআইপিদের নিরাপত্তা নিয়ে সমস্যা হয়। তল্লাশি করতে গেলেই তারা খারাপ আচরণ করেন, গালিগালাজ করেন। ভিআইপিদের তল্লাশি করা যাবে না বিশে^র কোনো দেশেই এ ধরনের নিয়ম নেই। বিমানবন্দরে আসার পর সবকিছু তল্লাশি করতে কিছুদিন আগে কঠোর বার্তা দেওয়া হয়েছে। কোনো যাত্রী ঝামেলা করলে আইনগত ব্যবস্থা নিতেও বলা হয়েছে।’

বেবিচকের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, ‘মাস দুয়েক আগে সবকটি বিমানবন্দরের জন্য শতাধিক এয়ারগান কিনতে এবং ওই শাখার জন্য কিছু লোক নিয়োগ দিতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। চিঠিতে বলা হয়েছে, জরুরিভিত্তিতে এয়ারগানগুলো দরকার। বিমানবন্দরগুলোতে আছে পরিত্যক্ত ডোবা-নালা ও আবর্জনা। আছে রানওয়ের সবুজ ঘাস, যা আকৃষ্ট করে পাখিদের। ওখানে মাছ ও পোকামাকড় খেতে হাজির হয় পাখিগুলো। তাছাড়া শেয়ালও ঘোরাফেরা করে ঝোপঝাড়ে। মাঝেমধ্যে পাখি রানওয়েতে চলে আসে। বিমান ওঠানামার সময় পাখির আঘাতে দুর্ঘটনার আশঙ্কা থাকে। যারা এয়ারগানগুলো চালাবেন তাদের কোনো প্রশিক্ষণ নেই। শাহজালালে যে-কটি অস্ত্র আছে সেগুলোর অবস্থাও ভালো না। নতুন অস্ত্র কেনা যাবে কি না সেই সিদ্ধান্ত এখনো পাওয়া যায়নি।’

ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘৩৭ বছরের পুরনো চারটি বন্দুক দিয়ে চলছে পাখি ও শেয়াল তাড়ানোর কাজ। মাঝেমধ্যে এগুলোও ঠিকভাবে কাজ করে না। মেয়াদ নেই অস্ত্রগুলোর। সব বিমানবন্দরেই শেয়াল ও পাখির আতঙ্কে থাকেন পাইলটরা। বিমান অবতরণ করার সময় মাঝেমধ্যে ঝামেলায় পড়তে হয় কর্তৃপক্ষকে।’

দেশের সব বিমানবন্দরে নিরাপত্তা বাড়াতে আরও কী উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন তা ঠিক করতে সম্প্রতি বেবিচক কার্যালয়ে সব বিমানবন্দরের ম্যানেজাররা অনলাইনে জরুরি বৈঠক করেন। বেবিচকের চেয়ারম্যান ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সেই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। ম্যানেজাররা জানিয়েছেন, ‘নিরাপত্তার প্রতিটি পয়েন্টে জনবলের ব্যাপক ঘাটতি রয়েছে। দ্রুত জনবল নিয়োগ দিতে হবে। তল্লাশি করতে সাধারণ যাত্রীরা সহায়তা করছেন। কিন্তু ভিআইপিরা কোনো সহায়তা করছেন না। স্ক্যানিং অপারেটর বাড়াতে হবে। অপারেটররা টানা দায়িত্ব পালন করায় তাদের অনেকের চোখে সমস্যা দেখা দিয়েছে। ফলে লাগেজ-ব্যাগেজ তল্লাশি করার সময় ঠিকমতো দেখতে পান না।’ এসব সমস্যার দ্রুত সমাধান করা হবে বলে বেবিচক চেয়ারম্যান বলেছেন।