নির্যাতনের শিকার প্রতিবন্ধী চুরির মামলায় জেলে

নির্যাতনের শিকার প্রতিবন্ধী চুরির মামলায় জেলে

মৌলভীবাজারের বড়লেখায় ফোন চুরির অপবাদে প্রতিবন্ধী যুবক কলিম উদ্দিনকে বেধড়ক পিটিয়ে বাড়ির সামনে ফেলে যান নিজ বাহাদুরপুর ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ইমাম উদ্দিন হিফজুর ও তাঁর ভাই রাজু আহমদ। এর প্রতিবাদে আদালতে অভিযোগ করেছিলেন কলিমের ভাই ছইদুর রহমান। অভিযোগ আমলে নিয়ে আদালত তদন্তের জন্য সিআইডিতে পাঠান।

পরে কলিম উদ্দিনকে মোবাইল ফোন চুরির ঘটনায় আসামি করে থানায় মামলা করেন রাজু। ওই মামলার পরিপ্রেক্ষিতে তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই মো. জাহেদ আহমদ অভিযান চালিয়ে ২৩ অক্টোবর চুরির ফোনসহ মো. ফাহিদ আহমদকে (২১) গ্রেপ্তার করেন। পরদিন ফাহিদকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়। তিনি বর্ণি ইউনিয়নের সৎপুর গ্রামের দেলোয়ার হোসেনের ছেলে।

চুরির ফোন উদ্ধার ও এর সঙ্গে সম্পৃক্ত ফাহিদ আহমদ গ্রেপ্তার হলেও জেলহাজতে রয়েছেন নির্যাতনের শিকার কলিম উদ্দিন। গতকাল বুধবার দুপুরে বড়লেখা সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির হয়ে জামিন চাইলে শুনানি শেষে তা নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠান আদালত। ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ জিয়াউল হক এ আদেশ দেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন আদালতের বেঞ্চ সহকারী ইকরাম হোসেন।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই মো. জাহেদ আহমদ বলেন, প্রতিবন্ধী যুবককে নিয়ে মামলার বাদী গত ১৪ অক্টোবর থানায় আসেন। তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদে মনে হয়েছে তিনি বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী। একেক সময় একেক কথা বলেছেন। পরে বাদী তাঁকে নিয়ে চলে যান। এরপর ১৬ অক্টোবর ওই যুবকের পরিবার আদালতে মামলা করে। ১৮ অক্টোবর ওই যুবকের বিরুদ্ধে চুরির মামলা করেন রাজু।

এসআই জাহেদ জানান, প্রযুক্তির মাধ্যমে ফাহিদকে গ্রেপ্তার ও তাঁর কাছ থেকে ফোনটি উদ্ধার করা হয়। তিনি ভাঙারি ব্যবসার আড়ালে ফোনসহ বিভিন্ন জিনিস চুরি করেন। উদ্ধার করা ফোনটিও চুরির কথা স্বীকার করেছেন।

ফাহিদকে আদালতে পাঠানোর সময় প্রতিবেদনে এসআই জাহেদ উল্লেখ করেন, ফাহিদ প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে মোবাইল চুরির কথা স্বীকার করেছেন। তিনি আন্তঃজেলা চোর চক্রের সক্রিয় সদস্য। তাঁর বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে। তিনি বাদীর ভাইয়ের কক্ষের দরজা খোলা পেয়ে কৌশলে ঘরে ঢুকে ফোনটি চুরি করে নিয়ে যান বলে তথ্যপ্রমাণ পাওয়া গেছে।

জানা গেছে, ইউপি সদস্য ইমাম উদ্দিন ও তাঁর ভাই রাজু পূর্ব মাইজগ্রাম গ্রামের তছির আলীর ছেলে শারীরিক প্রতিবন্ধী কলিম উদ্দিনের বিরুদ্ধে ফোন চুরির অপবাদ দিয়ে প্রচার চালান। গত ১৪ অক্টোবর তাঁরা কলিমকে তাঁদের বাড়িতে ডেকে চুরির স্বীকারোক্তি আদায়ে হাত-পা বেঁধে বেধড়ক পেটান। এ সময় সাদা কাগজ ও স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নেন। পরে বড়লেখা থানায় নিয়ে এসআই জাহেদের সামনে মারধর করে প্রতিবন্ধী যুবকের স্বীকারোক্তি ভিডিও করেন।

ওইদিন রাত ১০টার দিকে আহত অবস্থায় কলিমকে তাঁর বাড়ির সামনে ফেলে যান ইউপি সদস্যের ভাই রাজু। এ সময় কলিমের চিৎকার শুনে স্বজনরা তাঁকে উদ্ধার করে বিয়ানীবাজার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করান। এ ঘটনায় ১৬ অক্টোবর আদালতে ইউপি সদস্য ও তাঁর ছোট ভাইয়ের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করেন কলিমের ভাই ছইদুর। দু'দিন পর উল্টো নির্যাতনের শিকার কলিমকে চুরির আসামি করে থানায় মামলা করেন রাজু।

ছইদুর রহমান বলেন, আদালতে মামলা দেওয়ার কারণ ইউপি সদস্য ও তাঁর ভাইয়ের সঙ্গে পুলিশের ভালো সম্পর্ক। পুলিশের ক্ষমতা দেখিয়ে তাঁরা হয়রানি করছেন। তাঁরা মামলা দেওয়ার পর পুলিশ প্রকৃত চোরের কাছ থেকে মোবাইল ফোন উদ্ধার করে। এরপর ভাইকে জামিন করাতে আদালতে গেলেও পাননি। প্রতিবন্ধী ভাই এখনও অসুস্থ।
ইউপি সদস্য ইমাম উদ্দিন হিফজুর বলেন, আমার মোবাইল চুরি হওয়ায় তাঁকে ফোন দিয়ে বাড়িতে আনি। কোনো নির্যাতন করা হয়নি। আমি আমার ভাই তাঁরে টাচও (স্পর্শ) করার প্রশ্ন আসে না। চুরির বিষয়ে আমি থানায় জিডি করি। পরে ছোট ভাই মামলা করেছে।