সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুরের মজিদপুর গ্রাম

পানিবন্দি মানুষের আশ্রয়স্থল 'চেয়ারম্যানের বিল্ডিং'

পানিবন্দি মানুষের আশ্রয়স্থল 'চেয়ারম্যানের বিল্ডিং'

কামরুল ইসলাম মাহি || নিচ তলায় কমিউনিটি সেন্টার আর উপর তলায় ভাড়া। দুইযুগ পুরোনো এই বাড়ি 'চেয়ারম্যানের বিল্ডিং' নামে এলাকায় পরিচিত। যা সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুরের মজিদপুরের গ্রামে। চলমান ভয়াল বন্যায় নিরাপদ আশ্রয় খোঁজা মানুষদের জন্য বাড়িটি উন্মুক্ত করে দিয়েছেন মালিক মো. ছমির আলী।

মূলত ছমির আলী বেশ আগে কলকলিয়া ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী ছিলেন। বিজয়ী না হলেও তাঁকে মানুষজন ভালোবেসে চেয়ারম্যান বলে সম্বোধন করেন। আর তাঁর বাড়িকে এলাকাবাসী 'চেয়ারম্যানের বিল্ডিং' হিসেবেই চিনেন।

যুক্তরাজ্য প্রবাসী এই সমাজসেবকের বাড়িতে গত বৃহস্পতিবার রাত থেকে গ্রামের অন্তত ২০০ মানুষ আশ্রয় নিয়েছে। বানভাসি মানুষকে নিজেদের ঘরে আশ্রয়ের পাশাপাশি খাবারও দিয়েছেন। বানভাসি অনেকে এখনো এসব বাড়িতে অবস্থান করছে। বাড়িটিতে গ্যাসের সিলিন্ডারের মাধ্যমে রান্নার ব্যবস্থাও করা হচ্ছে।

ছমির আলী জানালেন, তাঁর পরিবারের সদস্যরা যুক্তরাজ্যে থাকেন। তিনিও সেখানে ছিলেন। সম্প্রতি দেশে এসেছেন। শুধু তাঁর এই বাড়িটি নয় নিজস্ব মালিকানাধীন বিশাল মার্কেট ও নিকটতম এতিমখানা মাদরাসাটিও উন্মুক্ত করে দিয়েছেন বন্যার্ত অসহায় মানুষের তরে।

গেল বৃহস্পতিবার বন্যার পানিতে যখন জগন্নাথপুর উপজেলা ভেসে যায়, তখন পরিস্থিতির ভয়াবহতা দেখে মসজিদের মাইকে ঘোষণা দিয়ে বলেন, যাদের বাড়িতে পানি উঠেছে আপনারা আমার বাসায় চলে আসেন, আমার দরজা আপনাদের জন্য খোলা। এ সময়ই বেশ কয়েকটি পরিবার বাড়িতে আশ্রয় নেয়।

পরদিন যখন পুরো গ্রাম পানির নিচে তখনও তিনি মসজিদের মাইকে ঘোষণা দিয়ে বলতে থাকেন, 'আমার সঙ্গে অনেকের মতবিরোধ থাকতে পারে। এই কঠিন সময়ে কেউ আমার উপর রাগ করে থাকবেন না। আমার বাসায় আসুন। মরলে এক ছাদের নিছে মরবো।'

আশ্রয় নেওয়া বানভাসি মানুষরা জানান, তারা যদি এই সময়ে এ সাহায্য পেতেন না তাহলে হয়তো পানিতে ভেসে মরতে হতো। 

জগন্নাথপুর উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান মুক্তাদীর আহমদ মুক্তা বলেন, এবারের বন্যায় এমন অনেক মানবিক কাজ দেখা গেছে। মানুষ মানুষকে উদ্ধার করেছেন, আশ্রয় দিয়েছেন, খাবার দিচ্ছেন, বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা করছেন। সবার চেষ্টা না থাকলে পরিস্থিতি আরও ভয়ানক হতো।

এ উপজেলায় গত রোববার বন্যার পানি কিছুটা কমলেও জেলা শহরের সঙ্গে উপজেলার সড়ক যোগাযোগ পুরোপুরি এখনও সচল হয়নি। তবে উপজেলার আট ইউনিয়ন থেকে উপজেলা সদরের সড়ক যোগাযোগ আংশিক চালু হয়েছে। উপজেলাজুড়ে দুই শতাধিক আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হলেও সেখানে কোনো ধরনের খাদ্যসহায়তা পৌঁছায়নি। এতে সীমাহীন দুর্ভোগে পড়েছে উপজেলার লাখো মানুষ। তবে কিছু কিছু আশ্রয়কেন্দ্রে শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে। এদিকে দীর্ঘসময় পরে বিদ্যুৎ ও মুঠোফোন নেটওয়ার্ক সংযোগ ফিরে পেয়েছেন বন্যাকবলিত মানুষ।