ফেসবুকে মত প্রকাশ করা কি অপরাধ?

ফেসবুকে মত প্রকাশ করা কি অপরাধ?

ফেসবুকে নিজের মত প্রকাশ করা, কারো সমালোচনা করা কোনোভাবেই অপরাধ নয়। স্বাধীন রাষ্ট্রে সকলের মত প্রকাশের অধিকার রয়েছে- এমন মন্তব্য করে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী, মুক্তিযোদ্ধা তবরাক হোসাইন প্রশ্ন তোলেছেন, কোন অপরাধে ঝুমন দাসকে ছয় মাস ধরে কারাগারে আটকে রাখা হয়েছে? তার অপরাধ কি?

বুধবার (২২ সেপ্টেম্বর) বিকেলে সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ঝুমন দাসের মুক্তির দাবিতে প্রতিবাদী কর্মসূচীতে সংহতি প্রকাশ করে বক্তব্যে এমন প্রশ্ন তোলেন তবরাক হোসাইন।

তিনি বলেন, ঝুমন দাস হেফাজত নেতা মামুনুল হকের সমালোচনা করে ফেসবুকে লিখেছেন। এই মামুনুল হকের সমালোচনা সংসদে দাঁড়িয়ে খোদ প্রধানমন্ত্রীও করেছেন। নানা অভিযোগে মামুনুল কারাগারেও আছেন। তারপরও মামুনুলের সমালোচনার কারণে ঝুমনকে কেনো ছয় মাস ধরে জেলে থাকতে হবে?

হেফাজতে ইসলামের নেতা মামুনুল হকের সমালোচনা করে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে গত ১৬ মার্চ গ্রেপ্তার হন সুনামগঞ্জের শাল্লার যুবক ঝুমন দাস। পর দিন ১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু জন্মশতবার্ষিকীর দিন সকালে ঝুমনের গ্রাম নোয়াওগাওয়ে হামলা চালায় হাজারো সশস্ত্র লোক। তারা ভাংচুর করে ওই গ্রামের প্রায় ৯০টি হিন্দু বাড়ি। বাড়িঘরে হামলা ও ভাংচুরের ঘটনায় দায়েরকৃত মামলাগুলোতে গ্রেপ্তার হওয়া সকলেই জামিন লাভ করেছেন। তবে ছয় মাসেও জামিন মিলেনি ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেওয়ঢা ঝুমনের।

এর প্রতিবাদে এবং ঝুমন দাসের মুক্তির দাবিতে বৃহস্পতিবার সিলেটে এই প্রতিবাদী অবস্থান কর্মসূচীর আয়োজন করে নাগরিক প্ল্যাটফর্ম ‘দুষ্কাল প্রতিরোধে আমরা’।

প্রতিবাদী কর্মসূচীর শুরুতে শাল্লার নোয়াগাওয়ে হামলা, ঝুমনের গ্রেপ্তার ও জামিন না পাওয়ার পুরো পেক্ষাপট তুলে ধরে স্বাগত বক্তব্য রাখেন ‘দুষ্কাল প্রতিরোধে আমরা’র সংগঠক আব্দুল করিম কিম।

তিনি বলেন, ঝুমন দাস একজন গ্রাম্য যুবক। সে মামুনুল হককে নিয়ে যে স্ট্যাটাস দিয়েছিলো সেটিকে পুঁজি করে একটি গোাষ্ঠি হাজার হাজার মানুষকে উসকে দিয়ে সংখ্যালঘুদের বাড়ি ঘরে হামলা চালায়। আমরা সরেজমিনে গিয়ে দেখেছি। সেদিন কি পরিমাণ নির্যাতনের শিকার হয়েছিলো মানুষগুলো। অথচ নিজেদের প্রাণ রক্ষায় হামলার আগের রাতেই ঝুমন দাসকে আইনের হাতে তুলে দিয়েছিলো সংখ্যালঘু গ্রামটির বাসিন্দারা। তার পরও তারা রক্ষা পায়নি। এ ঘটনায় সংখ্যালঘুদের বাড়ি ঘরে হামলায় মামলা হয়েছে, কয়েকজনকে গ্রেপ্তারও করা হয়েছিলো। কিন্তু তারা সবাই জামিন পেয়েছেন। আর ঝুমন দাস এখনো জেল হাজতে। তার ৬ মাসের সন্তান নিয়ে অসহায় স্ত্রী পথে পথে ঘুরছেন। আমরা ঝুমন দাসের মুক্তি চাই। সেই সাথে ডিজিটাল কালো আইন নামক যে আইনে তাকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে, এই কালো আইন দিয়ে মানুষের কথা বলার স্বাধীনতা নষ্ট করা হয়েছে- সে আইন বাতিল দাবি করছি।

‘দুষ্কাল প্রতিরোধে আমরা’র সংগঠক দেবাশীষ দেবুর সঞ্চালনা এ অবস্থান কর্মসূচিতে সমাপনী বক্তব্যে প্রবীণ আইনজীবী তবারক হোসাইন বলেন, স্বাধীনতা পূর্ববর্তী সময় নিবর্তনমূলক আইনের মাধ্যমে বাঙালিদের দমিয়ে রাখার চেষ্টা করা হয়েছিলো, শোষণ-নির্যাতন ছিলো। তাই আমরা এমন দেশ চেয়েছিলাম যেখানে শোষণ নির্যাতন থাকবে না। আমাদের মূল সংবিধানে নিবর্তনমূলক কোন আইনও ছিলো না। পরে এগুলো যুক্ত হয়েছে। এর মাধ্যমে স্বাধীনতা হরণ হয়েছে। যার উদাহরণ ঝুমন দাস। সে যে স্ট্যাটাস দিয়েছিলো সেটি আমি পড়েছি। স্ট্যাটাসে কিছু অতিরঞ্জন থাকতে পারে। তবে এটা কোনোভাবেই অপরাধ নয়।

তবারক বলেন, এ দেশে ওয়াজ মাহফিলের নামে প্রতিনিয়ত মানুষের ধর্মানুভ’তিতে আঘাত করা হয়। সব ধর্ম নিয়ে কটূক্তি করা হয়। কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয় না। অথচ ফেসবুকে নীরিহ কেউ কিছু লিখলেই তার বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করা হয়। এই আইন অবিলম্বে বাতিল করতে হবে।

এই আইনজীবী বলনে, ঝুমনের জামিনের ব্যাপারে বৃহস্পতিবার হাইকোর্ট দেওয়ার কথা। আশা করি মহামান্য হাইকোর্ট যথাযথ বিবেচনার মাধ্যমে ঝুমন দাসকে জামিন দিবেন। এবং সরকার তার নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে।

এতে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন সংস্কৃতি ব্যক্তিত্ব এনামুল মুনির, হিন্দু বৌদ্ধ খৃষ্টান ঐক্য পরিষদ সিলেট মহানগরের সভাপতি এডভোকেট মৃত্যুঞ্জয় ধর ভোলা, বাসদ (মার্কসবাদী) সিলেটের সমন্বয়ক উজ্জ্বল রায়, হাওর ও পরিবেশ রক্ষা আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক কাশমির রেজা, কবি আবিদ ফায়সাল, সারী বাঁচাও আন্দোলন নেতা আব্দুল হাই আল হাদি, শিক্ষক ও সংগঠক প্রণবকান্তি দেব, আইনজীবী দেবব্রত চৌধুরী লিটন, মাহবুব রাসেল, প্রগতিশীল রাজনৈতিক কর্মী নিরঞ্জন সরকার অপু, তানভীর রুহেল, হিতাংশু কর বাবু, রাজীব রাসেল প্রমুখ।