বন্যায় ধুয়ে নিল ঈদ আনন্দ!

বন্যায় ধুয়ে নিল ঈদ আনন্দ!

মৌলভীবাজারের হাওর অঞ্চলের পানিবন্দি মানুষ দফায় দফায় ত্রিমুখী ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন। যার কারণে আসন্ন ঈদুল আজহার আমেজ নেই বানভাসি মানুষের মধ্যে। বন্যার পানিতে ভেসে গেছে তাদের ঈদ আনন্দ।

গত বোরো মৌসুমে দীর্ঘমেয়াদি খরায় জেলার হাওরগুলোতে কৃষকের রোপণকৃত ব্রি-২৮ জাতের ধানে চিটা ধরায় লোকসানে পড়েছিলেন প্রান্তিক কৃষক ও বর্গা চাষিরা। এবার বোরো উত্তোলনের সময় টানা বৃষ্টির কারণে ধান ন্যায্যমূল্যে বিক্রি করতে না পেরে বড় ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন তারা।

সেই সঙ্গে দীর্ঘ দিনের বন্যায় পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন জেলার কুলাউড়া, জুড়ি, বড়লেখা এবং রাজনগর উপজেলার প্রায় ৩ লাখ মানুষ। বন্যায় তাদের দুর্ভোগ চরম আকার ধারণ করেছে।

সরেজমিন দেখা গেছে, হাওর অঞ্চলের ৭০-৮০ শতাংশ ঘরে এখনো পানি। অনেকেই আশ্রয় কেন্দ্রে আবার কেউ কেউ ঘরে পানির মধ্যে দিনতিপাত করছেন। কিছু পরিবার উজান এলাকায় আত্মীয়ের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন। যাতায়াতের প্রতিটি রাস্তা, হাটবাজার এখনো পানির নিচে। স্কুল, কলেজ, মসজিদ, মাদ্রাসা, ঈদগাহ ও মন্দির তলিয়ে গেছে। মানুষের চলাচলের কোনো জায়গা নেই।

এছাড়াও বানভাসি মানুষের মধ্যে দেখা দিয়েছে পানিবাহিত ডায়রিয়া, চর্ম, জ্বর, চোখের ভাইরাসসহ বিভিন্ন রোগ। বিশেষ করে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে হাওড় পারের মৌসুমি খামারিরা। এমন পরিস্থিতিতে তাদের মধ্যে ঈদ আনন্দের চেয়ে দুশ্চিন্তায় পরিণত হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অভাবের কারণে এবারের ঈদে মধ্যবিত্ত পরিবারের অনেকেই কুরবানি দিতে পারছেন না। আবার কারো কাছে হাত পাততে পারছেন না। অন্যদিকে পানিবন্দি এলাকায় কাজ না থাকায় চরম বিপাকে পড়েছেন দিনমজুররা। সব মিলিয়ে দুর্বিষহ জীবনযাপন করছেন জেলার নিম্নাঞ্চলের বানভাসি মানুষ।

কুলাউড়া উপজেলার জাব্দা গ্রামের বাসিন্দা মো. রিয়াজুর রহমানসহ অনেকেই বলেন, দীর্ঘস্থায়ী বন্যার কারণে আমাদের মাঝে কোনো ঈদ আনন্দ নেই। নতুন কাপড় কেনা তো দূরের কথা নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস জোগানো সম্ভব হচ্ছে না।

হাওর পারের প্রান্তিক ও বর্গাচাষিদের সঙ্গে কথা হলে তারা জানান, আমাদের মাঝে এ বছর ঈদের কোনো আনন্দ নেই। আমরা এ বছর ত্রিমুখী ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছি। আমাদের একমাত্র সম্বল বোরো ধান। এ বছর বৃষ্টি থাকার কারণে ধান শুকাতে না পারায় কাঁচা ধান পানির দামে বিক্রি করতে হয়েছে।

তারা আরও বলেন, বন্যা শুরু হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত উল্লেখযোগ্যহারে সরকারি ত্রাণসামগ্রী পাওয়া যাচ্ছে না। জনপ্রতিনিধিদের কাছেও যাওয়া যাচ্ছে না।