বিদেশের টাকায় সিলেটে নির্বাচন!

বিদেশের টাকায় সিলেটে নির্বাচন!

বিদেশ তথা প্রবাসের সাথে সিলেটের সম্পর্কটা খুবই ঘনিষ্ট। উৎসব হোক কিংবা নির্বাচন, প্রবাসীদের চোখ থাকে সিলেটে। মূলত এ অঞ্চলের লাখ লাখ মানুষ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রয়েছেন। সে কারণেই প্রবাসীদের সাথে সিলেটের নিবিড় যোগাযোগ। ব্যতিক্রম নয় এবারের জেলা পরিষদ নির্বাচনও। এ নির্বাচনে সিলেট জেলা পরিষদে প্রার্থী হওয়া অন্তত ১৭ প্রার্থী বলছেন, তারা প্রবাসীদের কাছ থেকে টাকা পেয়ে সেটা নির্বাচনী কাজে ব্যয় করছেন।

নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা গেছে, সিলেট জেলা পরিষদ নির্বাচন আগামী ১৭ অক্টোবর অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের নাসির উদ্দিন খান ইতোমধ্যেই নির্বাচিত হয়েছেন। এ পদে আর কেউ প্রার্থী হননি। সিলেটে ১৩টি সাধারণ ওয়ার্ড রয়েছে। এসব ওয়ার্ডে প্রার্থী হয়েছেন ৪৭ জন। আর সংরক্ষিত ৫টি ওয়ার্ডে ১৭ নারী প্রার্থী রয়েছেন।

প্রার্থীরা নির্বাচন কমিশনে হলফনামা জমা দিয়েছেন। সেখানে নিজেদের সব তথ্যের পাশাপাশি তারা নির্বাচনী ব্যয় সংক্রান্ত তথ্যাদিও দিয়েছেন।

সেই তথ্যানুসারে, সিলেটে ১নং ওয়ার্ডে তিন প্রার্থীর মধ্যে মোছাদ্দিক আহমদ নামের একজন ৫০ হাজার টাকা ব্যয় করবেন। এ টাকা তিনি যুক্তরাজ্যপ্রবাসী এক ভাইয়ের কাছ থেকে পাচ্ছেন।

৩নং ওয়ার্ডে তিন প্রার্থী আছেন। তন্মধ্যে মোহাম্মদ আবদুল আউয়াল প্রবাসী চাচাতো ভাইয়ের কাছ থেকে ৪০ হাজার টাকা পেয়ে সেটা ব্যয় করছেন।

৪নং ওয়ার্ডে প্রার্থীসংখ্যা তিনজন। তন্মধ্যে দুজন প্রবাসী আত্মীয়ের কাছ থেকে পাচ্ছেন নির্বাচনী ব্যয়ের খরচ। আতিকুর রহমান নামের প্রার্থী যুক্তরাজ্যপ্রবাসী দুই বোনের কাছ থেকে পাচ্ছেন ৫০ হাজার টাকা। এ ছাড়া নাসির উদ্দিন নামের আরেক প্রার্থী ৫০ হাজার টাকা পাচ্ছেন ইংল্যান্ডপ্রবাসী ভাইয়ের কাছ থেকে।

৫নং ওয়ার্ডে পাঁচ প্রার্থীর মধ্যে আ. হামিদ প্রবাসী ভাই-বোনের কাছ থেকে ৫০ হাজার টাকা এবং আহমদ বহলুল নামের আরেক প্রার্থী প্রবাসী ভাইয়ের কাছ থেকে ৪০ হাজার টাকা পাচ্ছেন।

৬নং ওয়ার্ডে প্রার্থী আছেন দুজন এবং তারা উভয়েই প্রবাসীদের কাছ থেকে অর্থ সহায়তা পেয়ে নির্বাচনে ব্যয় করছেন। গিয়াস উদ্দিন আহমদ প্রবাসী চাচাতো বোনের কাছ থেকে ৫০ হাজার টাকা এবং সহল আল রাজী চৌধুরী যুক্তরাজ্যপ্রবাসী দুই ভাইয়ের কাছ থেকে ৯০ হাজার টাকা পাচ্ছেন।

৭নং ওয়ার্ডে চার প্রার্থীর মধ্যে মুজিবুর রহমান নামের একজন যুক্তরাজ্যপ্রবাসী ভাইয়ের কাছ থেকে পাচ্ছেন ৫০ হাজার টাকা।

সর্বোচ্চ নয়জন প্রার্থী হয়েছেন ৮নং ওয়ার্ডে। তন্মধ্যে মাহমুদ আলী প্রবাসী ভাইয়ের কাছ থেকে ৫০ হাজার টাকা এবং নজরুল ইসলাম প্রবাসী মা ও ভাইয়ের কাছ থেকে ১ লাখ টাকা পাচ্ছেন নির্বাচনী ব্যয় পরিচালনার জন্য।

১২নং ওয়ার্ডে চারজন প্রার্থী রয়েছেন। তন্মধ্যে ফখরুল ইসলাম প্রবাসী ভাইয়ের কাছ থেকে প্রাপ্ত ২০ হাজার টাকা নির্বাচনে ব্যয় করছেন।

১৩নং ওয়ার্ডে তিন প্রার্থীর মধ্যে আব্দুর রহমান প্রবাসী ছেলের কাছ থেকে ৫০ হাজার টাকা ও প্রবাসী ভাগ্নের কাছ থেকে ২০ হাজার টাকা পাচ্ছেন।

এদিকে, সংরক্ষিত ১নং ওয়ার্ডে তিন নারী প্রার্থীর মধ্যে ফারাজানা বেগম ৭০ হাজার টাকা পাচ্ছেন প্রবাসী দুই ভাইয়ের কাছ থেকে এবং জান্নাতুন নাসরিন প্রবাসী দুই মামার কাছ থেকে পাচ্ছেন ৯০ হাজার টাকা।

সংরক্ষিত ২নং ওয়ার্ডে প্রার্থী চারজন। এখানে শামীমা আক্তার কৃষির সঙ্গে প্রবাসী আয় থেকে ১ লাখ টাকা নির্বাচনী ব্যয় হিসেবে দেখিয়েছেন।

সংরক্ষিত ৫নং সাজনা সুলতানা হক প্রবাসী বাবার কাছ থেকে ৫০ হাজার টাকা পাচ্ছেন বলে উল্লেখ করেছেন। এ ওয়ার্ডে প্রার্থীসংখ্যা দুই।

সিলেটের সিনিয়র জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মোহাম্মদ শুকুর মাহমুদ মিঞা বলেন, প্রার্থীরা নির্বাচনে কোন খাতে কত ব্যয় করবেন বা খরচের টাকার উৎস কী, তা ‘ফরম ঢ’তে উল্লেখ করেন। নির্বাচনে তারা সে অনুসারে ব্যয় করছেন কিনা, তা কড়াকড়িভাবে দেখা হয়