মৎস্য অধিদপ্তরের অবমুক্ত করা পোনা মাছ মারা গেল এক দিনেই

মৎস্য অধিদপ্তরের অবমুক্ত করা পোনা মাছ মারা গেল এক দিনেই

মৌলভীবাজারের বড়লেখায় সরকারি রাজস্ব বাজেটের আওতায় উপজেলা মৎস্য অধিদপ্তরের উদ্যোগে বিভিন্ন জলাশয়ে অবমুক্ত করা হয়েছিল মাছের পোনা। তবে অবমুক্ত করা পোনার বেশিরভাগই এরই মধ্যে মারা গেছে। জলাশয়ে ছাড়ার পর থেকেই মাছের পোনা মরে ভেসে উঠতে থাকে। ভেসে ওঠা এসব মাছ পচে দুর্গন্ধ ছড়ায় আশপাশের এলাকায়।

জানা গেছে, গত ১৯ ও ২১ সেপ্টেম্বর পৃথক অনুষ্ঠান করে ৪৬টি জলাশয়ে ৫৬৭ কেজি মাছের পোনা ছাড়া হয়। এরমধ্যে ১৯ সেপ্টেম্বর বিকেলে বড়লেখা উপজেলা পরিষদের জলাশয়ে পোনামাছ অবমুক্তকালে উপস্থিত ছিলেন বড়লেখা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান সোয়েব আহমদ, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা খন্দকার মুদাচ্ছির বিন আলী, উপজেলার জ্যেষ্ঠ মৎস্য কর্মকর্তা কামরুল হাসান, বড়লেখা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহাঙ্গীর হোসেন সরদার প্রমুখ।

এসময় পোনা মাছগুলো ছাড়ার কয়েক মিনিটের মধ্যে মরে ভেসে উঠতে থাকে। এনিয়ে তাৎক্ষণিক ক্ষোভ প্রকাশ করেন বড়লেখা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান সোয়েব আহমদ। একইদিন সকালে মৌলভীবাজার জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. মিজানুর রহমানও পোনা অবমুক্তকালে কিছু মাছের পোনা মরে ভেসে ওঠা দেখে উপজেলা জ্যেষ্ঠ মৎস্য কর্মকর্তাকে নতুন করে পোনা ফেলার নির্দেশ দেন।

এরপর ২১ সেপ্টেম্বর পৃথক অনুষ্ঠানে আরও বেশ কিছু জলাশয়ে মাছের পোনা অবমুক্ত করা হয়। তবে বেশিরভাগ জলাশয় থেকে মাছ মারা যাওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।

এই বিষয়ে তথ্য জানতে গত ২২ সেপ্টেম্বর থেকে ২৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বড়লেখা উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তার কার্যালয়ে সরাসরি যোগাযোগ করেও উপকারভোগীদের তালিকা এবং মাছের পোনা সরবরাহকারী ঠিকাদারের তথ্য পাওয়া যায়নি। মৎস্য কর্মকর্তা তার কাছে কোনো তথ্য নেই জানিয়ে নানা গড়িমসি করেন। ২৫ সেপ্টেম্বর (রোববার) দুপুরে বিষয়টি মৌলভীবাজার জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. মিজানুর রহমানকে জানালে তিনিও উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তাকে তথ্য দেওয়ার নির্দেশ দেন। তারপরও উপজেলার জ্যেষ্ঠ মৎস্য কর্মকর্তা কামরুল হাসান কোনো তথ্য দেননি।

তবে উপজেলা মৎস্য কার্যালয়ের একটি সূত্র জানিয়েছে, ৫৬৭ কেজি পোনা (রুই, কাতল, মৃগেল ও ঘনিয়া) ক্রয়ের জন্য ১ লাখ ৭০ হাজার টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে। কোটেশনের মাধ্যমে পোনা ক্রয় করা হলেও এতে অনিয়মের আশ্রয় নেওয়া হয়েছে। পছন্দের লোক দিয়ে অত্যন্ত গোপনীয়ভাবে মৎস্য পোনা ক্রয় কমিটির সভাপতি ও মৎস্য কর্মকর্তা এই মাছের পোনাগুলো কিনেছেন। এছাড়া ৪৬টি প্রাতিষ্ঠানিক পুকুরে/জলাশয়ে মাছ ছাড়ার কথা থাকলেও অনেক ব্যক্তিগত পুকুর এবং রাজনৈতিক দলের কর্মীদের বাড়ির পুকুরেও ছাড়ার জন্য মাছের পোনা দেওয়া হয়েছে। নীতিমালা অনুযায়ী সুস্থ-সবল, যথাযথভাবে ওজন পরীক্ষা ও আকারে ১০-১৫ সেন্টিমিটার পোনা সরবরাহ করার কথা থাকলেও পোনা মাছগুলো ছিলো দুর্বল ও নির্ধারিত আকারের চেয়েও ছোট ছিল। এছাড়া জলাশয়ে অবমুক্ত করার আগেও পোনার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়নি। যার কারণে জলাশয়ে অবমুক্তর পর থেকে পোনা মাছগুলো মরে ভেসে ওঠে।