রুমেন শিক্ষায়, মুকুটের সম্পদে এগিয়ে!

রুমেন শিক্ষায়, মুকুটের সম্পদে এগিয়ে!

জেলা পরিষদ নির্বাচন। এই নির্বাচনে জনসাধারণের প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণ নেই। চেয়ারম্যান, সংরক্ষিত ও সাধারণ সদস্য প্রার্থীদের ভোট দেবেন নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা। তবুও আগ্রহের কমতি নেই সাধারণ মানুষের মধ্যে। আগামী ১৭ অক্টোবর অনুষ্ঠিতব্য সুনামগঞ্জ জেলা পরিষদের এ নির্বাচন নিয়ে হাওরপাড়ে এখন অনেকটা উৎসবের আমেজ।

দেশের অন্যান্য জেলায় বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় চেয়ারম্যান প্রার্থীরা নির্বাচিত হলেও হাওরের রাজধানী সুনামগঞ্জ ব্যতিক্রম। আওয়ামী লীগের মনোনয়নে চেয়ারম্যান প্রার্থী সাবেক পিপি মো. খায়রুল কবির রুমেনের বিরুদ্ধে নির্বাচন করার ঘোষনা দিয়েছেন দলের মনোনয়ন বঞ্চিত জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি ও জেলা পরিষদের প্রশাসক নুরুল হুদা মুকুট।

এরইমধ্যে তাদের দু’জনের মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করেছেন রিটানিং কর্মকর্তা। নির্বাচন কমিশনে দেওয়া হলফনামায় এ দুই প্রার্থী নিজেদের জীবনবৃত্তান্তসহ সম্পদ বিবরণী জমা দিয়েছেন।

হলফনামা বিশ্লেষনে দেখাগেছে, অর্থ-সম্পদে নুরুল হুদা মুকুটের ধারেকাছেও নেই খায়রুল কবির রুমেন। জমিজমা, দালানকোঠা, ফ্লাটবাড়ি ছাড়াও মুকুট নিজ ও স্ত্রীর নামে নগদ অর্থ সম্পদের পরিমাণ দেখিয়েছেন ৪ কোটি ২৪ লাখ ২৫ হাজার ২৪৭ টাকার। শিক্ষাগত যোগ্যতা লিখেছেন তিনি এইচএসসি পাস। তার বিরুদ্ধে নেই কোনো মামলা। পেশা হিসেবে তিনি দেখিয়েছেন কৃষি, বাড়িভাড়া, ঠিকাদারী ও সরবরাহকারী, হোটেল ব্যবসা ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান পদে সম্মানী ভাতা।

কৃষিখাতে তিনি বার্ষিক আয় দেখিয়েছেন ১ লাখ ২২ হাজার ৮৫০ টাকা, বাড়ি ভাড়া বাবদ ২ লাখ ১৬ হাজার টাকা, ব্যবসা থেকে ২ লাখ ৪ হাজার ৭৮৩ টাকা।

নুরুল হুদা মুকুটের ব্যবসা থেকে আয়কৃত ব্যাংকে জমা ৭ লাখ ৮ হাজার ৫৯৬ টাকা, সম্মানীভাতা ৬ লাখ ৪৮ হাজার, অন্যান্যখাতে মূলধনী মুনাফা ২২ লাখ ২৫ হাজার ৮৪৯ টাকা।

তার অস্থাবর সম্পদের মধ্যে রয়েছে নগদ টাকা ১ কোটি ১৪ লাখ ৩৯ হাজার ৩৯১ টাকা, স্ত্রীর নামে নগদ দেখিয়েছেন ৯ লাখ ৯৩ হাজার টাকা, আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমাকৃত অর্থের পরিমাণ ৫৪ লাখ ৭২ হাজার ৪১৬ টাকা, বন্ড, ঋণপত্রে দেখিয়েছেন ১ কোটি ২৭ লাখ ৭৩ হাজার ৮৭৬ টাকা, ২৯ লাখ ৩০ হাজার টাকা মূল্যের গাড়ি রয়েছে। স্বর্ণালঙ্কার নিজ নামে ৫০ হাজার, স্ত্রীর নামে ১ লাখ ২০ হাজার টাকার, ইলেক্ট্রনিক সামগ্রী ও আসবাবপত্র স্ত্রীর নামে ২ লাখ টাকা, ব্যবসায়িক আসবাবপত্র ও মূলধন ২০ লাখ ৫৫ হাজার ৪৮৬ টাকা এবং এ খাতে স্ত্রীর নামে ২২ লাখ ৬৫ হাজার টাকা।

এছাড়া নুরুল হুদা মুকুট কৃষিজমি নিজ নামে ৬.৩৯১৫ একর এবং অকৃষি দশমিক ১৭৫ একর, স্ত্রীর নামে আছে ৫ কাটা, চারতলা বাড়ি ৭২০০ বর্গফুটের ও অ্যাপার্টমেন্ট রয়েছে ৭২০০ বর্গফুটের। স্ত্রীর নামে নির্মাণাধীন ৫ তলা বাড়ি দেখিয়েছেন হলফনামায়।

পক্ষান্তরে পেশায় আইনজীবী মো. খায়রুল কবির রুমেন হলফনামায় নগদ অর্থ সম্পদের পরিমাণ উল্লেখ করেছেন সর্বসাকূল্যে ১ কোটি ৩৭ লাখ ৫০ হাজার টাকার।

শিক্ষায় এমএসসি পাস রুমেনের বিরুদ্ধে কোনো মামলা নেই। আইন পেশা থেকে তার বার্ষিক আয় ৯ লাখ ৫০ হাজার টাকা। অস্থাবর সম্পদের মধ্যে নগদ টাকা ৬৪ লাখ ৮১ হাজার ২৪১ টাকা, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমাকৃত অর্থের পরিমাণ ২৩ লাখ ১৮ হাজার ৭৫৯ টাকা, সঞ্চয়পত্রে আছে ২০ লাখ টাকা, গাড়ির সংখ্যা উল্লেখ না করলেও দাম দেখিয়েছেন ২০ লাখ টাকা, দু’টি ব্যাংকে ঋণের পরিমাণ দেখিয়েছেন ৬০ লাখ টাকা।

স্থাবর সম্পত্তির মধ্যে রুমেন উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্য সম্পদ থাকলেও তা ভাগবাটোয়ারা হয়নি। আর অকৃষি জমি নিজ নামে হেবা সূত্রে পাওয়া ১১০ শতক, আবাসিক ও বাণিজ্যেক প্রতিষ্ঠান উত্তরাধিকারী সূত্রে মালিক থাকলেও ভাগবাটোয়ারা হয়নি উল্লেখ করেন হলফনামায়।

নির্বাচন কমিশনের তফসিল অনুযায়ী গত ১৮ সেপ্টেম্বর মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই সম্পন্ন হয়। প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ সময় ২৫ সেপ্টেম্বর এবং ২৬ সেপ্টেম্বর প্রতীক বরাদ্দ হবে। এরপর আগামী ১৭ অক্টোবর সিলেট বিভাগের চারটিসহ দেশের ৬১টি জেলা পরিষদের ভোট অনুষ্ঠিত হবে।