এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ

শান্তির জনপদ কলঙ্কিত হবার একবছর

শান্তির জনপদ কলঙ্কিত হবার একবছর

শান্তির জনপদ হিসেবে সিলেটের পরিচিতি। নানা কারণে সিলেটকে সম্মান আর শ্রদ্ধার প্রথম কাতারে রাখেন দেশবাসী। তবে আজ থেকে ঠিক এক বছর আগে এ জনপদে এক কলঙ্কের দাগ লাগে। এ দিন সিলেটের ঐতিহ্যবাহী মুরারীচাঁদ (এমসি) কলেজের ছাত্রাবাসের ভেতরে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের এক কলঙ্কজন ঘটনা ঘটে। আজ তার এক বছর পূর্ণ হলো।

ঠিক এক বছর আগে কলেজের মূল ফটকের সামনে থেকে এক তরুণীকে ধরে নিয়ে ছাত্রাবাসের ভেতরে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ করা হয়েছিল। তরুণীর সঙ্গে ছিলেন তার স্বামীও। স্বামীকে বেঁধে তার সামনেই ধর্ষণ করা হয় স্ত্রীকে। ২০২০ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর রাতে ঘটেছিল এমন ঘটনা। তবে নানা জটিলতা আর আইনি মারপ্যাচে এক বছরেও শুরু হয়নি দেশ-বিদেশে আলোড়ন তোলা এই ঘটনার বিচার।

ধর্ষণে অভিযুক্তরা হলেন- সাইফুর রহমান, শাহ মাহবুবুর রহমান ওরফে রনি, তারেকুল ইসলাম ওরফে তারেক, অর্জুন লস্কর, আইনুদ্দিন ওরফে আইনুল ও মিসবাউল ইসলাম ওরফে রাজন, রবিউল ইসলাম ও মাহফুজুর রহমান ওরফে মাসুম। আট আসামিই বর্তমানে কারাগারে আছেন। তারা সবাই ছাত্রলীগের কর্মী হিসেবে পরিচিতি।

অভিযুক্ত ৮ জনকেই কলেজ কর্তৃপক্ষ স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করে। এরপর জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ও এই ৪ জনের ছাত্রত্ব ও সার্টিফিকেট বাতিল করে।

আইনজীবীরা বলছেন, করোনার কারণে আদালতের কার্যক্রম বন্ধ থাকায় এই মামলার কার্যক্রমে গতি পায়নি। সম্প্রতি মামলাটি দ্রুত বিচার ট্রাইবুন্যালে স্থানান্তর করে গেজেট প্রকাশ করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এবার দ্রুত এই মামলার বিচার শুরু হবে বলে আশা করা যাচ্ছে।

ধর্ষণের ঘটনার ভক্তভোগীর স্বামী বাদী হয়ে নগরের শাহপরান থানায় ধর্ষণ মামলা করেন। এ ছাড়া ওই রাতে ছাত্রাবাস থেকে অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনায় চাঁদাবাজি ও অস্ত্র আইনে আরেকটি মামলা করে পুলিশ। গত বছরের ২২ নভেম্বর অস্ত্র ও চাঁদাবাজি মামলার অভিযোগপত্র জমা দেয় পুলিশ। এরপর ধর্ষণ মামলায় গত বছরের ৩ ডিসেম্বর ৮ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দেয়া হয়।

চলতি বছরের ১৭ জানুয়ারি সিলেটের নারী ও শিশু নির্যাতন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. মোহিতুল হক চৌধুরী মামলার অভিযোগ গঠন করে বিচার কাজ শুরু করেন। অভিযোগ গঠনের পর ২৭ জানুয়ারি মামলার সাক্ষ্য গ্রহণের দিন ধার্য করেছিল আদালত। তবে ধর্ষণ ও চাঁদাবাজির দুটি মামলা একসঙ্গে একই আদালতে চালানোর জন্য উচ্চ আদালতে আবেদন করে বাদীপক্ষ।

এ আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত ৭ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্টের বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের ভার্চুয়াল বেঞ্চ মামলা দুটির বিচার কার্যক্রম একসঙ্গে একই আদালতে সম্পন্নের আদেশ দেন।

এর মধ্যে জেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কার্যক্রম দ্রুত সম্পন্নের লক্ষ্যে মামলাটির দ্রুত বিচার ট্রাইবন্যালে স্থানান্তরের জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করা হয়। এ আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এই মামলা দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তর করে গেজেট প্রকাশ করে।

এরপরই করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় বন্ধ হয়ে যায় আদালতের কার্যক্রম। ফলে এখন পর্যন্ত স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের গেজেটের কপি আদালতে এসে পৌঁছায়নি। আদালতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের গেজেটের কপি পৌঁছলে নতুন করে অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে এই মামলার বিচার শুরু হবে বলে জানিয়েছেন আইনজীবীরা।

মামলার বাদী পক্ষের আইনজীবী শহিদুজ্জামান চৌধুরী জানান, নারী ও শিশু নির্যাতন ট্রাইব্যুনালে ধর্ষণ মামলার অভিযোগ গঠন করা হয়েছিল। তবে আমরা ধর্ষণ ও চাঁদাবাজির দুটি মামলা একইসঙ্গে একই আদালতে চালানোর জন্য উচ্চ আদালতে আবেদন করি। আদালত আমাদের পক্ষে নির্দেশনা দিয়েছে। এরপর মামলাটি দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তর করা হয়।

তিনি বলেন, এখন নতুন আদালতে নতুন করে মামলাগুলোর অভিযোগ গঠন করতে হবে। অভিযোগ গঠনের পর বিচার শুরু হবে।