শোকে পাথর বাবার কাঁধে ফ্রান্সফেরত ছেলের লাশ

শোকে পাথর বাবার কাঁধে ফ্রান্সফেরত ছেলের লাশ

ফ্রান্সে খুন হওয়ার দেড়মাস পর মৌলভীবাজার বড়লেখার কাওছার হামিদ আলীর (৩৫) লাশ দেশে এসে পৌঁছেছে। আলী বড়লেখা পৌরসভার পানিধার এলাকার বাসিন্দা আবুল হোসেনের ছেলে। 

সোমবার (৫ ডিসেম্বর) ভোরে ঢাকার হযরত শাহ্জালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে একটি ফ্লাইটে আলীর লাশ এসে পৌঁছায়। বিমানবন্দরে একমাত্র ছেলের কফিনবন্দি লাশ দেখে কান্নায় ভেঙে পড়েন আলীর বাবা আবুল হোসেন। সকাল আটটায় লাশ গ্রহণ করে অসহ্য শোকের পাথর বুকে চেপে ছেলের কফিনবন্দি লাশ নিয়ে বাড়ির পথে রওয়ানা দেন তিনি।

ফ্রান্সে আইনি প্রক্রিয়া শেষে গত শুক্রবার (২ ডিসেম্বর) তার লাশ বিমানে দেশের উদ্দেশ্যে পাঠানো হয়।  

সোমবার সন্ধ্যায় লাশ বাড়িতে পৌঁছার পর এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। কান্নায় ভেঙে পড়েন আলীর মা-বাবা ও স্বজনেরা। যে ছেলেকে একদিন কোলেপিঠে বড় করেছেন। উচ্চশিক্ষা গ্রহণের জন্য বিদেশে পাঠিয়েছিলেন। সেই ছেলের কফিনেবন্দী লাশ দেশে ফিরবে তা হয়তো ঘুণাক্ষরেও ভাবেননি মা-বাবা। এসময় আলীকে শেষবারের মতো দেখতে ভীড় করেন পাড়া-প্রতিবেশীরা। 

সোমবার বাদ মাগরিব বড়লেখার কোর্ট চত্ত্বর এলাকায় জানাজা শেষে আলীর লাশ গ্রামের (পুরোনো) বাড়ি বিয়ানীবাজারে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে দ্বিতীয় জানাজা শেষে তার লাশ দাফন করা হবে বলে স্বজনরা জানিয়েছেন। 

জানা গেছে, উচ্চশিক্ষার স্বপ্ন নিয়ে প্রায় ১২ বছর আগে লন্ডনে পাড়ি জমান কাওছার হামিদ আলী। সেখান থেকে প্রায় সাত বছর পর আলী পাড়ি জমান ফ্রান্সে। এরমধ্যে কেটে গেছে প্রায় একযুগ। আলীর আর বাড়ি ফেরা হয়নি। আলীর হয়তো স্বপ্ন ছিলো প্রতিষ্ঠিত হয়ে কোনো একদিন দেশে ফিরবেন। দেশে ফিরে হয়তো বিয়ে করে নতুন স্বপ্ন বুনবেন। বাবা-মাও একমাত্র ছেলেকে নিয়ে হয়তো এমন স্বপ্ন দেখছিলেন। কিন্তু কারোরই স্বপ্ন আর পূরণ হবে না কোনোদিন। 

জানা গেছে, গত ২০ সেপ্টেম্বর রাতে প্যারিসের মাখদরমি এলাকায় উবারের আইডি নিয়ে বাকবিণ্ডার এক পর্যায়ে কয়েকজন যুবক কাওছার হামিদ আলীকে ঘাড়ে আঘাত করে পরে ধাক্কা দিয়ে সড়কের ওপর ফেল দেয়। পরে আহত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে সেখনকার একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ২৩ দিন তিনি কোমাতে থাকাবস্থায় ১৩ অক্টোবর মারা যান। ২০ অক্টোবর ফ্রান্সে বাংলাদেশ দূতাবাসের মাধ্যমে আলীর মৃত্যুর বিষয়টি জানতে পারে তার পরিবার। শুরুতেই আলীর মৃত্যু নিয়ে রহস্যের সৃষ্টি হয়। পরে তাকে হত্যার অভিযোগ ওঠে। 

ফ্রান্সের সিনিয়র সাংবাদিক নূরুল ওয়াহিদ জানিয়েছেন, আলীর মৃত্যুরে ঘটনায় জড়িতরা পলাতক রয়েছেন। তাদের গ্রেপ্তারে জন্য ফ্রান্সের পুলিশ অভিযান চালাচ্ছে। এর আগে গত ২১ অক্টোবর সিনিয়র এই সাংবাদিক জানিয়েছিলেন, ফ্রান্সে নিযুক্ত বাংলাদেশ দূতাবাসের সচিব শারহাদ শাকিল আমাকে নিশ্চিত করেছেন যে ফ্রান্সের পুলিশ তাকে জানিয়েছে, কাওছার হামিদ আলী দুর্ঘটনায় মারা যায়নি; তাকে হত্যা করা হয়েছে। তিনি বলেন, হত্যাকারীরা আলীর নিজ এলাকা বড়লেখা ও কুলাউড়ার বলে তিনি নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানতে পেরেছেন। তাদের নাম-পরিচয়ও তিনি জেনেছেন।  

এদিকে আলীর মৃত্যুর খবরে দেশ-বিদেশে অনেকে ফেসবুকে শোক প্রকাশ করে স্ট্যাটাস শোয়ার করেন। তারাও আলীকে হত্যার ঘটনায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চান।