শ্রীমঙ্গলে টি টেস্টিং কোয়ালিটি কন্ট্রোল প্রশিক্ষণের উদ্বোধন

শ্রীমঙ্গলে টি টেস্টিং কোয়ালিটি কন্ট্রোল প্রশিক্ষণের উদ্বোধন

সোলেমান আহমেদ মানিক, শ্রীমঙ্গল || মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে টি টেস্টিং ও কোয়ালিটি কন্ট্রোল প্রশিক্ষণ কোর্সের উদ্বোধন করা হয়েছে। 

রবিবার সকাল ১০টায়  বাংলাদেশ চা বোর্ডের শ্রীমঙ্গলস্থ প্রকল্প উন্নয়ন ইউনিটে (পিডিইউ) চা উৎপাদন এবং ব্যবসার সাথে জড়িত ব্যক্তিদের দক্ষতা উন্নয়নকল্পে পিডিইউ-এর পরিচালক ড. এ, কে, এম, রফিকুল হক এর সভাপতিত্বে আয়োজিত “টি টেস্টিং এন্ড কোয়ালিটি কন্ট্রোল” প্রশিক্ষণ কোর্সের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন চা বোর্ডের চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল মো. আশরাফুল ইসলাম, এনডিসি, পিএসসি। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ চা গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) ড. মো. ইসমাইল হোসেন, বাংলাদেশীয় চা সংসদের চেয়ারম্যান এম শাহ আলম। এছাড়া অন্যান্যদের মাঝে উপস্থিত ছিলেন , বাংলাদেশীয় চা সংসদ কমিটির সদস্য, তাহসিন আহমেদ চৌধুরী, ফিনলের ভাড়াউড়া ডিভিশনের জেনারেল ম্যানেজার জি এম শিবলী, ইস্পাহানির জেরিন চা বাগানের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার সেলিম রেজা চৌধুরীসহ বিভিন্ন চা বাগানে কর্মরত সিনিয়র প্লান্টার্স, বিভিন্ন টি ভ্যালীর চেয়ারম্যানবৃন্দ, ব্রোকার্স হাউজের অভিজ্ঞ টি টেস্টারগণ এবং বিটিআরআই ও পিডিইউ-এর বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাগণসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা চা শিল্পের সাথে জড়িত প্রায় ১২০ জন ব্যক্তিবর্গ।

আয়োজিত টি টেস্টিং ও কোয়ালিটি কন্ট্রোল প্রশিক্ষণ কোর্সের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ টি বোর্ডের উন্নত উদ্ভাবনী বিভিন্ন প্রকার চায়ের ডিসপ্লে করা হয়।  এরমধ্যে বিটিআরআই ক্লোন-১ থেকে বিটিআরাই ক্লোন-২৩ পর্যন্ত ডিসপ্লেতে ছিল। এছাড়াও বিশেষ উন্নত মানের ১১ টি কোয়ালিটি ডিসপ্লে করা হয়। এরমধ্যে বাংলাদেশ টি বোর্ডের একেবারে নতুন জাতের উদ্ভাবনী চা ছিল হোয়াইট-টি  ইয়েলো-টি । হোয়াইটটি বাজারজাত করা হলে দেশের বাজারে প্রতি কেজি ২০ থেকে ২৮ হাজার টাকা এবং ইয়েলো-টি ৫ থেকে ১০ হাজার টাকায় বিক্রি করা যাবে বলে জানা গেছে। টি বোর্ড সূত্রে আরও জানা যায়, এসব উন্নত মানের চা বিদেশের বাজারে লাখ টাকার উপরে প্রতি কেজি চা বিক্রি হয়।
 
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তৃতায় বিটিআরআই-এর পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) ড. মো. ইসমাইল হোসেন বলেন, টি টেস্টিং এন্ড কোয়ালিটি কন্ট্রোল কোর্সটি সত্যিকার-অর্থে টি ইন্ডাস্ট্রির জন্য একটি খুবই প্রয়োজনীয় কোর্স। এমন একটি কোর্স আয়োজনের বিষয়ে টি বোর্ডের চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ চা বোর্ড কর্তৃক নির্দেশনা প্রদান করায় আমি উনার প্রতি ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি। 

বাংলাদেশীয় চা সংসদ কমিটির সদস্য, তাহসিন আহমেদ চৌধুরী বলেন,  টি টেস্টিং এন্ড কোয়ালিটি কন্ট্রোল কোর্সে অংশগ্রহণকারীরা বিশেষ করে বিভিন্ন চা বাগানের ব্যবস্থাপক ও সহকারী ব্যবস্থাপক। যারা চা ‍উৎপাদনের সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত রয়েছে,  উন্নত মানের চা উৎপাদন তাদের জন্য সহজতর হবে। এছাড়া তিনি গুণগতমানের চা উৎপাদনের বিষয়ে অত্মনিয়োগ করতে সংশ্লিষ্টদের প্রতি জোর আহবান জানান।

বাংলাদেশীয় চা সংসদের চেয়ারম্যান, এম শাহ আলম বলেন, টি টেস্টিং কোর্সটি একটি সময় উপযোগী কোর্স এবং আমি বিশ্বাস করি যে, কোর্সটি সম্পন্ন করার পর অংশগ্রহণকারীগণ টি টেস্টিং-এর বিষয়ে প্রাতিষ্ঠানিক দক্ষতা অর্জন করতে সক্ষম হবে।  চা শিল্পের উন্নয়নে বিশেষ অবদান রাখতে পারবে তারা।

অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি চা বোর্ডের চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল মো. আশরাফুল ইসলাম জানান, “বাংলাদেশে এখন চায়ের উৎপাদন ক্রমবর্ধমান পর্যায়ে রয়েছে। বর্তমানে দেশের অভ্যন্তরীণ চাহিদার তুলনায় আমাদের চায়ের উৎপাদন বেশি হচ্ছে। আমরা এখন চিন্তা করছি, চা রপ্তানির পুরনো ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে হবে। সেজন্য আমরা বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণ করছি। চা রপ্তানির ক্ষেত্রে কোয়ালিটি চা উৎপাদনের কোন বিকল্প নেই। আমাদের টি প্লান্টার’সগণ টি টেস্টিং বিষয়টি ইনফরমালি শিখে থাকেন। এ বিষয়ে প্রাতিষ্ঠানিক কোর্স করানোর জন্য বাংলাদেশ চা বোর্ড থেকে ইতিমধ্যে উদ্যোগ গ্রহণ করে ২টি কোর্স সফলতার সাথে সম্পন্ন করা হয়েছে। গুণগতমানের চা উৎপাদনের ধারা অব্যাহত রাখার জন্য কোর্সটি চলমান রাখা হয়েছে। চা বোর্ডের চেয়ারম্যান হিসেবে আশা করছি কোর্সে অংশগ্রহণকারীগণ প্রাতিষ্ঠানিকভাবে টি টেস্টিং বিষয়ে দক্ষতা অর্জন করতে সক্ষম হবেন। এবং আমি প্রত্যাশা করছি  চা শিল্পের সাথে সম্পৃক্ত অংশীজনদের আন্তরিক অংশগ্রহণে বাংলাদেশের চা শিল্প উত্তর উত্তর সমৃদ্ধ হবে। কোর্সটির শুভ ‍উদ্বোধন ঘোষণা করেন চা বোর্ডের চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল মো: আশরাফুল ইসলাম।

সভাপতির বক্তব্যে  পিডিইউ-এর পরিচালক ড. এ, কে, এম, রফিকুল হক বলেন, বাংলাদেশে বর্তমানে ১৬৭টি চা বাগানে প্রায় ৮০০০ জন ক্ষুদ্র চা চাষী রয়েছেন। এসব চা বাগানের মোট আয়তন ২৭৯৪৩৯.৬৩ একর। এর মধ্যে চা চাষের জমি রয়েছে ১৫৪৫১৫.৭৯ একর। তিনি আরও জানান, দেশে চায়ের উৎপাদন দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। দেশের আভ্যন্তরীণ চাহিদা মিটিয়ে ঐতিহ্যবাহী রপ্তানীমূখী এ চা শিল্পের উৎপাদনের কিয়দংশ বিদেশে রপ্তানী করে মূল্যবান বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করার লক্ষ্যে কাজ করছে বাংলাদেশ চা বোর্ড। তারই ধারাবাহিকতায় গুণগত মানের চা উৎপাদন এবং উৎপাদিত চায়ের মান যাচাইয়ের লক্ষে দক্ষ টি টেস্টার তৈরির জন্য প্রাতিষ্ঠানিক এ কোর্সের আয়োজন করেছে বাংলাদেশ চা বোর্ডের প্রকল্প উন্নয়ন ইউনিট।