সাবেক এমপি শাহীনুর পাশাসহ হেফাজতের যেসব নেতার সম্পদের তথ্য চায় দুদক

সাবেক এমপি শাহীনুর পাশাসহ হেফাজতের যেসব নেতার সম্পদের তথ্য চায় দুদক

হেফাজতে ইসলামের বিলুপ্ত কমিটির আমির জুনায়েদ বাবুনগরী ও আইনবিষয়ক সম্পাদক সাবেক সাংসদ শাহীনুর পাশা চৌধুরীসহ সংগঠনটির বিভিন্ন পর্যায়ের ৪৬ জন নেতা-কর্মীর সম্পদের তথ্য চেয়ে সরকারের ৪টি দপ্তরে চিঠি দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

দুদকের পরিচালক মো. আকতার হোসেন সোমবার (২৪ মে) এই চিঠি পাঠান।

সরকারি দপ্তরগুলো হচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিট (বিএফআইইউ), চার জেলার (ঢাকা, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ ও নেত্রকোনা) পুলিশ সুপার, তিন থানার (ফটিকছড়ি, হাটহাজারী ও পটিয়া) সহকারী কমিশনার (ভূমি) এবং ঢাকা জেলা রেজিস্ট্রার। সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও ঢাকা জেলা রেজিস্ট্রারকে পাঠানো চিঠিতে হেফাজত নেতাদের পরিচালিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জমির দাগ, খতিয়ানসহ নথি চাওয়া হয়েছে।

এছাড়া বিএফআইইউ-এর প্রধানকে পাঠানো চিঠিতে সবার ব্যাংক হিসাবের তথ্য-উপাত্ত চাওয়া হয়েছে।

জুনায়েদ বাবুনগরী ও শাহীনুর পাশা চৌধুরী ছাড়া যেসব নেতার অবৈধ সম্পদের খোঁজে দুদকের এই তৎপরতা শুরু হয়েছে, তাঁরা হলেন হেফাজতে ইসলামের সাবেক কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির আহমেদ আবদুল কাদের ও মাহফুজুল হক, যুগ্ম মহাসচিব জুনাইদ আল হাবিব, মামুনুল হক, নাসির উদ্দিন মনির, জালাল উদ্দিন, অর্থ সম্পাদক মনির হোসাইন কাসেমী, সাংগঠনিক সম্পাদক আজিজুল হক ইসলামবাদী, সহকারী মহাসচিব ফজলুল করিম কাসেমী ও আজাহারুল ইসলাম, মুসা বিন ইসহাক, সহসাংগঠনিক সম্পাদক আতাউল্লাহ আমিন ও সাখাওয়াত হোসাইন রাজী, মীর মুহাম্মদ ইদ্রিস, সহকারী অর্থ সম্পাদক মুহাম্মদ আহসান উল্লাহ, শিক্ষা ও সংস্কৃতি সম্পাদক হারুন ইজাহার, সহকারী আন্তর্জাতিক সম্পাদক শোয়াইব আহমেদ, সহকারী প্রচার সম্পাদক কামরুল ইসলাম কাসেমী, ইসলামি বক্তা খালেদ সাইফুল্লাহ আইয়ুবী, নুর হোসাইন নুরানী, মাহমুদুল হাসান গুনবী, হেফাজত আমিরের ব্যক্তিগত সহকারী ইনামুল হাসান ফারুকী, কেন্দ্রীয় নেতা জাকারিয়া নোমান, আজহারুল ইসলাম, কামরুল ইসলাম কাসেমী, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জামিয়া ইউনুছিয়া মাদ্রাসার শিক্ষাসচিব আবদুর রহিম কাসেমী, ওই মাদ্রাসার শিক্ষক মুহসিনুল করিম, জামিয়া ইসলামিয়া হলিমিয়া মধুপুর মাদ্রাসার নায়েবে মুহতামীম ওবায়দুল্লাহ কাসেমী, মধুপুরের পীরের ছেলে আবু আম্মার আবদুল্লাহ, হেফাজতের কর্মী মো. আহম্মেদ কাশেমী, এহসানুল হক, রাবেতাতুল ওয়ায়েজিনের সাধারণ সম্পাদক হাসান জামিল, জাতীয় ওলামা মাশায়েখ পরিষদের সভাপতি খলিলুর রহমান মাদানি, আশরাফ উদ্দিন মাহদি (মুফতি ফজলুল হক আমিনীর নাতি, বর্তমানে মিশরপ্রবাসী), মোহাম্মদ উল্লাহ জামি, বাহিরদিয়া মাদ্রাসার অধ্যক্ষ শাহ আকরাম আলী, শামসুল উলুম মাদ্রাসার অধ্যক্ষ কামরুজ্জামান, সদস্য কেফায়েত উল্লাহ, জয়নাল আবেদীন ও সামছুল ইসলাম জিলানী, গাজী ইয়াকুব ওসমানী, আসাদুল্লাহ আসাদ, আলী হাসান উসামা ও আসাদুল্লাহ অসাদ। তাঁদের মধ্যে অনেকে সহিংসতার মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে আছেন।

দুদক সূত্রে জানা গেছে, এ বিষয়ে অনুসন্ধানের জন্য ১৭ মে দুদক পরিচালক মো. আকতার হোসেনকে প্রধান করে ছয় সদস্যের একটি দল গঠন করা হয়। অন্য সদস্যরা হলেন উপপরিচালক মো. জাহাঙ্গীর আলম ও মোহাম্মদ নুরুল হুদা, সহকারী পরিচালক মামুনুর রশীদ ও মো. সাইদুজ্জামান, উপসহকারী পরিচালক মো. সহিদুর রহমান।

এ বিষয়ে অনুসন্ধান দলের সদস্য ও দুদকের উপপরিচালক মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, অনুসন্ধান দল তথ্য-উপাত্ত যাচাই-বাছাই করবে। তারপর যেসব অভিযোগ সুনির্দিষ্টভাবে আসবে, সেগুলোর তদন্ত হবে। যত দ্রুত সম্ভব, তদন্ত শেষ করা হবে।

এর আগে গত ৬ মে দিবাগত রাত ১২টার দিকে হেফাজতে ইসলাম নেতা মাওলানা শাহিনুর পাশা চৌধুরী (৬৭)কে গ্রেপ্তার করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। তার গ্রামের বাড়ি সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলার পাটলী ইউনিয়নের পাটলী গ্রামে।

২০০৫ সালে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুস সামাদ আজাদের মৃত্যুর পর ওই বছরের ২০ জুলাই সুনামগঞ্জ-৩ আসনে উপনির্বাচনে চারদলীয় জোটের প্রার্থী হিসেবে প্রথমবারের মতো ১৪ মাসের জন্য সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন মাওলানা শাহিনুর পাশা চৌধুরী। এরপর ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগের প্রার্থী এম এ মান্নানের সঙ্গে পরাজিত হন।