সিলেটে সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ

সিলেটে সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ

দুর্গাপূজা চালাকালে দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস, হিন্দুদের পূজামণ্ডপ ও বাড়িঘরে হামলা-লুটপাটের প্রতিবাদে সিলেটে বিক্ষোভ করেছে সংক্ষুব্দ নাগরিক আন্দোলন।

যার ব্যানারে লেখা ছিলো্- 'দুর্গপূজা উদযাপনকালে সংঘঠিত ঘটনায় আমরা ব্যথিত, লজ্জ্বিত ও ক্ষুব্ধ'।

বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তাদের কথায়ও ফুটে ওঠে- এই লজ্জ্বা আর ক্ষোভ। সকলের কণ্ঠেই একই সুর- মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত এই দেশ কোনো বিশেষ ধর্মের নয়। সবার সমান  অধিকার রয়েছে এই দেশে। সেই অধিকার নিশ্চিত করতে হবে।

শনিবার বিকেলে নগরের রিকাবীবাজার এলাকার কবি নজহরুল অডিটরিয়ামের সামনে এই বিক্ষোভ কর্মসূচী থেকে এসব তান্ডবের সাথে জড়িত সকলে চিহ্নিত করে দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবি জানানো হয়। একই সঙ্গে দেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা নিশ্চিতেরও দাবি জানান বক্তারা।

বিক্ষোভ সমাবেশের পর রিকাবীজার থেকে মিছিল নগরের চৌহাট্টা এলাকায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার পর্যন্ত মিছিল করা হয়।

বিক্ষোভ সমাবেশের স্বাগত বক্তব্যে সংক্ষুব্দ নাগরিক আন্দোলন সিলেটের সমন্বয়ক আব্দুল করিম কিম বলেন, গত তিনদিন দেশে যে ন্যাক্কারজনক ঘটনা ঘটেছে তাতে এই দেশের একজন নাগরিক হিসেবে, একজন মুসলমান হিসেবে আমি লজ্জ্বিত ও ব্যথিত।

তিনি বলেন, দুর্গা পূজা হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রধান ধর্মীয় উৎসব। কিংন্তু এইবার তারা আনন্দের সাথে উৎসব করতে পারেননি। তারা ভয়ে ছিলেন। অনেকে আক্রান্ত হয়েছেন। মণ্ডপ ভাংচুর হয়েছে। দেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জন্য আমরা একটি ভীতিকর পরিস্থিতি তৈরি করেছি। তাদের ধর্মচর্চার অধিকারকেও আমরা হরণ করছি। এই দায় রাষ্ট্রের, এই দায় আমারও।

ইসলাম ধর্ম কখনোই এ ধরণের হামলা-লুটপাট সমর্থন করে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, যারা এই তান্ডব চালিয়েছেন তারা পবিত্র ইসলাম ধর্মকেও অপমান করেছেন।

কিম বলেন, কোরআনের শরীফ অবমাননার যে অভিযোগ আনা হয়েছে তা আমাকেও ক্ষুব্দ করেছে। কিন্তু এই ঘটনার জের ধরে সারাদেশে যে তান্ডব চালানো হয়েছে। হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষদের উপর হামলা চালানো হয়েছে তা এককথায় বর্বোরোচিত। কোনো সভ্য দেশে, কোনো বিবেকমান মানুষ এধরণের ঘটনা ঘটনাতে পারে না।

এই ন্যাক্কাজনক ঘটনার শক্ত প্রতিবাদ হওয়া উচিত। একই সঙ্গে যারা এসব তান্ডবের সাথে জড়িত তাদের চিহ্নিত করে দ্রুত বিচারের মুখোমুখি করতে হবে। যাতে আগামীতে আর কেউ এমন ঘটনা ঘটাতে না পারে। আমাদের সম্প্রীতিতে আঘাত করতে না পারে,- বলেন কিম।

সাংবাদিক আলিম শাহ-এর সঞ্চালনায় এতে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন সম্মিলিত নাট্য পরিষদ সভাপতি মিশফাক আহমদ মিশু, তথ্যচিত্র নির্মাতা নিরঞ্জন দে যাদু, লেখক-গবেষক শাহরিয়ার বিপ্লব, বাসদ (মার্কসবাদী) সিলেট জেলা সমন্বয়ক উজ্জ্বল রায়, ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া জার্নালিষ্ট এসোসিয়েশনের সভাপতি বাপ্পা ঘোষ চৌধুরী, সহ-সভাপতি মইনুদ্দিন মঞ্জ, সিলেট জেলা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ছামির মাহমুদ, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সিলেট মহানগর শাখার তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক এডভোকেট গোলাম সোবহান চৌধুরী, দুষ্কাল প্রতিরোধ আন্দোলনের সংগঠক দেবাশীষ দেবু, শিক্ষক ও সংগঠক প্রণবকান্তি দেব, লেখক সাংবাদিক শামস শামীম  বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন সিলেট জেলার সাধারণ সম্পাদক মো. নাবিল এইচ,  সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট সিলেট নগরের সভাপতি সঞ্জয় কান্ত দাস প্রমুখ।

সমাবেশে অংশগ্রহন করেন সমাজকর্মী ফকির জাকির হোসেন সোহেল, দরগা-ই-হযরত শাহজালাল (রহঃ) এর খাদেম মুজাহিদ হোসেন মুনিম, মদন মোহন বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের শিক্ষক উজ্জ্বল দাস, সংগঠক মাহবুব রাসেল,  শিক্ষক সুমন রায়, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের কর্মী ওয়াজিহ আহমেদ ও রুবেল মিয়া, নাট্যকর্মী রুবেল আহমদ কুয়াশা, তন্বী দেব প্রমুখ।