সিরিজ জয়ের হাতছানি টাইগারদের

সিরিজ জয়ের হাতছানি টাইগারদের

অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে প্রথম টি-টোয়েন্টি সিরিজ জয়ের হাতছানি টাইগারদের। পাঁচ ম্যাচ সিরিজে ২-০ ব্যবধানে এগিয়ে লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা। শুক্রবার তৃতীয় ম্যাচ জিতলেই সিরিজ বাংলাদেশের। প্রথম ম্যাচে ২৩ রানে জয়ের পর দ্বিতীয় ম্যাচে ৫ উইকেটে জিতেছে রাসেল ডমিঙ্গোর শিষ্যরা। সিরিজ বাঁচাতে শুক্রবার ঘুরে দাঁড়াতে মরিয়া অস্ট্রেলিয়ানরা বৃহস্পতিবার দুপুরে মিরপুরে কঠোর অনুশীলন করেছে। অন্য দিকে বিশ্রামে থাকা টাইগাররা বৃহস্পতিবার সিরিজ জয়ের ছক কষেছে।

বাংলাদেশের বিপক্ষে প্রথম দুই ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ান ব্যাটসম্যানদের মধ্যে মিচেল মার্শ ছাড়া কারো ব্যাটেই রান নেই। দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান হেনড্রিকস ২৫ বলে ৩০ রান করেছেন। এছাড়া ওপেনার অ্যালেক্স ক্যারি, জোসে ফিলিপে, অধিনায়ক ম্যাথু ওয়েড আর অ্যাস্টন টার্নাররা দুই ম্যাচের একটিতেও বিশের ঘরে যেতে পারেননি। মিরপুরের স্লো উইকেটে এসে মানিয়ে নিতে সমস্যা হচ্ছে অজিদের। এ সøথ গতির পিচে নিজেদের স্বাভাবিক ব্যাটিং যেন ভুলে গেছেন তারা। মারবেন না ঠেকাবেন, নাকি সিঙ্গেলস-ডাবলসে খেলবেন? তাই ঠাউরে উঠতে পারছেন না।

আর তাই পরপর দুই ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ানরা শুরু থেকেই পড়েছে চাপে। এই দুই ম্যাচে কোনো ব্যাটসম্যান পঞ্চাশের ঘরে পা রাখতে পারেননি। মিচেল মার্শই শুধু দুই খেলায় চল্লিশের ঘরে পা রেখেছেন।

বাকিরা বাংলাদেশের স্পিনারদের বলে রীতিমতো অস্বস্তিবোধ করছেন। সঙ্গে মোস্তাফিজের কাটার, সেøায়ার আর শরিফুলের হঠাৎ হঠাৎ ছোড়া স্লোয়ারে হতচকিত হয়েছেন অজি ব্যাটসম্যানরা। শুক্রবার বাঁচা-মরার লড়াইয়ে হারলে দুই ম্যাচ বাকি থাকতেই সিরিজ খোয়াবে অস্ট্রেলিয়া। তাই বিশ্রামের চিন্তা মাথা থেকে বাদ দিয়ে গরমের মধ্যে অনুশীলনে ঘাম ঝরিয়েছে অজিরা।

প্রথমবারের মতো অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে দ্বিপক্ষীয় সিরিজ জয়ের সুযোগ হাতছাড়া করতে চায় না মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ বাহিনী। তৃতীয় ম্যাচেই নিশ্চিত করতে চায় সিরিজ। তবে কাজটা কি এতটা সহজ হবে? প্রথম দুই ম্যাচের পারফরম্যান্স মূল্যায়ন করলে কাজটা সহজ হওয়ারই কথা। কিন্তু দলটা যখন অস্ট্রেলিয়া, তখন ভয় তো থাকেই।

বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন টাইগারদের সতর্ক করে বলেছেন, সিরিজ শুক্রবার জিতব কিনা বলা মুশকিল। অস্ট্রেলিয়া পেশাদার দল। ওরা শেষ পর্যন্ত লড়াই করবে, এ ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই। আমরা যেভাবে খেলে আসছি এবং আমাদের সর্বোচ্চটা দিয়ে যদি খেলতে পারি, আমি মনে করি আমাদের সিরিজ না জেতার কোনো কারণ নেই।’

তবে সিরিজ জয়ের আগে আত্মতৃপ্তিতে না ভোগার আহ্বান নাজমুলের, ‘আমরা যদি কখনো মনে করি, দুটি ম্যাচ জিতে গেছি, পরেরগুলোও জিতে যাব, তাহলে অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে আর জেতা যাবে না। অস্ট্রেলিয়া সেরকম দল না। এজন্য আমাদের সতর্ক থাকতে হবে।’ ব্যাটসম্যানদের থেকে আরো ধারাবাহিকতা চান বিসিবি প্রধান, এই সিরিজে বোলিং এবং ফিল্ডিং অনেক ভালো হয়েছে। ব্যাটিং কিন্তু ভালো হয়নি। আশা করি সামনে ভালো হবে আরো। আমার যেটা ভালো লেগেছে যে, মাঠে নামলেই জিততে পারি এবং জেতার জন্য খেলব- এই বিশ্বাস থাকা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। মাঝের একটি বছর একটু কেমন যেন হয়ে গিয়েছিল, এখন ঠিক হয়ে গেছে।’

শুক্রবার বাংলাদেশের বিপক্ষে তৃতীয় টি-টোয়েন্টি ম্যাচে অস্ট্রেলিয়া হেরে গেলে ২ ম্যাচ হাতে রেখেই সিরিজ জিতবে লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা। ইতোমধ্যে বাংলাদেশের বিপক্ষে অস্ট্রেলিয়ার বাজে পারফরম্যান্সের সমালোচনায় মেতেছে অস্ট্রেলিয়ান মিডিয়া। টানা দুই টি-টোয়েন্টি হারের পর অজি মিডিয়ায় তাদের দল এবং বোর্ডকে ধুয়ে দিচ্ছে। ডেভিড ওয়ার্নার, স্টিভেন স্মিথ, গ্লেন ম্যাক্সওয়েল, অ্যারন ফিঞ্চকে ছাড়া সফরে এসে অস্ট্রেলিয়া দল যে এভাবে ভেঙে পড়বে তা কেউ মানতে পারছে না।

পূর্ণশক্তির বোলিং অ্যাটাক নিয়ে এসেও গত দুই ম্যাচে বাংলাদেশের বিপক্ষে অজিরা ন্যূনতম প্রতিরোধও গড়তে পারেনি। অস্ট্রেলিয়ার শীর্ষ দৈনিক ‘সিডনি মর্নিং হেরাল্ড’ লিখেছে, ‘গত ৩০ বছরের মধ্যে এই প্রথম ছেলেদের জাতীয় দলের কোনো সিরিজ ব্ল্যাকআউট করা হয়েছে। মানে অস্ট্রেলিয়ায় সম্প্রচার করা হচ্ছে না। সেটি আসলে সফরকারী দলের খেলা দেখার লজ্জা পাওয়া থেকে বাঁচিয়ে দিচ্ছে। কারণ তাদের খেলা এতটাই বিরক্তিকর যে ঘরে বসে কেউ দেখতে চাইবে না।’

মুশফিকুর রহিমকে এই সিরিজে খেলাতে আপত্তি করেছিল অস্ট্রেলিয়া দল। যে কারণে তিনি জৈব সুরক্ষা বলয়ে ঢুকতে পারেননি। তার জায়গায় দারুণ করছেন নুরুল হাসান সোহান। এই বিষয়টার সমালোচনায় ‘সিডনি মর্নিং হেরাল্ড’ লিখেছে, ‘নুরুল উইকেটকিপিং করছে কারণ ওই পজিশনে বাংলাদেশের প্রথম পছন্দ মুশফিকুর রহিমকে জৈব সুরক্ষাবলয়ে ঢুকতে দেয়নি অস্ট্রেলিয়া। মুশফিকের বাবা-মা করোনায় আক্রান্ত হওয়ায় এই কাণ্ড। অস্ট্রেলিয়ার বিকল্প খেলোয়াড়রা যেখানে ব্যর্থ, সেখানে বাংলাদেশের বিকল্প খেলোয়াড়রা সামনে থেকে লড়েছেন।’

দ্বিতীয় ম্যাচে বাংলাদেশের ৫ উইকেটের জয়ে ব্যাট হাতে অন্যতম অবদান রেখেছেন নুরুল হাসান সোহান। দুই ম্যাচেই তার কিপিংও ছিল দুর্দান্ত। যে মিচেল স্টার্ক-জশ হ্যাজেলউডদের নিয়ে সব দল শঙ্কায় থাকে, বাংলাদেশি ব্যাটসম্যানদের কাছে তারা পাত্তাই পাচ্ছেন না। তাই ‘দ্য অস্ট্রেলিয়ান’ শিরোনাম করেছে- ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বাংলাদেশের কাছে দ্বিতীয় হারে অস্ট্রেলিয়ার টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ পরিকল্পনা ভুল পথে এগোচ্ছে।

দুই ম্যাচ জিতে ফুরফুরে মেজাজে থাকা টাইগাররা বৃহস্পতিবার ছিল বিশ্রামে। দুই ম্যাচ জিতলেও ওপেনিং নিয়ে টাইগারদের দুশ্চিন্তা রয়েছে। দুই ওপেনার সৌম্য সরকার আর নাইম শেখ এখন পর্যন্ত আস্থা ও আত্মবিশ্বাস নিয়ে ব্যাটিং করতে পারেননি। দুই ম্যাচেই দায়িত্ব নিয়ে খেলেছেন সাকিব আল হাসান। মিডল অর্ডারে তরুণ আফিফ হোসেন ধ্রুব, নুরুল হাসানরাও বেশ আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে মোকাবিলা করেছেন অস্ট্রেলিয়ার শক্তিশালী বোলিংকে।