সিলেট মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগ বাণিজ্য, দেখার কেউ নেই!

সিলেট মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগ বাণিজ্য, দেখার কেউ নেই!

সিলেট মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়। দেশের চতুর্থ মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে ২০১৮ সালে কার্যক্রম শুরু হয়। জস্ব ক্যাম্পাসের জন্য দক্ষিণ সুরমায় ১০০ একর জায়গা অধিগ্রহণ করা হয়েছে। নগরের চৌহাট্টায় অস্থায়ী ক্যাম্পাসে চলছে দাপ্তরিক কার্যক্রম।

এখন পর্যন্ত অবকাঠামো নির্মাণকাজ শুরু হয়নি না হওয়া এই প্রতিষ্ঠানে তেমন কোনো কার্যক্রম না থাকলেও তিন বছরে ১৭২ কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ দিয়ে ফেলেছে এই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। অনিয়ম ও স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে বেশির ভাগ নিয়োগের ঘটনা ঘটেছে। নিয়োগপ্রাপ্তদের অনেকের যোগ্যতা নিয়েও উঠেছে নানা প্রশ্ন।

অভিযোগ উঠেছে, অধিকাংশ নিয়োগ দেওয়া হয়েছে আর্থিক সুবিধা নিয়ে। প্রথম দফায় অস্থায়ী ভিত্তিতে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল, এরপর নিয়ম লঙ্ঘন করে কয়েক দফা মেয়াদও বৃদ্ধি করা হয়। এখন আবার টাকার বিনিময়ে তাদের কাউকে কাউকে স্থায়ী নিয়োগ দেওয়ার চেষ্টা চলছে।

সম্প্রতি ১৯টি পদে স্থায়ী নিয়োগের জন্য বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। অস্থায়ী নিয়োগপ্রাপ্তদের মধ্য থেকে কয়েকজন 'পছন্দের প্রার্থীকে' এসব পদে নিয়োগ দিতে বিশেষ সুবিধা দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। উপাচার্য ডা. মোর্শেদ আহমদ চৌধুরী এবং ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার মো. মঈনুল হক চৌধুরী নিয়োগ বাণিজ্যের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন বলে ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করেছেন।

বেশ কয়েকজন চাকরিপ্রার্থী দাবি করেন, কাঙ্ক্ষিত অর্থ দিতে না পারায় তাদের নিয়োগ দেওয়া হয়নি। অথচ বিধি অনুযায়ী বয়স বা শিক্ষাগত যোগ্যতা না থাকলেও কর্মকর্তা পদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। সব মিলে ১৭৮ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীর মধ্যে সিংহভাগ অর্থের বিনিময়ে নিয়োগ পেয়েছেন বলে অভিযোগ।

জানাগেছ, অধিকাংশ কর্মকর্তার বসার জন্য জায়গা বা টেবিল নেই। এ নিয়ে নানা অভিযোগ থাকলেও সংশ্নিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নানাভাবে ম্যানেজ করে চলছেন উপাচার্য।

২০১৮ সালের ১৪ নভেম্বর ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সাবেক অধ্যক্ষ ডা. মোর্শেদ আহমদ চৌধুরীকে সিলেট মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম উপাচার্য নিয়োগ দেওয়া হয়। অন্যদিকে, ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার হয়ে আসেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবি) সাবেক অতিরিক্ত পরিচালক (অর্থ) মঈনুল হক।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, এখন পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন পদে উপাচার্যের ১৩ জন আত্মীয় নিয়োগ পেয়েছেন। ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রারের আত্মীয়স্বজনও নিয়োগ পেয়েছেন। সিলেটে সরকারি-বেসরকারি মেডিকেল কলেজগুলো শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে থাকার সময় মাত্র দু'জন কর্মকর্তা সবকিছু দেখাশোনা করতেন বলে নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন কর্মকর্তা বলছেন, কোনো ধরনের পাঠদান বা দাপ্তরিক কার্যক্রমের চাহিদা ছাড়া বিপুলসংখ্যক নিয়োগদান অপ্রয়োজনীয়। নিয়মনীতি অনুসরণ করলে বৈধপন্থায় এভাবে নিয়োগ দেওয়ার সুযোগ নেই।

অভিযোগগুলোর বিষয়ে কথা বলতে ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার মো. মঈনুল হক চৌধুরীর সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও পাওয়া যায়নি।

তবে এ বিষয়ে উপাচার্য ডা. মোর্শেদ আহমদ চৌধুরী নিয়োগ বাণিজ্য ও অনিয়মের অভিযোগ অস্বীকার করেন। এসব ব্যাপারে তিনি জড়িত নন এবং জানেন না বলে দাবি করেন।