সিলেটে খুন করে মোটরসাইকেল ছিনতাই করতো তারা!

সিলেটে খুন করে মোটরসাইকেল ছিনতাই করতো তারা!

সিলেটে মোটরসাইকেল রাইডারদের খুন করে মোটরসাইকেল ছিনতাই চক্রের ৪ সদস্যকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ওই চক্রটি মোটরবাইক ছিনতাইয়ের স্পট হিসেবে ব্যবহার করতো দক্ষিণ সুরমা উপজেলার মোগলাবাজার এলাকা-কে। নগরীর বিভিন্ন স্থান থেকে ভাড়ায় চালিত রাইডারদের মোটরসাইকেল নিয়ে ওই এলাকায় গিয়ে চালককে প্রথমে বাইকসহ থামিয়ে রাখত ছিনতাইকারীরা। পরে চালককে হাতুড়ী ও পাথর দিয়ে আঘাত করে মেরে মোটরসাইকেল নিয়ে পালিয়ে যেত তারা। গতকাল শনিবার এমন একটি চক্রকে গ্রেফতার করেছে মোগলাবাজার থানা পুলিশ। সিলেটে একজন মোটরবাইক চালক খুন ও একজনকে মৃতভেবে ফেলা যাওয়ার পরে আহত অবস্থায় উদ্ধারের দুটি ঘটনায় ওই গ্রুপটি জড়িত থাকার কথা জানিয়েছে পুলিশ।  
 
জানা গেছে, ঈদের আগের দিন (বৃহস্পতিবার) রাতে দক্ষিণ সুরমার মোগলাবাজার থানার হাজীগঞ্জ মুহাম্মদপুর এলাকার একটি ডোবা থেকে  উবার (মোটরসাইকেল)চালক রেদওয়ান রশীদ চৌধুরী সৌরভ (৩০)-এর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এর ৩ দিন আগে নিখোঁজ হন তিনি। রেদওয়ান রশীদ চৌধুরী সৌরভ সিলেট শহরের সোবহানীঘাটে এক আত্মীয়ের বাসায় থেকে উবারের মোটরসাইকেল ড্রাইভিং পেশায় নিয়োজিত ছিলেন। গত ১১ মে মোটরসাইকেলসহ তিনি নিখোঁজ হন। এরপর সম্ভাব্য স্থানে তাকে খোঁজখুজি করে পাওয়া না যাওয়ার কারণে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর সোবহানীঘাট পুলিশ ফাঁড়িতে গিয়ে স্বজনরা ঘটনাটি জানালে পুলিশ সৌরভের মোবাইল ট্র্যাকিং করে দেখতে পারে মুহাম্মদপুর এলাকায় তার মোবাইলের নেটওয়ার্কের অবস্থান। পরে বৃহস্পতিবার রাত ১০টার দিকে পুলিশ সেখানে অভিযান চালিয়ে একটি ডোবা থেকে সৌরভের অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করে।
 
এর আগে গত ৯ এপ্রিল সিলেট-ফেঞ্চুগঞ্জ সড়কের গফুরের বাঁধ এলাকার যাত্রী ছাউনীর ভিতরে মোটরসাইকেল রাইডার রাজুকে মৃত ভেবে ফেলে গিয়েছিল বাইক ছিনতাইকারীরা। পরে স্থানীয় লোকজন গুরুতর অবস্থায় তাকে হাসপাতালে নিয়ে যান। এক মাস চিকিৎসার পর রাজু বাসায় ফিরলেও মস্তিষ্কে আঘাতের ফলে তিনি এখনও ভারসাম্যহীন অবস্থায় রয়েছেন।

রাজু সিলেট নগরীর উত্তর বালুচর আল-ইসলাহ আবাসিক এলাকার মৃত আকদ্দছ আলীর পুত্র। তার মূল বাড়ি সিলেটের বিয়ানীবাজার উপজেলার ঢারখখাই আদিনাবাদকাপন গ্রামে।

মোটরসাইকেল রাইডার রাজু গত ৮ এপ্রিল মোটরবাইক নিয়ে কাজের উদ্দেশ্যে বের হয়ে আর বাড়ি ফিরেননি। রাত ১০টার দিকে তাকে মোটরবাইকসহ সিলেট কদমতলিস্থ হুমায়ুন রশিদ চত্বর এলাকায় কেউ কেউ দেখতে পান বলে তার ভাই গিয়াস জানান। পরদিন সকাল পৌনে ৮টার দিকে মোগলাবাজার থানার গফুরগাঁও এলাকার একটি যাত্রী ছাউনী থেকে গুরুতর রক্তাক্ত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে ওসমানী হাসপাতালে প্রেরণ করে পুলিশ। এ সময় তার সঙ্গে থাকা মোটরবাইক, মোবাইল ফোন ও টাকা কিছুই পাওয়া যায়নি। খবর পেয়ে স্বজনরা ওসমানীতে গিয়ে তাকে শনাক্ত করেন।
 
সর্বশেষ, মোটর বাইকার রেদওয়ান রশীদ চৌধুরী সৌরভ হত্যাকাণ্ডে শুরু হয় পুলিশের বিশেষ অভিযান। চাঞ্চল্যকর এ হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকায় মোগলাবাজার থানা পুলিশ ৪ জনকে গ্রেফতার করে। এসময় পুলিশ সৌরভ ও রাজুর ব্যবহৃত মোটরসাইকেলও উদ্ধার করা হয়।   

পুলিশ জানায়, প্রথমে গতকাল শনিবার সন্ধ্যা অনুমানিক ৭টায় সিলেটের কদমতলী এলাকা থেকে মজিবুর রহমান (২৩) নামের একজনকে আটক করে। সে মোগলাবাজারের ছিছরাকান্দি গ্রামের লয়লু মিয়ার ছেলে।পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে সে মোটরবাইক ছিনতাইয়ের ঘটনায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে।এরপর একে একে মোট ৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়।

পরে তাকে (মুজিব) ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদে সে জানায় তার সঙ্গীয় এনাম আহমদ  হুমায়ুন রশিদ চত্তর হতে মোটর বাইকার গোলাম কিবরিয়া রাজুকে মোটর সাইকেল ভাড়ায় নিয়ে মোগলাবাজারের মোহাম্মদপুর গফুরের বাঁধ এলাকার সিলেট ফেঞ্চুগঞ্জ সড়কের পাশে যাত্রীছাউনীর সামনে মোটরসাইকেল থামিয়ে তাকে যাত্রীছাউনীর পিছনে নিয়ে মাথায় হাতুড়ী দিয়ে আঘাত করে মারা গেছে ভেবে ডোবায় ফেলে রেখে মোটর সাইকেলটি নিয়ে যায়। একইভাবে গত  ১১ মে হুমায়ুন রশিদ চত্তর  থেকে মোটরবাইকার রেদোয়ান রশিদ চৌধুরী-কেও ওই যাত্রীছাউনীর সামনে নিয়ে মোটরসাইকেল থামিয়ে ছাউনীর পিছনে হাতুড়ী দিয়ে মাথায় আঘাত করে তাকে হত্যা করে লাশ কচুরিপনাযুক্ত কাদা পানির ডোবায় ফেলে বাইক নিয়ে চলে যায়।           
     
পরে এনাম আহমদকে গোলাপগঞ্জ আছিরগঞ্জ বাজার হতে একই রাতে গ্রেফতার করে পুলিশ।আটক এনামের বাড়ী মোগলাবাজারের ধোপাকান্দি গ্রামে। এদিকে তাদের দেওয়া তথ্য মতে মৌলভীবাজারের রাজনগরের খলাগ্রাম থেকে জুয়েলুর রহমান (৩৬) নামের আরেক জনের হেফাজত হতে রেদোয়ান রশিদ চৌধুরী মোটর সাইকেল (সিলেট হ-১২-২৭০২) উদ্ধার ও তাকে গ্রেফতার করা হয়।  পরে একই উপজেলার ধুলিজুরা গ্রামের রায়হান মিয়ার (২৮) হেফাজত হতে গোলাম কিবরিয়া রাজুর মোটর সাইকেল (রেজিঃ নং সিলেট মেট্রো-হ-১২-২২৪৫) উদ্ধার ও তাকে গ্রেফতার করা হয়।
 
তাদের দেওয়া তথ্য মতে ঘটনাস্থল মোগলাবাজারের মোহাম্মদপুর গফুরের বাঁধ এলাকায় সিলেট ফেঞ্চুগঞ্জ সড়কের পাশে যাত্রীছাউনী পিছন হতে রেদোয়ান রশিদ চৌধুরীকে হত্যায় এবং গোলাম কিবরিয়া রাজুকে হত্যার চেষ্টায় ব্যবহৃত একটি হাতুড়ী ও ২টি পাথরের টুকরা উদ্ধার পূর্বক জব্দ করা হয়।  
 
একপর্যায়ে ধৃত আসামী মুজিবুর রহমানের কর্মস্থল কদমতলী টার্মিনালের তাজমহল রেস্টুরেন্টে পুলিশ হাজির হলে রেস্টুরেন্টের ম্যানেজারগণ মুজিবুর রহমানকে সনাক্ত করে। পরে রেস্টুরেন্টে তল্লাশী করে মুজিবের ব্যবহৃত ছিনতাইকৃত সৌরভের মোবাইল ফোনটি উদ্ধার করা হয়।

এদিকে আসামী মুজিবুর রহমান ও এনাম আহমদের পূনরায় দেয়া তথ্য মতে ভিকটিম গোলাম কিবরিয়া রাজুর মোবাইল ফোন  আজ রবিবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে দক্ষিণ সুরমা থানাধীন দশহাল এলাকা হতে সামছুল ইসলাম (১৮) নামের একজনের নিকট হতে উদ্ধার করা হয়। আসামী মুজিবু ওই ফোনটি ২ হাজার টাকায় বিক্র করেছিল সামছুলের কাছে। মোবাইল ফোনটি সামছুল ইসলামের কাছ থেকে পাওয়ায় ঘটনায় সম্পৃক্ততা  সংক্রান্তে তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়েছে।

পৃথক দুটি ঘটনায় মোগলাবাজার থানায় দুটি মামলা করা হয়েছে।