সিলেটে ৪ নেতায় ৩ বছর পার, কবে হচ্ছে যুবলীগের পুর্নাঙ্গ কমিটি?

সিলেটে ৪ নেতায় ৩ বছর পার, কবে হচ্ছে যুবলীগের পুর্নাঙ্গ কমিটি?
সিলেট জেলা ও মহানগর যুবলীগ

২০১৯ সালে সম্মেলনের মাধ্যমে সিলেট জেলা ও মহানগর যুবলীগের ৩ বছর মেয়াদি কমিটি গঠন করা হয়েছিল। ৪ সদস্য বিশিষ্ট এ কমিটির মেয়াদ প্রায় শেষ। মেয়াদ শেষ হওয়ার পথে থাকা ক্ষমতাসীন দলের গুরুত্বপূর্ণ এ সহযোগী সংগঠনের এখনো পুর্নাঙ্গ কমিটি গঠন করা হয়নি।

জেলা ও মহানগর যুবলীগের দায়িত্বশীল নেতারা বলেছেন কেন্দ্রীয় সেলে তারা কমিটি জমা দিয়েছেন। এখন কমিটির পদপ্রত্যাশীদের জীবনবৃত্তান্ত পর্যালোচনা করছেন দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা। শিগগিরই সিভি পর্যালোচনা শেষে কমিটি অনুমোদন করা হবে বলে একটি সূত্র জানিয়েছে।  ত্যাগি, সাবেক ছাত্রনেতাদের মূল্যায়নের দাবি পদপ্রত্যাশীদের। তাদের মতো কেন্দ্রীয় সম্পাদক বলেছেন ত্যাগিরা কমিটিতে স্থান পাবে ; কোনো অনুপ্রবেশকারীরা না।

জানা যায়, ২০১৯ সালের জুলাই মাসে সম্মেলনের মাধ্যমে সিলেট জেলা ও মহানগর যুবলীগের কমিটি গঠন করা হয়। সেই সময়ে যুবলীগের চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরীর উপস্থিতিতে সম্মেলনে সিলেট জেলা যুবলীগে শামীম আহমদ (ভিপি শামীম) সভাপতি ও শামীম আহমদ সাধারণ সম্পাদক এবং মহানগর যুবলীগে আলম খান মুক্তি সভাপতি ও মুশফিক জায়গীরদার সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। কিন্তু কমিটির মেয়াদ প্রায় শেষ হলেও এখন পর্যন্ত পূর্ণাঙ্গ কমিটি উপহার দিতে পারেন নি এ দুই ইউনিটের শীর্ষ নেতারা। এতে করে চার নেতায় আটকে আছে সিলেট জেলা ও মহানগর যুবলীগের সাংগঠনিক কার্যক্রম। তবে জেলা ও মহানগর যুবলীগের দায়িত্বশীলরা বলছেন তারা কেন্দ্রে কমিটি অনুমোদনের জন্য তালিকা প্রেরণ করেছেন। কেন্দ্র কমিটির পদপ্রত্যাশীদের তথ্য যাচাই-বাছাই করছেন। তবে শিগগিরই এ প্রক্রিয়া শেষে জেলা ও মহানগরে কমিটি অনুমোদন হবে বলে দায়িত্বশীলরা প্রত্যাশা করছেন।

সিলেট যুবলীগের একটি সূত্র জানায়- সর্বশেষ সিলেট জেলা ও মহানগর যুবলীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় ২০১৯ সালের জুলাইয়ে। এর আগে ২০০৩ সালে জেলা যুবলীগে এবং ২০০৪ সালে মহানগর যুবলীগে সম্মেলন হয়েছিল। তবে ওই সময় নেতৃত্ব নির্ধারণে ভোট হয়নি। সিলেট যুবলীগে ভোটের মাধ্যমে নেতৃত্ব বাছাই করা হয় ১৯৯২ সালে। এরপর ২০১৯ সালের জুলাই মাসে সিলেট জেলা ও মহানগর যুবলীগের সম্মেলনে কাউন্সিলররা ভোট দেয়ার সুযোগ পান। সেই সময়ে যুবলীগের চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরীর উপস্থিতিতে সম্মেলনে সিলেট জেলা যুবলীগে শামীম আহমদ (ভিপি শামীম) সভাপতি ও শামীম আহমদ সাধারণ সম্পাদক এবং মহানগর যুবলীগে আলম খান মুক্তি সভাপতি ও মুশফিক জায়গীরদার সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। এ চার নেতার তিনজনই আগে থেকে শীর্ষ নেতৃত্বে ছিলেন। সিলেট জেলা যুবলীগে ভিপি শামীম আগের কমিটিরও ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ছিলেন। মহানগর যুবলীগে সর্বশেষ কমিটির আহবায়ক ছিলেন আলম খান মুক্তি, যুগ্ম আহবায়ক ছিলেন মুশফিক জায়গীরদার।

তবে শুরু থেকে কমিটি গঠনে জেলার দায়িত্বশীলদের বিরুদ্ধে অভিযোগ না উঠলেও নগরের দায়িত্বশীলদের বিরুদ্ধে কেন্দ্রে নালিশ করেছেন পদপ্রত্যাশীরা।

তাদের অভিযোগ, মহানগর যুবলীগের সভাপতি আলম খান মুক্তি ও সাধারণ সম্পাদক মুশফিক জায়গীরদার একটি কমিটি অনুমোদনের জন্য কেন্দ্রে প্রেরণ করেছেন। ওই কমিটিতে সিংহভাগই তাদের অনুসারী। অভিযোগ আছে- প্রস্তাবিত কমিটিতে রয়েছেন, শিবির ও ছাত্রদল থেকে অনুপ্রবেশকারীরাও। একাধিক মামলার আসামি টাকার বিনিময়ে পদ পাচ্ছেন বলে কেন্দ্রীয় যুবলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের কাছে নালিশ দিয়েছেন তারা।

যুবলীগের শীর্ষ দায়িত্বশীল নেতারা জানিয়েছেন, এমন পরিস্থিতিতে কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া ভিন্নভাবে দেখছেন। তারা পদপ্রত্যাশীদের তালিকা যাচাই-বাচাই করছেন। দায়িত্বপ্রাপ্ত সিলেট বিভাগের নেতাদের প্রত্যেক পদপ্রত্যাশীদের জীবনবৃত্তান্ত ও সার্বিক খোঁজখবর নিতে নির্দেশ দিয়েছেন। কেন্দ্রীয় চেয়ারম্যান ও সাধারণ সম্পাদকের নির্দেশে পদপ্রত্যাশীদের বিষয়ে খোঁজখবর নিচ্ছেন দায়িত্বপ্রাপ্তরা।

সিলেট মহানগর যুবলীগের সভাপতি প্রার্থী ছিলেন আহ্বায়ক কমিটির সিনিয়র সদস্য সুবেদুর রহমান মুন্না।

তিনি বলেন, আমি সভাপতি প্রার্থী ছিলাম। তৎকালীন শীর্ষ নেতাদের নির্দেশ ও পরামর্শে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করি। তারা আমাকে আশ্বস্ত করেছিলেন পুর্নাঙ্গ কমিটিতে মূল্যায়ন করা হবে। আমি শীর্ষ নেতাদের কথার মূল্যায়ন চাই। আমি আশা করি আমাদের দলের চেয়ারম্যান ও সাধারণ সম্পাদক আমাকে মূল্যায়ন করবেন।

মুন্না আরও বলেন, কমিটি গঠন প্রক্রিয়ায় তৃণমূলের নেতাকর্মী ক্ষুদ্ধ ও আশাহত। কেন্দ্রে মহানগরের দায়িত্বশীলরা যে কমিটি অনুমোদনের জন্য দিয়েছেন সেটা বিতর্কিত। আমরা আশাকরি মহানগরের বিতর্কিত কমিটি আমাদের অভিভাবকেরা অনুমোদন করবেন না। তাঁরা ত্যাগি, রাজপথের সৈনিক ও সাবেক ছাত্রনেতাদের মূল্যায়ন করে কমিটি অনুমোদন দিবেন। আমরা কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের কমিটি গঠন প্রক্রিয়াকে সাদুবাদ জানাই।

সিলেট মহানগর যুবলীগের সভাপতি আলম খান মুক্তি বলেন, আমরা কেন্দ্রে পূর্ণাঙ্গ কমিটি জমা দিয়েছি। যাদেরকে কমিটিতে স্থান দেওয়া হয়েছে তারা সকলেই যুবলীগের জন্য নিবেদিত প্রাণ। এরপরও কেন্দ্রীয় যুবলীগ তাদের নিজস্ব টিম দ্বারা যাচাই-বাছাই করে কমিটি ঘোষণা করবেন।

আর জেলা যুবলীগের সভাপতি শামীম আহমদ (ভিপি শামীম) বলেন, আমরা কেন্দ্রে শতভাগ স্বচ্ছতার মাধ্যমে কমিটি অনুমোদনের জন্য পাঠিয়েছিলাম। কেন্দ্র অনেকের ডাটা চেয়েছে আমরাও দিচ্ছি। আশাকরি শিগগিরই কমিটি অনুমোদন পাবে।

কমিটি গঠনে দেরি হওয়ার কারণ হিসেবে ভিপি শামীম বলেন, প্রথমে আমাদের সংগঠনের কিছুটা সমস্যা দেখা দিয়েছিল। তারপর এলো করোনা। ফলে কমিটি গঠনে বিলম্ব হয়েছে।

ত্যাগি, সৎ ও আদর্শবানদের সিলেট জেলা ও মহানগর যুবলীগে মূল্যায়ন করা হবে বলে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব মো. মাইনুল হোসেন খাঁন নিখিল বলেছেন।

তিনি রোববার দুপুরে মুঠোফোনে বলেন, “আমরা জেলা ও মহানগর যুবলীগের কাছ থেকে পদপ্রত্যাশীদের তালিকা পেয়েছি। তাদের জীবনবৃত্তান্ত ও সামগ্রিক তথ্য পর্যালোচনা চলছে। এজন্য আমাদের  বিভাগীয় টিমকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা পর্যালোচনা শেষে আমাদের কাছে কমিটি তুলে দিবেন। আমরা বসে সিদ্ধান্ত নেব।”

তিনি বলেন, “যুবলীগ একটি সুশৃঙ্খল সংগঠন। এখানে কোনো বিশৃঙ্খলাকারী, অনুপ্রবেশকারীর স্থান হবে না। ত্যাগি, সৎ ও আদর্শবানরা যুবলীগে মূল্যায়িত হবে।”