সুনামগঞ্জে তালিকা হচ্ছে মানব পাচারকারী চক্রের

সুনামগঞ্জে তালিকা হচ্ছে মানব পাচারকারী চক্রের

দালালের মাধ্যমে স্বপ্নের দেশ ইতালি যাওয়ার পথে মৃত্যু হয় জগন্নাথপুর উপজেলার কলকলিয়া ইউনিয়নের শ্রীধরপাশা গ্রামে তরুণ একওয়ান ইসলামের (১৯)। কিছুদিন আগে সুনামগঞ্জের একুয়ানের মরদেহে গ্রামের বাড়ি পৌঁছলে নড়েছড়ে বসে প্রশাসন। চাঞ্চল্যকর এই ঘটনায় একুয়ানের পরিবারের পক্ষ থেকে মামলা দায়ের করলে মানব পাচারকারী চক্রের ২ জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। 

সোমবার দুপুরে সুনামগঞ্জ পুলিশ সুপার কার্যালয়ে এক প্রেস ব্রিফিং এর মাধ্যমে জানানো হয়, একুয়ানে ঘটনায় মানব পাচার আইনে শ্রীধরপাশা গ্রামের চারজনকে আসামী করে থানায় মামলা দায়ের করলেও গত ৯ অক্টোবর মানবপাচার চক্রের  সদস্য আবুল মিয়া ও তার স্ত্রী আছমা বেগমকে গ্রেফতার করে জগন্নাথপুর থানা পুলিশ। গ্রেফতারকৃতদের কাছ থেকে ১টি ভ্যানিটি ব্যাগ এবং ব্যাগের ভিতর রাখা ৪ লাখ ১৫ হাজার ৫০০ টাকা, ৭টি মোবাইলফোন ১টি এটিএম কার্ড ২টি ব্যাংক চেকসহ ১টি পাসপোর্ট জব্দ করা হয়। মামলা অপর দুই আসামি আবুল হোসেন এর পুত্র আলী হোসেন ও তার আত্মীয় সালেহ আহমদ লিবিয়ায় অবস্থান করছে বলে জানানো হয়।

প্রেসব্রিফিংয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবু সাঈদ জানান, দালালদের খপ্পরে পড়ে অনেক মানুষ প্রলুবদ্ধ হয়ে ইউরোপ পারি দিচ্ছেন। লিবিয়া হয়ে ঝুঁকিপূর্ণভাবে সাগর পারি দিতে গিয়ে কেউ মারা যাচ্ছেন। কেউ দালাল চক্রের খপ্পরে পড়ে লিবিয়ায় মানবেত জীবনযাপন করছেন। দালাল চক্রের কারনে একওয়ানের পরিবারের মতো অনেকে পরিবার স্ববর্স হারাচ্ছেন। পুলিশ একুয়ানের মামলায় চক্রের দুইজনকে গ্রেফতার করেছে। বাকি দুইজনকে ইন্টারপোলের মাধ্যমে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে সংশ্লিষ্ট আইনসংস্থার মাধ্যমে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।

এসময় তিনি জানান, আমরা জেলার মানবপাচারকারী চক্রের তালিকা তৈরী করছি। তালিকা তৈরীর পরে পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের মাধ্যমে মানবপাচারীদের আইনের আওতায়র আনা হবে। সাধারণ মানুষ যাতে দালালদের খপ্পড়ে পা না দেয় বিট পুলিশের মাধ্যমে সচেতনতামূলক কাজ অব্যাহত রেখেছে বলে জানান তিনি।

উল্লেখ্য, গত বছরের মার্চ মাসে জগন্নাথপুরের শ্রীধরপাশা গ্রামের দালাল আলী হোসেনের মাধ্যমে ১৯ লাখ টাকা চুক্তিতে ইতালি যেতে লিবিয়া যান কৃষক তরিকুল ইসলামের ছেলে একুয়ান। সেখানে পৌঁছার পর দালাল চক্র তাঁকে আটক করে অমানবিক নির্যাতন চালায়। তাকে সেখান থেকে রক্ষা করতে চুক্তির টাকায় দফা দফায়  প্রদান করে একুয়ানের পরিবার। চুক্তিমতে টাকা দিলেও ইতালী না পাঠালে লিবিয়া থেকে ছেলে দেশে ফেরৎ নিয়ে আসার জন্য দালালকে চাপ দেন একুয়ানের বাবা। একুয়ানের পরিবার থেকে দাবি করা হয় চলতি বছরের জুন মাসে দালাল আলী হোসেন ও তার সহযোগি সালেহ আহমদ লিবিয়ায় অবস্থানরত মাফিয়ার দ্বারা একুয়ানকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করে  এবং খাবার না দিয়ে অমানবিকভাবে হত্যা করে। বাংলাদেশ দূতাবাসের সহযোগিতায় একুয়ানের লাশ গেল ৩০ সেপ্টেম্বর দেশে আসে। সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতাল থেকে ময়নাতদন্তের পর গ্রামের বাড়িতে একুয়ানকে দাফন করা হয়।