অবৈধপথে ইতালিযাত্রা

‘আরও ৮ লাখ না দিলে বুকের ধন মেরে ফেলবে’

‘আরও ৮ লাখ না দিলে বুকের ধন মেরে ফেলবে’

‘আমি নৌকা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করি। ইতোমধ্যে জমিজমা বিক্রি করে ৯ লাখ টাকা তৈমুর দালালকে দিয়েছি। এখন আরো সাড়ে ৮ লাখ টাকা না দিলে আমার বুকের ধনকে ওরা মেরে ফেলবে। অনেক নির্যাতন চালাচ্ছে ওর ওপর। দয়া করে আমার ছেলেটাকে বাঁচান।’

কথাগুলো বলছিলেন অবৈধপথে ইতালির উদ্দেশে যাওয়ার পথে দালালচক্রের হাতে জিম্মি থাকা মো. নাসির মিয়ার বাবা সেকুল মিয়া।

হবিগঞ্জের ৯ অভিবাসনপ্রত্যাশী অবৈধপথে ভূমধ্যসাগর হয়ে ইতালির উদ্দেশে রওনা দেওয়ার পর গত বুধবার তাদের আটক করে মানবপাচারকারী দালালচক্র। চক্রটি তাদের আটক করে পরিবারের কাছে মুক্তিপণ দাবি করে।

সোমবারের মধ্যে জনপ্রতি সাড়ে আট লাখ টাকা দিতে না পারলে সবাইকে হত্যা করে ভূমধ্যসাগরে লাশ ভাসিয়ে দেওয়া হবে বলে দালালচক্রটি তাদের পরিবারের কাছে হুমকি দিয়েছে।

জিম্মি থাকা ৯ অভিবাসনপ্রত্যাশীর মধ্যে চারজনের পরিচয় পাওয়া গেছে।

তারা হলেন- হবিগঞ্জের আজমিরীগঞ্জ উপজেলার পশ্চিমবাগ গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত প্রাইমারি শিক্ষক আব্দুল মুকিত খানের ছেলে মো. সাজানুর রহমান (৩৫), একই গ্রামের সজলু মিয়ার ছেলে আফজল, সেকুল মিয়ার ছেলে নাসির (২০), হবিগঞ্জ শহরের নোয়াবাদ এলাকার মৃত সফর আলীর ছেলে উজ্জল (২৭)। বাকিদের নাম-ঠিকানা তাৎক্ষণিকভাবে জানা যায়নি।

জিম্মি থাকা মো. সাজানুর রহমানের ভাই স্কুলশিক্ষক মো. অছিউর রহমান জানান, গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে সাজানুর ইতালি যাওয়ার উদ্দেশে বাড়ি থেকে বের হয়। মৌলভীবাজারের মর্তুজা নামে এক দালালের মাধ্যমে সে বেনগাজি পৌঁছায়। পরে ছাবু মিয়া নামে আরেক দালালের কাছে সাজানুরকে বিক্রি করে দেয়। সেখানে কোস্টগার্ডের হাতে ধরা পড়লে তিন লাখ টাকায় মুক্তি পায়।

পরে দালাল তৈমুর মিয়া ইতালি পাঠানোর দায়িত্ব নেয়। তৈমুরের বাড়ি নবীগঞ্জের ইমামবাড়িতে। তার পরিবার বর্তমানে হবিগঞ্জ শহরের নোয়াবাদ এলাকায় বসবাস করছে বলে জানা গেছে। তৈমুর বর্তমানে ত্রিপলি অবস্থান করছেন।

প্রত্যেক জিম্মি পরিবারকে সোমবারের মধ্যে সাড়ে আট লাখ টাকা করে দিতে দাবি করছে চক্রটি। অন্যথায় তাদের মেরে ভূমধ্যসাগরে ফেলে দেওয়ার হুমকি দিচ্ছে।

অছিউর রহমান বলেন, ‘আমার ভাইয়ের পাঁচ মাস বয়সি একটি মেয়ে রয়েছে। পরিবারের আর্থিক অবস্থা ফেরানোর জন্যই সে বিদেশের পথে পা বাড়ায়। যদিও আমাদের মত ছিল না। এ পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে ১১ লাখ ৮০ হাজার টাকা দালালরা হাতিয়ে নিয়েছে। একদিকে ভাইয়ের জীবন; অন্যদিকে দালালদের দাবিপূরণ কীভাবে করব এ নিয়ে চিন্তা করছি।’

সজলু মিয়ার বাবা আফজল মিয়া বলেন- ‘পাঁচ মাসেও দালালরা আমার ছেলেকে ইতালি পৌঁছাতে পারেনি। ইতোমধ্যে জমিজমা বিক্রি করে ১৬ লাখ টাকা দালালদের দেওয়া হয়েছে।’

আরেক জিম্মি উজ্জলের শ্বশুর মো. ফারুক মিয়া বলেন, ‘ধার-দেনা করে আমাদের না জানিয়েই উজ্জল বিদেশ চলে গিয়েছিল। আমার মেয়ের একটি বাচ্চা সন্তান রয়েছে। ওর কোনো ক্ষতি হয়ে গেলে মেয়ে ও নাতিদের ভবিষ্যৎ কী হবে?’

হবিগঞ্জের জেলা প্রশাসক ইশরাত জাহান বলেন, ‘বিষয়টি আমার নলেজে নেই। যদি এমনটা হয়ে থাকে তা হলে তাদের সহযোগিতার দরকার। আমি বিষয়টি খোঁজখবর নিয়ে দেখছি।’