কঠিন সময়ে আনোয়ারুজ্জামান, 'একাই' নিতে হচ্ছে চ্যালেঞ্জ!

কঠিন সময়ে আনোয়ারুজ্জামান, 'একাই' নিতে হচ্ছে চ্যালেঞ্জ!

অনেকটা কঠিন সময় পার করছেন আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীকে। মেয়র নির্বাচনে নানা বৈতরণি পার করলেও আন্দোলন সংগ্রামে এ মৌসুমি তিনি অনেকটা 'একা'। হজে মেয়র নির্বাচিত হলেও সিলেটের রাজনীতিতে অবস্থান নিতে ‘চ্যালেঞ্জ’ নিতে হচ্ছে তাকে।

এক্ষেত্রে নিজ দল সিলেট আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতারাই বড় বাধা তার। ইতিমধ্যে সিলেট আওয়ামী লীগের মাঠের রাজনীতিতে এমন দৃশ্য পরিলক্ষিত হচ্ছে। এ নিয়ে আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরেই জল্পনা শুরু হয়েছে। স্নায়ুযুদ্ধও চলছে।

নেতারা জানিয়েছেন, সিলেট সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে মেয়র পদে আনোয়ারুজ্জামানের প্রার্থী হওয়া ছিল দলের হাইকমান্ডের পছন্দের। সাবেক মেয়র বদরউদ্দিন আহমদ কামরানের স্থলাভিষিক্ত নেতা খুঁজতে গিয়ে যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীকে নিয়ে আসা হয় সিলেট সিটি নির্বাচনে।

যুক্তরাজ্য থেকে নেতা নিয়ে আসার বিষয়টি এবারই প্রথম নয়। এর আগে সিলেট-২ আসনে ২০০৮ সালের নির্বাচনে এমপি পদে প্রার্থী করা হয়েছিল যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের আরেক নেতা শফিকুর রহমান চৌধুরীকে। পরে তিনি এমপি নির্বাচিত হন এবং সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হন। এখন শফিকুর রহমান চৌধুরী সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি। আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী মেয়র নির্বাচনকে কেন্দ্র করে মাঠে নামার পরপরই সিলেট আওয়ামী লীগের নেতারা একাট্টা হয়ে যান। তারা আনোয়ারের সঙ্গে দলীয় মনোনয়ন পেতে লড়াই করেন।

তবে আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর সঙ্গে একাট্টা হয়ে মাঠে ছিলেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও সিলেটের অন্যতম ক্লিনইমেজ নেতা শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল, নগর সহ-সভাপতি বিজিত চৌধুরীসহ কয়েকজন সিনিয়র নেতা। পাশে ছিলেন সাবেক মেয়র বদরউদ্দিন আহমদ কামরান পুত্র ও সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. আরমান আহমদ শিপলু।

আনোয়ারকে নিয়ে সিলেটের ভোটের মাঠে সক্রিয় হয়ে ওঠেন তারা। এ ছাড়া আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী নিজেও দলের নেতাদের বিরোধী অবস্থান তোয়াক্কা না করে ভোটের মাঠে সক্রিয় থাকেন। অবশেষে আনোয়ার যখন দলীয় মনোনয়ন পান তখন পরিস্থিতি রাতারাতিই পরিবর্তন হয়। নৌকার পক্ষে মাঠে একাট্টা হন সিলেট আওয়ামী লীগের নেতারা।

দলের একাধিক নেতা গত কয়েক দিনের ঘটনা পর্যবেক্ষণ করে জানান, মেয়র হিসেবে, শেখ হাসিনার পছন্দের নেতা হিসেবে আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে। তার পক্ষে সিলেট আওয়ামী পরিবারের সবাই ঐক্যবদ্ধ। এই অবস্থায় সিনিয়র নেতাদের অনেকের তরফ থেকে নানাভাবে অবজ্ঞা করা হচ্ছে তাকে। বিএনপি’র অবরোধ কর্মসূচির বিপরীতে আওয়ামী লীগের শান্তি সমাবেশে সিলেটে শোডাউন দিয়েছেন আনোয়ার। ৪-৫শ’ নেতাকর্মী নিয়ে নগর প্রদক্ষিণ করে শান্তি সমাবেশে যোগ দিয়েছেন। কিন্তু সেখানে তাকে যতটুকু মর্যাদা দেয়ার কথা ছিল ততটুকু দেয়া হয়নি। এ কারণে সর্বশেষ বৃহস্পতিবারের শান্তি সমাবেশে যোগ দেননি আনোয়ারুজ্জামানও।

তবে আনোয়ারুজ্জামানের ঘনিষ্ঠজনেরা জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার সিলেট সিটি করপোরেশনের নির্বাচিত কাউন্সিলরদের নিয়ে তার বাসায় দিনভর বৈঠকে ব্যস্ত ছিলেন মেয়র। এ কারণে তিনি ওই সমাবেশে যাননি। তবে মেয়র আনোয়ারের সঙ্গে সিলেট আওয়ামী লীগের যে দুরত্ব স্পষ্ট হচ্ছে, এর প্রমান পেয়েছেন সিলেটের গণমাধ্যমের কর্মীরাও। কারন; শান্তি সমাবেশের নিউজ প্রতিদিনই জেলা আওয়ামী লীগের তরফ থেকে গণমাধ্যমে সরবরাহ করা হয়। একই সঙ্গে আনোয়ারুজ্জামানের পক্ষ থেকে প্রেস বিজ্ঞপ্তি প্রেরণ করা হয়। দুটি বিজ্ঞপ্তিই ছিল ভিন্ন রকমের। ফলে এ নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে পড়েন সাংবাদিকরাও। আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী নির্বাচিত মেয়র হিসেবে আগামী ৭ই নভেম্বর আনুষ্ঠানিক দায়িত্ব নেবেন। 

একটি সুত্র জানিয়েছেন, এখন ক্ষমতা গ্রহণের জন্য মেয়র আনোয়ারুজ্জামান প্রস্তুতি নিচ্ছেন। ইতিমধ্যে গত তিন দিন আগে তিনি জেলা পরিষদ মিলনায়তনে সিলেট আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতাদের নিয়ে বসেছিলেন। ওখানে তাদের পরামর্শ নিয়েছেন। এই অবস্থায় আনোয়ারুজ্জামানের দায়িত্ব গ্রহণ নিয়ে প্রত্যাশা সম্বলিত একটি ভিডিও ডকুমেন্টারি নির্মাণ করা হচ্ছে। সেখানে আওয়ামী লীগের নেতাদের যতটুকু সহায়তা পাওয়ার কথা ততটুকু পাওয়া যাচ্ছে না। অনেক নেতা আবার বিদায়ী মেয়রের বন্দনা বেশি করছেন।

গতকাল সিলেটের জেলা পরিষদ মিলনায়তনে জেল হত্যা দিবসে সিলেট আওয়ামী লীগের নেতারা আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীকে ছাড়াই বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ফুলেল শ্রদ্ধা জানান। বিকালের দিকে যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাদের নিয়ে অবশ্যই আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী তার পক্ষ থেকে ফুলের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। তবে সিলেটের মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী সিলেট আওয়ামী লীগের সঙ্গে দুরত্বের বিষয়ে গণমাধ্যমের কাছে কিছু বলেননি। 

তিনি জানিয়েছেন, আমি আওয়ামী লীগের হয়ে মেয়র নির্বাচিত হয়েছি। সবার সঙ্গে মিলেমিশে আছি। এখন আমি দায়িত্ব গ্রহণের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি। এ কারণে সব কর্মসূচিতে যোগ দেয়া যাচ্ছে না। দায়িত্ব নেয়ার পর সব স্বাভাবিক হয়ে যাবে।

সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শফিকুর রহমান চৌধুরী জানান, সিলেট আওয়ামী লীগের মেয়র আনোয়ারের কোনো দূরত্ব নেই। বরং মেয়র সব কাজে সহায়তা করছেন, আমরাও তাকে সহযোগিতা করছি। সিলেট নগরের উন্নয়নে তাকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করা হবে বলে জানান তিনি।