খুলে গেল অবাধ সমৃদ্ধির দ্বার

খুলে গেল অবাধ সমৃদ্ধির দ্বার

প্রমত্তা পদ্মা নদীর ওপর বহু প্রত্যাশিত পদ্মা বহুমুখী সেতুর উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের মানুষের দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান ঘটালেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর মাধ্যমে দেশের অবাধ সমৃদ্ধির দ্বার উন্মোচিত হল।

প্রধানমন্ত্রী বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানের মধ্যদিয়ে আজ শনিবার সকালে মাওয়া প্রান্তে পদ্মা সেতুর ফলক উম্মুক্ত করেন। এ সময় সেখানে বিদেশি কূটনীতিকসহ হাজারো বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।

আগামীকাল রবিবার থেকে দক্ষিণাঞ্চলের জনগণ সরাসরি সড়ক পথে ঢাকায় যেতে পারবেন। এর মধ্যদিয়ে তারা ফেরি ঘাটের যন্ত্রণাদায়ক দুঃস্বপ্ন থেকে মুক্তি পাচ্ছেন। তারা এখন এ সেতুর ওপর দিয়ে মাত্র ছয় মিনিটে এ নদী পর হবেন।

স্বপ্নের এই পদ্মা সেতু কেবলমাত্র রাজধানী ঢাকা ও দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মধ্যে দীর্ঘ প্রতীক্ষিত সরাসরি সড়ক ও রেল যোগাযোগই স্থাপন করেনি না বরং এটি দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে ব্যাপক সংযোগ ও বাণিজ্যের দ্বার খুলে দিলো।

এছাড়া, এই সেতু সাধারণভাবে সারা দেশের পাশাপাশি বিশেষ করে দক্ষিণাঞ্চলের ২১টি জেলার সমৃদ্ধি আনয়নের ক্ষেত্রে পরিবহন সময় ও  অন্য ব্যয় হ্রাসের মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক প্রভাব রাখবে।

সকালে হেলিকপ্টারে করে মাওয়ায় পদ্মা সেতু সার্ভিস এরিয়ায় সুধী সমাবেশে যোগ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

সেখানে জাতির উদ্দেশে তিনি বলেন, আসুন, পদ্মা সেতুর উদ্বোধনের এই ঐতিহাসিক দিনে যে যার অবস্থান থেকে দেশ এবং দেশের মানুষের কল্যাণে কাজ করার শপথ নিই, এ দেশের মানুষের ভাগ্য পবির্তন করে উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ আমরা গড়ে তুলব, জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ আমরা গড়ে তুলব।

নিজস্ব অর্থায়নে বাস্তবায়িত দেশের বৃহত্তম এই মেগা প্রকল্পের উদ্বোধনের অংশ হিসেবে ঐতিহাসিক এই শুভ মুহূর্তটিকে স্মরণীয় করে রাখতে তিনি স্মারক ডাক টিকেট, স্মারক পত্র ও উদ্বোধনী খাম অবমুক্ত করেন এবং একটি বিশেষ সিল মোহর ব্যবহার করেন। 

নিজ হাতে টোল প্রদানের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বহুল প্রত্যাশিত পদ্মা বহুমুখী সেতু অতিক্রমের টোল প্রদান প্রক্রিয়ার উদ্বোধন করেন। 

প্রধানমন্ত্রী হচ্ছেন টোল প্রধানের মাধ্যমে পদ্মা সেতু পার হওয়া প্রথম ব্যক্তি। পরে তিনি তিনি জন সমাবেশে যোগ দিতে জাজিরা পয়েন্টে যান।

২০১৭ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর ৩৭ ও ৩৮ নম্বর পিলারের ওপর প্রথম স্প্যান স্থাপনের মধ্যদিয়ে পদ্মা সেতু দৃশ্যমান হয়। পরে একের পর এক ৪১টি স্প্যানের সবক’টি ৪২টি পিলারের উপর স্থাপন করা হয়। ২০২০ সালের ১০ ডিসেম্বর এর সর্বশেষ ৪১তম স্প্যান বসানোর মধ্যদিয়ে ৬.১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এই বহুমমুখী পদ্মা সেতুর পুরো অবকাঠামো দৃশ্যমান হয়।

নিজস্ব অর্থায়নে এ সেতু প্রকল্প বাস্তবায়নে মোট ৩০হাজার ১৯৩৩ কোটি টাকা ব্যয় হয়। মূল সেতুর নির্মাণ ব্যয় হচ্ছে ১২ হাজার ১৩৩ কোটি টাকা (৪০০ কেভি সঞ্চালন লাইন টাওয়ার ও গ্যাস লাইনের জন্য ১ হাজার কোটি টাকাসহ) এবং  ১৩.৮ কিলোমিটার নদী শাসন কাজের ব্যয় (আরটিডব্লিউ) হয় ৯ হাজার ৪০০ কোটি টাকা।

২০১৭ সালের ৭ অক্টোবর শরিয়তপুরের জাজিরা পয়েন্টে পদ্মা সেতুর প্রথম স্প্যান স্থাপন করা হয়।