গেজেট বাতিল করা ও চা শ্রমিকদের দৈনিক মজুরি ৫০০ টাকা নির্ধারণ করার দাবিতে

বাংলাদেশ চা শ্রমিক ফেডারেশনের মতবিনিময়

বাংলাদেশ চা শ্রমিক ফেডারেশনের মতবিনিময়
বাংলাদেশ চা শ্রমিক ফেডারেশন, সিলেট জেলা শাখার উদ্যোগে  অবিলম্বে চা শ্রমিকদের স্বার্থ বিরোধী গেজেট বাতিল করা, চা শ্রমিকদের দৈনিক মজুরি ৫০০ টাকা নির্ধারণ করাসহ ৪ দফা দাবিতে  শুক্রবার (৮ সেপ্টেম্বর) বিকাল ৫ টায় কেন্দ্রীয় মুসলিম সাহিত্য সংসদে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়।
মতবিনিময় সভায় বিরেন সিং এর সভাপতিত্বে ও অজিত রায় পরিচালনায় বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ চা শ্রমিক ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় উপদেষ্টা ও বাংলাদেশ শ্রমিক কর্মচারী ফেডারেশন এর কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক কমরেড উজ্জ্বল রায়,বাপা সিলেট জেলার সাধারণ সম্পাদক আব্দুল করিম কিম, সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্ট সিলেট জেলার সভাপতি আবু জাফর, বাংলাদেশ শ্রমিক কর্মচারী ফেডারেশন, সিলেট জেলার সভাপতি  মোখলেছুর রহমান, শ্রমিক অধিকার আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কমিটির আহবায়ক হৃদেশ মুদি,চা বাগানের ১০ দফা বাস্তবায়ন সংগ্রাম কমিটির সভাপতি সবুজ তাতী, কেওয়াছড়া চা বাগান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক বিশ্বজিৎ কুর্মি।আরো বক্তব্য রাখেন মালনিছড়া চা বাগান এর নমিতা রায়,লাক্কাতুরা চা বাগান এর হৃদয় লোহার,খান চা বাগানের উষা বুনার্জি, কেওয়াছড়া চা বাগানের শয়ন সিং,প্রমুখ। সূচনায় কীনোট পেপার পাঠ করেন শয়ন সিং।
বক্তারা বলেন, ১০ আগস্ট '২০২৩ তারিখে চা বাগান মালিক ও সরকার পক্ষ, নিম্নতম মজুরি বোর্ড  কর্তৃক চা শ্রমিক প্রতিনিধিদের সাথে আলোচনা ছাড়া এক তরফা চা শ্রমিক স্বার্থ বিরোধী যে গেজেট প্রকাশ করে,যেখানে মজুরি সহ বিভিন্ন নীতিমালা ঘোষনা করা হয়েছে। গেজেট বাস্তবায়ন হলে তার সমস্যা কি তা বক্তারা তুলে ধরেন।
বক্তারা বলেন,গেজেটে দ্বি বার্ষিক  চুক্তিতে ত্রিপক্ষীয় মজুরির আলোচনা বাতিল করে ৫% ইনক্রিমেন্ট যুক্ত করা হয়েছে। প্রতি বছর ৮ টাকা ৫০ পয়সা হারে মজুরি বৃদ্ধি হবে  পাঁচ বছরের জন্য এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হলে ৫ বছরে মাত্র ৪৫ টাকা বাড়বে, যে মজুরি দিয়ে বর্তমান দ্রব্যমূল্যের বাজারে চা শ্রমিকরা এক কেজি আলুও কেনার মতো মজুরি পাবে না। এই গেজেট অন্যায় ভাবে প্রণীত হয়েছে শুধু তাই নয়,এর মাধ্যমে চা শ্রমিক ইউনিয়নকেও অকার্যকর করে চা শ্রমিকদের ট্রেড ইউনিয়ন ও গণতান্ত্রিক আন্দোলনের অধিকার হরণ করার নীলনকশা বাস্তবায়ন করার পরিকল্পনা করা হয়েছে।এই গেজেট বাস্তবায়ন হলে মজুরি নির্ধারণের জন্য চা শ্রমিক ইউনিয়ন যেটুকু ভূমিকা রাখত সে পথ বন্ধ হয়ে যাবে। যদিও এই পরিস্থিতি চা শ্রমিক ইউনিয়ন এত নেতাদের আন্দোলনহীন আপোষের  ধারার কারণে সৃষ্টি হয়েছে।উৎসব  বোনাস ৫২ দিনের পরিবর্তে ৪৭ দিনের করা হয়েছে (১৭০×৫=৮৫০ টাকা কম )।
চুক্তিতে বোনাস দিন দিন বাড়ানোর  কথা, কিন্তুু এই গেজেটে তা কমিয়ে আনা হয়েছে। এক বছরের নতুন চুক্তির বকেয়া টাকা থেকে শ্রমিকরা বঞ্চিত হতে হবে। চা শ্রমিকদেরকে সারাজীবন গ্র্যাচুইটি থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে, বিনামূল্যে চিকিৎসার কথা বলা হলেও অনেক বাগানে শ্রমিকরা চিকিৎসা সেবা পায় না।বাংলাদেশ শ্রম আইনে ৯৯ ধারা অনুযায়ী গ্রুপ বীমা চালুর কথা থাকলেও কোনো বাগানে এই আইন কার্যকর করা হয়নি। গেজেটেও এই বিষয়টি কৌশলে সরিয়ে ফেলা হয়েছে। কোম্পানির মুনাফার অংশ চা শ্রমিকদের  পাওয়ার কথা, তা থেকেও বঞ্চিত করা হচ্ছে।মাতৃকালীন ছুটি ৬ মাস করার কথা থাকলেও এখনো চা বাগানে ৪ মাস ছুটি বহাল রয়েছে। এই গেজেটের শ্রম আইনের অনেক  ধারাও  লংঘন করা হয়েছে। চা শ্রমিকদের ভূমি অধিকার, রেশন, আবাসন, নিয়ে  সুনির্দিষ্ট নীতিমালা নেই। সব বাগানে অত্যন্ত সুকৌশলে চা শ্রমিকদের নিরিখ বাড়িয়ে, পিএফ এর টাকা ফাঁকি দিয়ে, অন্যান্য সুবিধা কর্তন করে শোষণ নির্যাতন চালিয়ে যাচ্ছে কিন্তুু পাওনা ও অধিকার নিয়ে আন্দোলনে নামতে গেলে আইন শুধুমাত্র শ্রমিকদের বিরূদ্ধে প্রযোজ্য হয়।মালিকদের পক্ষে  শোষণ করার অবাধ অধিকার রয়েছে আইনে, এরপরও  মালিকপক্ষ ও নিন্মতম  মজুরি বোর্ড এই গেজেটের মাধ্যমে গত বছরের আগস্ট আন্দোলনের চা শ্রমিকদের আকাঙ্কাকে পদতলিত করে নগ্ন ভাবে মালিকদের পক্ষে গেজেট প্রকাশ করেছে। তাই এই গেজেট চা শ্রমিকদের স্বার্থের বিরোধী । 
নেতৃবৃন্দ বলেন, এই গেজেটের মাধ্যমে অন্যায় করা হচ্ছে চা শ্রমিকদের সাথে, এজন্য সবাইকে নিয়ে প্রতিবাদ করা দরকার। আপোষহীন আন্দোলনের মাধ্যমেই সমাধানের পথ আমাদের খুঁজতে হবে। আমাদের সংগঠন বাংলাদেশ চা শ্রমিক  ফেডারেশন দীর্ঘদিন ধরে চা বাগানের বিভিন্ন সমস্যা সমাধান ও অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য লড়াই সংগ্রাম আন্দোলন করে আসছে, তাই আমরা উপস্থিত চা শ্রমিক নেতৃবৃন্দ সহ সকল চা শ্রমিক মা-বোন- ভাই আর বিবেকবান মানুষকে নিয়ে আমরা আন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানাই।
দাবিসমূহ: 
★বর্তমান গেজেট থেকে চা শ্রমিকদের স্বার্থ বিরোধী ধারা বাতিল করে নতুন গেজেট প্রকাশ করতে হবে। 
★চা শ্রমিকদের দৈনিক  মজুরি ৫০০ টাকা  ঘোষণা কর। 
★ প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী চা শ্রমিকদের ভূমির আইনগত অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। 
★দ্বিবার্ষিক চুক্তিতে মজুরি আলোচনা বাদ দেয়া চলবে না, শ্রমিকদের ইউনিয়ন করার গণতান্ত্রিক অধিকার হরণ করা চলবে না 
উপরোক্ত দাবিতে সেপ্টেম্বর মাস ব্যাপী বাগানে বাগানে চা শ্রমিকদের স্বাক্ষর সংগ্রহ, মতবিনিময় সভা, সমাবেশ ঘোষণা করা হয়।সংগৃহীত স্বাক্ষর সহ  আগামী ৪ অক্টোবর,২০২৩ ঢাকায় নিম্নতম মজুরী বোর্ডের চেয়ারম্যান বরাবর স্মারকলিপি পেশ করা হবে।