সুরমায় বর্জ্যের স্তূপ, ধ্বংসের মুখে জীববৈচিত্র্য
![সুরমায় বর্জ্যের স্তূপ, ধ্বংসের মুখে জীববৈচিত্র্য](https://www.jagosylhet.news/uploads/images/2023/05/image_750x_646dbefcc74d5.jpg)
দেশের দীর্ঘতম ও সিলেট শহরের গুরুত্বপূর্ণ সুরমা নদী দখল ও বর্জ্যের চাপে বিপর্যস্ত। ২৪৯ কিলোমিটার বা ১৫৫ মাইল দৈর্ঘ্যের নদীটি নাব্যতা সংকট চরমে।অপরিকল্পিতভাবে ফেলা আবর্জনায় আর বর্জ্যের স্তূপ-পলিথিনে ভরে গেছে নদীর তলদেশ। এতে বিনষ্ট হচ্ছে আশপাশের পরিবেশ, ধ্বংস হচ্ছে জীববৈচিত্র্য। এ যেন দেখার কেউ নেই!
উজানে ভারত থেকে নেমে আসা বাংলাদেশের সীমান্ত জকিগঞ্জের বরাক মোহনায় সুরমা নদীর উৎপত্তি। সেখান থেকে ভাগ হয়ে বাংলাদেশে প্রবাহমান দুই নদী সুরমা ও কুশিয়ারা। সুরমা সিলেট নগর ও সুনামগঞ্জের উপর দিয়ে প্রবাহিত।
সরজমিনে দেখা গেছে, নগরীর সুরমা নদীতীরের কাজিরবাজার, ঘাসিটুলা, ভার্থখলা, তোপখানা, শেখঘাট দক্ষিণ সুরমা নদীতীরের অবস্থা বেহাল। বিশেষ করে নদীতীর ঘেঁষে গড়ে ওঠা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোর কারণেই বেশি নির্যাতনের শিকার হচ্ছে নদী।
বিশেজ্ঞরা বলছ্নে, নদীর উভয় পাড় ঘেঁষে থাকা অধিকাংশ মুদি দোকান, স্টেশনারি দোকান, ওয়ার্কশপ, মিল-কারখানাগুলো প্রতিদিনের ময়লা-আবর্জনা ফেলার জায়গা হিসেবে নদীর পাড় ব্যবহার করছে বছরের পর বছর। নদীতে ময়লা পানি বা আবর্জনা ফেলার আগে পরিবেশ নিয়ে ভাবতে হবে সবাইকে। সুন্দর পরিবেশ সুরক্ষা সবারই দায়িত্ব।
পরিবেশ কর্মী আজহার উদ্দিন শিমুল বলেন, ‘আমাদের এই নদী একসময় সৌন্দর্যের রুপে পূর্ণ ছিল। কিন্তু জং ধরেছে। মানুষজন ময়লা আবর্জনা ফেলার জায়গা মনে করছে এ নদীকে। আমাদের বিষয়গুলো নিয়ে ভাবতে হয়। সবাই সচেতন না হলে জীববৈচিত্র্য ধ্বংস হয়ে যাবে।’
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সিলেটের সভাপতি ফারুক মাহমুদ চৌধুরী বলেন, সুরমা তীরের দোকানগুলোই মূলত নদী দূষণের জন্য দায়ী। নদীর প্রাণ প্রকৃতির জন্য যেসব উপাদান থাকা দরকার পলিথিন ও প্লাস্টিক বর্জ্যে তা নষ্ট করে দিয়েছে। এ কারণে সচেতনতা ও নদীর উৎসমুখ খননের প্রযোজনীয়তা অপরিসীম।
জনবল সংকটের কথা তুলে ধরে পরিবেশ অধিদপ্তর সিলেট বিভাগীয় কার্যালয়ের পরিচালক এমরান হোসেন জানান, জনবল না থাকায় চাইলেও অনেক কিছু করা যায় না। তবে বিষয়টি যখন তার নজরে এসেছে তিনি দেখবেন।
এদিকে গত বছর সিলেটের ইতিহাসের স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় সিলেট-সুনামগঞ্জের সব উপজেলার মানুষ পানিবন্দি হবার পর সুরমার পানি উপচে নগরে ঢুকতে শুরু করে। এতে সৃষ্টি হয়েছে চরম জলাবদ্ধতা। দ্রুতই তা বন্যার আকার ধারণ করে। বন্যায় রাস্তাঘাট, বাসাবাড়ি, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, এমনকি জরুরি সেবা দানকারী বিদ্যুৎ, ফায়ার সার্ভিস, পুলিশ কমিশনারের কার্যালয়ের মতো প্রতিষ্ঠানও প্লাবিত হয়। এই বন্যার জন্য অনেকটা দায়ি সুরমার নাব্যতা সংকট। তখন দাবি উঠে, দ্রুত সুরমা নদীর খনন শুরু করে নাব্যতা ফেরাতে পারলেই এমন ভয়াবহ পরিস্থিতি থেকে মুক্ত পাওয়া যাবে।
নগরবাসীকে বন্যামুক্ত করা ও নাব্যতা ফিরিয়ে আনতে সুরমা নদীর চর খননকাজ শুরু হয় ২১ জানুয়ারি। প্রথম দফায় সিলেট সদরের কুশিঘাট থেকে সুনামগঞ্জের ছাতকের লামাকাজী সেতু পর্যন্ত এলাকার সুরমা নদীর ১৮ কিলোমিটার খনন করা কাজ।