চায়ের রাজ্য থেকে বিদায় নিলো বিপিএল

চায়ের রাজ্য থেকে বিদায় নিলো বিপিএল

চা বাগান বেষ্টিত সবুজ-শ্যামল পরিবেশে চার-ছক্কার বিপিএল খেলা উপভোগ করলেন সিলেটের হাজার হাজার ক্রীড়াপ্রেমীরা। দেশীয় টুর্নামেন্টের সবচেয়ে বড় আসর বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগ–বিপিএল ২০২৩ সিলেট পর্ব ৮ ম্যাচ শেষে ফিরলো ঢাকায়। তবে এবার নানা বির্তক আর অঘটনের মধ্য দিয়েই শেষ হলো দেশী-বিদেশী তারকাদের জমজমাট এই আসর।

দেশসেরা সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামের দেশ-বিদেশে সৌন্দর্যের সুনাম থাকলেও বিতর্ক আর অঘটন যেনো পিছু ছাড়ছে না এই স্টেডিয়ামের। খেলা চলাকালে মাঠে প্রবেশ, টিকেট কালোবাজারি, আর সবুজে ঘেরা এই মাঠে বারবার আন্তর্জাতিক ম্যাচ দেবার দাবির মধ্য দিয়েই ফের আলোচনায় সবুজ-শ্যামল ঘেরা এই মাঠ।

বিপিএলের সিলেট পর্ব শেষ হয়েছে আজ মঙ্গলবার। গেল ২৭ জানুয়ারি শুরু হয় হয়েছে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ (বিপিএল)-এর সিলেটে পর্ব। প্রতিদিন দুটি করে ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়। ২৭, ২৮, ৩০ ও ৩১ জানুয়ারী এই চার দিনে মোট আটটি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়।

এই বিপিএলে অঘটন আর বির্তক যেন পিছু ছাড়লো না সিলেটের।  যেখানে দর্শকরা ঘনঘন ম্যাচ প্রত্যাশা করছেন সেখানে নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে বেশ।

স্টেডিয়ামে টিকিট ছাড়া প্রবেশ করতে ২০০-৩০০টাকা দিয়ে দেয়াল টপকে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে শিশু থেকে শুরু করে যুবকরা প্রবেশ করেছে। এছাড়াও সিন্ডিকেটের কব্জায় টিকিট বাণিজ্য তো আর আছেই।

সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে সর্বনিম্ন ২০০ টাকার টিকিট দিয়ে ওয়েস্টার্ন গ্যালারি এবং গ্রিন হিল এরিয়ায় বসে খেলা দেখনে দর্শকরা। ৩০০ টাকায় ইস্টার্ন এছাড়াও ৫০০ টাকায় ক্লাব হাউজের টিকিটের দাম নির্ধারণ করা হয়েছিলো। সর্বোচ্চ দামি টিকিট ছিলো গ্র্যান্ড স্টান্ডের। ১৫০০ টাকার বিনিময়ে গ্র্যান্ড স্ট্যান্ড।

নানা বির্তক
যেখানে বির্তকের শুরু সেখানে একটু ফিরতে চাই। ২৬ জানুয়ারি (বৃহস্পতিবার) ভোর থেকে সিলেট জেলা স্টেডিয়ামে টিকিটের অপেক্ষমাণ দর্শকরা। সকাল পৌনে নয়টায় সিলেট জেলা স্টেডিয়ামে তিনটি বুথে টিকিট বিক্রি শুরু হয়।মাত্র   মাত্র ১৫মিনিটে ২০০ টাকা ও ৩০০টাকার টিকিট শেষ হয়ে যায় এবং তিনশ টাকার টিকিটও ৫শ টাকায় বিক্রি করা হয়েছে।একই অবস্থা ছিলো আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামের টিকিটের বুথে। ওইদিন জেলা স্টেডিয়াম থেকে কালোবাজারি সন্দেহ তিন যুবককে ২১টি টিকিটসহ আটক করে কোতোয়ালি মডেল থানা পুলিশ। পরে মুচলেকা দিয়ে পরিবারের জিম্মায় ছেড়ে দেয়া হয়।এছাড়াও বিসিবির কার্ড ঝুলিয়ে অতিরিক্ত মূকে টিকিট বিক্রিকালে জনতার হাতে আটক হয়েছিলেন দুজন।

টিকিট ইস্যু
শুক্রবার (২৭জানুয়ারি) বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি)পরিচালকও নারী উইংয়ের চেয়ারম্যান শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল বলেছিলেন, টিকেট বাড়তি দামে বিক্রির কোন অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য একজন নির্বাহী ম্যাজিস্টেট ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী রয়েছেন।’

তবে অভিযোগ ও ক্রীড়াপ্রেমীদের টিকিট নিয়ে হতাশার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা সব রকমের আপ্যায়ন, সুযোগ-সুবিধার ব্যাপারে কাজ করি। তবে টিকিটের ব্যাপারটি নিয়ে আমাকে দু’হাত তুলে (আত্মসমর্পন) দিতে হবে।’

টিকিট নিয়ে অনেক কান্ডকারখানা ছিলো।এবার আসা যাক স্টেডিয়ামে যেভাবে দেয়াল টপকে প্রবেশ করে শিশু-যুবকরা।চারদিনের আটটি ম্যাচ তার মধ্যে ফেভারিট দল হিসেবে ছিল মাশরাফি বিন মুর্তজার দল সিলেট স্ট্রইকার্স ও বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসানের দল ফরচুন বরিশাল।তাদের ম্যাচেই ঘটে যতকান্ড।

দুই দলের দেখা দেখার জন্য স্টেডিয়ামে টিকিট না পেয়ে ম্যাশ-সাকিব ভক্তরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দেয়াল টপকে গ্যালারিতে প্রবেশ করতে দেখা যায়। এক্ষেত্রে গুনতে হয়েছে ২০-১০০টাকা।ভাবছেন টাকা আবার কে নেয়? সেই টাকা যায় দায়িত্বরত পুলিশ ও আইনসারদের পকেটে।সেগুলো উঠে এসেছে গণমাধ্যমে।নিরাপত্তাহীনতার বিষয়টি গণমাধ্যমে স্বীকারও করেছেন সংশ্লিষ্টরা।

টিকিট ও দেয়াল টপকে আসার বিষয়টি শেষ হলেও রয়ে গেল মাঠে দর্শক প্রবেশের ঘটনা। তাহলে এবার জানা যাক কি ঘটেছিলো মাশরাফি ও সাকিবের ম্যাচ চলাকালে। গত শনিবার সন্ধ্যায় সিলেট স্ট্রাইকার্স অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজার সঙ্গে সেলফি তোলে এক কিশোর। সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স ও সিলেট স্ট্রইকার্সের মধ্যকার ম্যাচে এ ঘটনা ঘটে।ওই ঘটনার পর ওই কিশোর বলেছিল আবেগের বসে মাঠে প্রবেশ করেছিল।সেই দিনের ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতে গতকাল মঙ্গলবার ফের মাঠের ভেতরে প্রবেশ করে দর্শক।

খেলা চলাকালে মাঠে দর্শক

৩১জানুয়ারি দুপুরে ফরচুন বরিশাল-
ঢাকা ডমিনেটর্স আর ফরচুন মধ্যকার ম্যাচ চলাকালে অধিনায়ক সাকিব আল হাসানের সঙ্গে সেলফি তুলতে মাঠে প্রবেশ করে ফেলে এক পাগল ভক্ত। যদিও মাঠে প্রবেশকালে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা কেউ নজরে আনেননি। মাঠে প্রবেশেরপরপর ৮-১০ জন নিরাপত্তাকর্মী তার পিছু ছুটে যান এবং বাইরে নিয়ে আসেন।প্রশ্ন হচ্ছে তাহলে এই ৮-১০জন নিরাপত্তাকর্মী কোথায় ছিলেন সেই সময়।নিশ্চয় বলা যায় তাদের দায়িত্বে অবহেলা ছিলো।

ফলে বিপিএল এবং সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে আবারও প্রশ্ন উঠলো।

মাঠে দর্শক প্রবেশ নিয়ে সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামের মিডিয়া ইউং কর্মকর্তা ফরহাদ কোরেশী বলেন, ‘পুলিশ ও সিকিউরিটির সদস্যরা ওই দর্শককে নিয়ে গেছেন।’

নিরাপত্তা নিয়ে তিনি বলেন, ‘সাকিব-মাশরাফিকে নিয়ে দর্শকরা একটু বেশি আবেগী। এখানে আমাদের কিছু করার নেই। এমন ঘটনা বিভিন্ন স্টেডিয়ামেই হয়ে থাকে।’

অপরদিকে খেলা শেষে প্রথমবারের মতো গণমাধ্যমের মুখোমুখি হয়েছিলেন ফরচুন বরিশালের অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। তখন তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ’এভাবে অযাচিত দর্শক মাঠে ঢোকা বন্ধ হলেই ভালো। এটা ঠিক নয়।’