মাধবপুরে দুধের ক্রেতা নেই

মাধবপুরে দুধের ক্রেতা নেই

বিশ্বজুড়ে মহামারি আকার ধারণ করা করোনা ভাইরাসের (কোভিড-১৯) প্রভাব পড়তে শুরু করেছে মাধবপুর উপজেলায়। দেশের শস্যের ভাণ্ডার হিসেবে পরিচিত মাধবপুরে এবার গরু খামারিদের মাথায় হাত পড়েছে।

হোটেল-রেস্তোরাঁ বন্ধ ও বড় দুধের কোম্পানিগুলোর উদাসীনতায় ফলে বন্ধ হতে বসেছে অসংখ্য গরু খামার। দুধ বিক্রি করতে না পারায় কম দামে গরু বিক্রি ও খামার বন্ধ করতে বাধ্য হচ্ছেন খামারিরা। কেন না দুধ বিক্রি করে গরুর খাদ্য দামও উঠছে না তাদের।

মাধবপুর উপজেলার আন্দিউড়া এলাকায় বহু বছর ধরে পিউর এন্ড অর্গানিক ডেইরি ফার্ম নামের ব্যবসা করছেন মো. মোত্তাকিন চৌধুরী।

তিনি জানান, তার নিজস্ব ৬ বিঘার জমির উপর গরুর খামার রয়েছে। এই খামারে তার গরুর সংখ্যা ২০০টি। উপজেলার আন্দিউড়া এলাকায় নিজের জমিতে ৪০টি গাভী রয়েছে। তিনি গড়ে প্রতিদিন ৪০০ লিটার দুধ উৎপাদন করেন। কিছুদিন আগে খামারের উৎপাদিন দুধ সম্পূর্ণ বিক্রি হয়ে যেত। যা হবিগঞ্জ জেলার বিভিন্ন মিষ্টির দোকান, চায়ের দোকান ও অন্যান্য কোম্পানিতে সরবরাহ করা হতো। কিন্তু বিশ্বজুড়ে মহামারি আকার ধারণ করা করোনা ভাইরাসের কারণে আমার খামার থেকে প্রতিদিন ২০০ থেকে ২৫০ কেজি দুধ বিক্রি হয়। বাকি অর্ধেক দুধ অবিক্রিত রয়ে যায়। ক্রেতার অভাবে কয়েকদিন আগে তিনি ২০০ লিটার দুধ ড্রেনে ফেলে দিতে বাধ্য হন। করোনার প্রভাবের ফলে এ পর্যন্ত তার ৮ হাজার লিটার দুধ ব্র্যাক, প্রাণ, মিল্ক ভিটা, আড়ৎ ও সাধারণ ক্রেতাকে জোর করে বাকি দিতে বাধ্য হন। নাহলে খামারে উৎপাদিত দুধ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এমনিতে দুধের ক্রেতা নেই তার উপর গো-খাদ্যের দাম বেড়েছে।

তিনি আরও জানান, এক মাস আগে ৩৬ কেজির ভূসির বস্তা আমি কিনেছি ৯০০ টাকা। কিন্তু এখন সে ভূসির বস্তার দাম বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৪০০ টাকায়। ভুট্টা আগে ১৮ টাকা কেজি দরে কিনলেও বর্তমানে ৩০ টাকায় কিনতে হচ্ছে। এছাড়াও আটা আগে ২২ টাকা কেজি দরে কিনলেও বর্তমানে ২৮ টাকা এবং ব্র্যান আগে ১৭ টাকা দরে কিনেছিলাম, কিন্তু বর্তমানে ২৬ টাকা দরে কিনতে হচ্ছে। তার উপর আমার প্রতিষ্ঠানে ২০ জনের মত কর্মচারী রয়েছে। তাদের প্রতি মাসে গড়ে ১২ হাজার টাকা করে বেতন দিতে হয়। আমি কিভাবে চলব? আমাকে তো এই ব্যবসা ছেড়ে দিতে হবে। করোনার প্রথমদিকে আমার অবিক্রিত দুধগুলো ব্র্যাক, প্রাণ, মিল্ক ভিটা, আড়ৎ-এ বিক্রি করতাম। কিন্তু তারা এখন আমার কাছ থেকে দুধ কিনতে চাচ্ছেন না।

উপজেলা প্রাণিজ সম্পদ কর্মকর্তা মিলন মিয়া জানান, দপ্তরের নিবন্ধনভুক্ত খামারের সংখ্যা ১২টি, এছাড়াও ২শ ৫০টির মতো খামার অনিবন্ধন রয়েছে। এসব খামারে ৫৪ হাজার ২শ ৫০টি গরু রয়েছে। তন্মধ্যে ৮ হাজার ২শ ৫০টি গাভী। প্রতিদিন উৎপাদিত দুধের পরিমান ১ হাজার ৬শ লিটার। বর্তমানে করোনার প্রভাবে খামারগুলোতে ক্রেতার সংখ্যা অনেক কমে গেছে। মন্ত্রনালয়ের নির্দেশনানুসারে দুধ বিভিন্ন বাজারে সকাল ৯টা থেকে ৫টা পর্যন্ত বিক্রি করতে পারবে। খামারীরা তাদের প্রয়োজনে যানবাহন ব্যবহার করে নিজ উদ্যোগে দুধ বিক্রি করতে পারবে।

পাশাপাশি উপজেলার বিভিন্ন হোটেলগুলোতে দুধ সরবরাহ যাতে নিশ্চিত করা তড়িৎ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। এতে করে খামারিরা নিজেদের ক্ষতির পরিমাণ কিছু কমে যাবে। কুরবানী উপলক্ষে মাধবপুর প্রানীজ সম্পদ অফিস থেকে অনলাইনে গরু বিক্রি করার ব্যবস্থা করে দেয়া হয়েছে। খামারীরা তাদের গরুর তথ্যা অনলাইনে দিতে পারবে।

উপজেলার খামারিদেরর ক্ষতি লাঘবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিলে কিছুটা হলে তাদের ক্ষতি পোষাতে পারবে।