সিলেট সিটি নির্বাচন: বিভেদ দূর করার তাগিদ আওয়ামী লীগ নেতাদের
![সিলেট সিটি নির্বাচন: বিভেদ দূর করার তাগিদ আওয়ামী লীগ নেতাদের](https://www.jagosylhet.news/uploads/images/2023/04/image_750x_644b44512b756.jpg)
সিলেট সিটি করপোরেশনের গত দুটি নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীর পরাজয়ের কারণগুলো চিহ্নিত করবে আওয়ামী লীগ। ত্রুটি দূর করে তৃণমূল পর্যন্ত দল সুসংগঠিত করে জনগণের কাছে ভোট চাইতে যাবে দলটি। এ ছাড়া অচিরেই বর্ধিত সভা ডেকে কর্মপরিকল্পনাও নির্ধারণ করা হবে। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দলে কোনো বিভেদ থাকতে দেওয়া হবে না।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সোয়া সাতটার দিকে নগরের তালতলা এলাকার একটি রেস্তোরাঁয় জরুরি সভার আয়োজন করে মহানগর আওয়ামী লীগ। সভায় বক্তারা গত নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীর পরাজয়ের কারণ চিহ্নিত করে সমস্যা সমাধানের তাগিদ দিয়েছেন।
মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মাসুক উদ্দিন আহমদের সভাপতিত্বে ও যুগ্ম সম্পাদক এ টি এম এ হাসানের সঞ্চালনায় সভাটি অনুষ্ঠিত হয়। সভায় আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী মো. আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী বক্তব্য দেন। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ ঐক্যবদ্ধ থাকলে শুধু সিলেট নয়, দেশের যেকোনো নির্বাচনে বিশাল ব্যবধানে জয় লাভ করবে বলে তাঁর বিশ্বাস।
জরুরি সভায় মহানগরের গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের পাশাপাশি মেয়র পদে দলের মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন এমন সাত নেতা অংশ নেন। তাঁরা দলীয় প্রার্থীর বিজয় নিশ্চিতে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার অঙ্গীকার করেন। সভায় মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও সাবেক কাউন্সিলর ফয়জুল আনোয়ার আলাওর উপস্থিত থাকলেও কোনো বক্তব্য দেননি। তিনি দলের ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী হতে পারেন বলে নগরে জোর গুঞ্জন আছে।
মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মধ্যে তিনজন নেতা সভায় ছিলেন না। এর মধ্যে মহানগরের সাধারণ সম্পাদক মো. জাকির হোসেন যুক্তরাজ্যে আছেন। অন্যদিকে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ ও ৭ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সদস্য মো. মাহি উদ্দিন আহমদ মহানগর আওয়ামী লীগের কমিটিতে না থাকায় তাঁদের সভায় থাকার কথাও ছিল না। তবে মাহি উদ্দিন ২১ এপ্রিল এক সভায় আনোয়ারুজ্জামানের পাশে ছিলেন।
এর আগে ১৫ এপ্রিল আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বোর্ড সিলেটে মেয়র পদে যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীকে মনোনয়ন দেয়। তিনিসহ দলের ১১ জন নেতা মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন। তবে মহানগরের রাজনীতিতে সক্রিয় নন এমন একজন প্রবাসী নেতা মনোনয়ন পাওয়ায় ভেতরে-ভেতরে নেতা-কর্মীদের অনেকে ক্ষুব্ধ। প্রকাশ্যে কিছু না বললেও তাঁদের ক্ষোভের ‘বহিঃপ্রকাশ’ ভোটে পড়তে পারে বলে দলটির তৃণমূলের অনেক নেতা-কর্মী আশঙ্কা করছেন।
মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মাসুক উদ্দিন আহমদ সভাপতির বক্তব্যে বলেন, গত ১০ বছরে সরকার সিলেটে প্রচুর টাকা বরাদ্দ দিয়েছেন। কিন্তু কাঙ্ক্ষিত উন্নয়নের ছিটেফোঁটাও হয়নি, বরং বর্তমান মেয়রের নেতৃত্বে লুটপাটের রাজত্ব কায়েম হয়েছে। দিন দিন জনদুর্ভোগ বেড়েছে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণে নৌকার বিজয় নিশ্চিত করতে হবে। আওয়ামী লীগের প্রত্যেক সদস্যকে নৌকার মাঝি হিসেবে মাঠে সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করতে হবে।
বিএনপি-দলীয় বর্তমান মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী নির্বাচনে এলেও এবার নৌকার জয় নিশ্চিত করা হবে জানিয়ে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী মো. আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী তাঁর বক্তব্যে বলেন, এবারের নির্বাচনে সিলেটবাসী মেয়র পদে পরিবর্তন চান। কারণ, তিনি (আরিফুল) জনগণের আকাঙ্ক্ষা পূরণে ব্যর্থ হয়েছেন। তবে তিনি আশা করেন, আরিফুল হক চৌধুরী ও তাঁর দল বিএনপি নির্বাচনে অংশ নিয়ে জনগণের প্রতি সম্মান জানাবেন।
জরুরি সভা শেষে রাত পৌনে ৯টার দিকে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী মো. আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। তিনি বলেন, মহানগর আওয়ামী লীগের সভায় সব নেতা উপস্থিত ছিলেন। বড় দল হওয়ায় অনেক মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন। তবে যখন নেত্রী প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেছেন, তখন সবাই তাঁকে গ্রহণ করে নিয়েছেন, অভিনন্দন জানিয়েছেন। জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ শতভাগ ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করবে।
এক প্রশ্নের জবাবে আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী বলেন, ‘ইলেকশন একটা চ্যালেঞ্জের বিষয়। নির্বাচনকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিতে হবে। আমরা মানুষের বাড়িতে বাড়িতে যেতে চাই। আমাদের কর্মীরা কিন্তু শুরুও করেছেন। যেহেতু সময় আছে, তাই আমরা প্রত্যেক ভোটারের কাছে যেতে চাই।’
১০ বছরে বিএনপি-দলীয় বর্তমান মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীকে সরকার ২ হাজার ৮০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে জানিয়ে আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী আরও বলেন, ‘কিন্তু কসমেটিকস উন্নয়ন হয়েছে। আমি পরিকল্পিত উন্নয়ন করতে চাই।’ নির্বাচিত হলে তিনি ৩০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন, শহর রক্ষা বাঁধ নির্মাণ, সুরমা নদী খননসহ বিভিন্ন উন্নয়নমূলক প্রকল্প নেবেন বলেও জানান।
নির্বাচন কমিশন ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, আগামী ২১ জুন সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ইভিএমে ভোট গ্রহণ হবে। প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন ২৩ মে, বাছাই ২৫ মে ও প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ১ জুন।