ঐক্যবদ্ধ কুলাউড়াবাসী, ভোটারদের আস্থায় নাদেল

ঐক্যবদ্ধ কুলাউড়াবাসী, ভোটারদের আস্থায় নাদেল
মৌলভীবাজার-২ (কুলাউড়া) আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল।

দীর্ঘ ১৫ বছর আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকার পরও কুলাউড়ায় আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য না থাকায় কাক্সিক্ষত উন্নয়ন হয়নি। তাই কুলাউড়াবাসী উন্নয়নের জন্য এবার নৌকার পক্ষে ঐক্যবদ্ধ।

রাত পোহালেই দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এবারের নির্বাচনে মৌলভীবাজার-২ (কুলাউড়া) আসনে জমজমাট ভোট উৎসবের অপেক্ষায় কুলাউড়াবাসী। ভোটে জিততে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ও তাদের সমর্থকেরা চালিয়েছেন ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা। এখন চলছে শেষ মুহুর্তের হিসাব-নিকাশ। হাট-বাজার, পাড়া-মহল্লা ও চায়ের দোকানে ভোটারদের মাঝে একটাই আলোচনা, কুলাউড়ায় কে হচ্ছেন সংসদ সদস্য। এ নিয়ে চলছে নানা বিশ্লেষণ। সচেতন মহল, সাধারণ ভোটার সকলের বিশ্লেষণেই এবার জয়ের পাল্লা নৌকার দিকে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, কুলাউড়া আসনে দীর্ঘ ২২ বছর পর দলীয় প্রার্থী এবং দলের প্রতীক নৌকা পেয়েছে আওয়ামী লীগ। ফলে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের মাঝে বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনা বিরাজ করছে। এ আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী দলের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল। তার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা হলেন, ট্রাক প্রতীকে স্বতন্ত্র প্রার্থী সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান সফি আহমদ সলমান, সোনালী আঁশ প্রতীকে তৃণমূল বিএনপির প্রার্থী সাবেক এমপি এম এম শাহীন, আরেক স্বতন্ত্র প্রার্থী আব্দুল মতিন ও জাতীয় পার্টির এম এ মালিকসহ আরও ৩ জন।

এই আসনে গণফোরামের হয়ে গত নির্বাচনে বিজয়ী হয়েছিলেন সুলতান মো. মনসুর আহমদ। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন না।

ভোটাররা মনে করেন, সাবেক এমপি এম এম শাহীন প্রথমে বিএনপির রাজনীতি করেছেন। ২০০১ সালে এ আসনে ৪ দলীয় জোটের প্রার্থী ছিলেন জামায়াতে ইসলামীর ডা. শফিকুর রহমান। তখন এম এম শাহীন বিএনপি দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হন। তৎকালীন সময় বিএনপি তাকে দল থেকে বহিষ্কার করে। ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক সুলতান মনসুরকে পরাজিত করে তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। বিএনপি রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় থাকায় স্বতন্ত্র এমপি হিসেবে তিনি কুলাউড়ার জন্য উন্নয়নমূলক কাজের তেমন একটা সুবিধা করতে পারেননি। 

২০০৮ সালের নির্বাচনে মহাজোট থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য নবাব আলী আব্বাছ খান। তখন রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় ছিল আওয়ামী লীগ। তিনিও সরকারের প্রতিকূলে থাকায় কুলাউড়ায় তেমন একটা উন্নয়ন করতে পারেননি। 

পরবর্তীতে ২০১৪ সালে আবারও মহাজোট থেকে জাতীয় পার্টির লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে এই আসনে প্রার্থী হন মুহিবুল কাদির। তার সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন স্বতন্ত্র প্রার্থী আব্দুল মতিন। তিনি মুহিবুল কাদিরকে পরাজিত করে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হলেও সরকারের বিপরীতে থাকায় উন্নয়ন বঞ্চিত হন কুলাউড়াবাসী। 

সর্বশেষ ২০১৮ সালে ফের মহাজোটের হয়ে সংসদীয় এ আসনটিতে নৌকা প্রতীকে প্রার্থী হয়েছিলেন এম এম শাহীন। তার প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন ওয়ান ইলেভেনে বিতর্কিত ভূমিকায় সমালোচিত সুলতান মো. মনসুর। তিনি গণফোরামের হয়ে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করে বিজয়ী হয়েছিলেন। কিন্তু সরকারের প্রতিকূলে থাকায় গত ৫ বছর এমপি থাকাকালীন সময়েও এলাকায় উন্নয়ন হয়নি। তিনি যেমন সংসদীয় এলাকায় আসেননি, তেমনি মানুষের খোঁজখবরও নেননি। ফলে মানুষ এখন তার ওপর ক্ষুব্ধ। 

চা শ্রমিক রামলাল ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘গত ১৫ বছর আমরা কেবল এমপি পাল্টিয়েছি। ক্ষমতায় আওয়ামী লীগ থাকলেও আমাদের এমপিরা ছিলেন সরকারের বিপরীতে। তারা ইচ্ছে করে কুলাউড়ার মানুষকে উন্নয়ন থেকে পিছিয়ে রেখেছেন। কুলাউড়ায় উন্নয়ন আনতে হলে দরকার সরকার দলীয় একজন এমপির। আর দীর্ঘ ২২ বছর পর এবার দলীয় প্রার্থী এবং দলের প্রতীক আমরা কুলাউড়ায় পেয়েছি। এটা আমাদের কুলাউড়ার জন্য বিশাল সুযোগ। এই সুযোগ আমাদের হাতছাড়া করা ঠিক হবে না।’ 

শিক্ষক রুহুল আমিন বলেন, ‘২২ বছর পর কুলাউড়ায় নৌকা প্রতীক আসায় এবার রীতিমতো নৌকার পালে জয়ের হাওয়া লেগেছে। আমরা আর স্বতন্ত্র এমপি দেখতে চাই না। এরা আমাদেরকে শুধু ধোঁকা দিয়ে এমপি নির্বাচিত হন। কাজের কাজ কিছুই করতে পারেননি। আমাদের দরকার সরকার দলীয় একজন এমপির। যিনি ১৫ বছরের পিছিয়ে পড়া কুলাউড়াকে আগামী ৫ বছরে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারেন। যিনি দেশের সাথে তাল মিলিয়ে কুলাউড়াকে স্মার্ট উপজেলা গড়তে সক্ষম হবেন। এ ক্ষেত্রে  শফিউল আলম চৌধুরী নাদেলই যোগ্য প্রার্থী। তাকে ভোট দিয়ে এমপি নির্বাচিত করলে কুলাউড়ায় উন্নয়নে বিপ্লব ঘটবে।’

শামসুর রহমান নামে আরেক ভোটার বলেন, ‘সুলতান মনসুর, এম এম শাহীন, আলী আব্বাছ ও আব্দুল মতিনকে ভোট দিয়ে এমপি বানিয়ে  দেখেছি। কি করেছেন কুলাউড়ার জন্য। ১৫ বছর থেকে আওয়ামী লীগ রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায়। অথচ কুলাউড়ার রাস্তাঘাট বেহাল। একটা খেলার ভালো মাঠ নেই। বিনোদনের জায়গা নেই। একটা মডেল মসজিদ আজও নির্মাণ হলো না। এরকম এমপি নির্বাচিত করে আমাদের লাভ কি। এবার শফিউল আলম চৌধুরী নাদেলকে আমরা পেয়েছি। তাঁকে নৌকায় ভোট দেব। তিনি একজন পরিচ্ছন্ন রাজনীতিবিদ। তিনি এমপি হলে কুলাউড়ার জন্য ভালো কিছু করতে পারবেন। তাঁকে এমপি নির্বাচিত করতে কুলাউড়ার মানুষ ঐক্যবদ্ধ হয়েছে।’ 

আতাউর রহমান নামে আরেক ভোটার জানান, সফি আহমদ সলমান ৫ বছর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ছিলেন। তাও স্বতন্ত্র নির্বাচন করে। স্বতন্ত্র উপজেলা চেয়ারম্যান হয়ে যিনি উপজেলায় কিছুই করতে পারেনি সেখানে স্বতন্ত্র এমপি নির্বাচিত হয়ে তিনি কি করবেন। 

বিভিন্ন ইউনিয়নে খোঁজ নিয়ে ও স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা গেছে, কুলাউড়ায় এবার নৌকার প্রার্থী শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল সব মহলে গ্রহণযোগ্যতা পাচ্ছেন। তাই দল-মত নির্বিশেষে সবাই নৌকার পক্ষে ঐক্যবদ্ধ।

আওয়ামী লীগের প্রার্থী শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর নৌকা এবার কুলাউড়াবাসীর জন্য জননেত্রী শেখ হাসিনার একটি বিশেষ উপহার। কুলাউড়া উপজেলা আওয়ামী লীগ ঐক্যবদ্ধ। উন্নয়ন, অগ্রগতি ও সমৃদ্ধির প্রতীক নৌকাকে বিজয়ী করতে তারা নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন। কুলাউড়ায় এবার নৌকার বিকল্প নেই। চক্রান্ত, ষড়যন্ত্র ও মিথ্যাচার করে নৌকার বিজয় ঠেকানো যাবে না। কুলাউড়ার মানুষ নৌকায় ভোট দিয়ে বিপ্লব ঘটাবে, ইনশাআল্লাহ কুলাউড়ায় নৌকা বিজয়ী হবে।’