প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর যেন ইউপি সদস্যের 'আলাদিনের চেরাগ'

প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর যেন ইউপি সদস্যের 'আলাদিনের চেরাগ'

আমার খুব সুন্দর গোছানো সংসার ছিল, স্বামী সন্তান নিয়ে ভালোই ছিলাম, কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে যে ঘর দেওয়া হয়েছিল সেই ঘরে সংসার করতে গিয়ে আমার কপাল পুড়ল। যখন শুনলাম প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যাদের ঘর নেই তাদের ঘর নির্মাণ করে দিচ্ছেন টিক তখন আমি আর আমার স্বামী স্থানীয় ইউপি সদস্যর সাথে যোগাযোগ করি ঘর নির্মাণ করে দেওয়ার জন্য।

পরে ইউপি সদস্য বলল ঘর পেতে হলে ২৬ হাজার টাকা (লাগব) দিতে হবে। তার আমার স্বামী ঝণ করে ২৬ হাজার টাকা ইউপি সদস্যকে দিল তারপর তিনপুট ঘর নির্মাণ করার পর তিনি আরো টাকা দিতে বলেন পরে আমরা আরো টাকা দিলে ও সে আর আমাদের ঘর নির্মাণ করে দেয়নি। এখন আমার স্বামী ঝণের দায়ে বাড়ি ছাড়া, সে বাড়িতে আসতে পারেনা, আমি কোন রকম মানুষের বাসায় কাজ করে ছেলে মেয়েকে নিয়ে দিন কাটাচ্ছি, প্রধানমন্ত্রীর ঘরে সংসার করতে গিয়ে আজ আমার নিজের সংসারটাই ভেঙ্গে গেল।

কথা গুলো বলছিল সুনামগঞ্জের দোয়ারা বাজার উপজেলার বড়ই কান্দি গ্রামের বাসিন্দা ইসাক আলী স্ত্রী শাজেদা বেগম (৩০)। কথা বলা শেষে তিনি হাউমাউ করে কাদঁতে লাগেন। শুধু শাজেদা বেগম নয় এই ইউনিয়নের একাধিক গ্রামের মানুষ টাকার বিনিময় সরকারি ঘর পেয়েছেন কিন্তু সেই ঘরে নিম্ন মানের উপকরণ ব্যবহার এবং পুরোপুরি ঘর নির্মাণ না করে উল্টা গৃহহীন পরিবারকে হুমকি ধামকি দিচ্ছেন এমন অভিযোগ উঠেছে  স্থানীয় ইউপি সদস্য তাজ্জির মেম্বারের উপর। 

সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, দোয়ারা বাজার উপজেলার বড়ইকান্দি, বাগড়া, বড়বন, রায়নগর এলাকায় প্রায় ৭০টির মত আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর নির্মাণ করা হয়েছে, তার মধ্যে প্রায় ঘরের কাজ গৃহহীন পরিবার নিজের টাকায় করিয়েছেন এবং অনেক ঘরের বার্থরুম, রং করা সহ যাবতীয় কাজ এখনও রয়েই গেছে বলে অভিযোগ করেন তারা। শুধু তাই নয় রেকডীয় জায়গায় ইউপি সদস্য জোর করে সরকারি ঘর নির্মাল করে দিয়েছেন। যা গ্রামবাসী উপহাস করে বলেছেন, সরকারি আসায় আলাদিনের চেরাগ পেয়ে গেছেন স্থানীয় ইউপি সদস্য তাজির মেম্বার।

গ্রামের বাসিন্দা মো.ইউনুস আলী বলেন, আমি গরীব মানুষ, সরকার থেকে আমি একটা ঘর পেয়েছিলাম, কিন্তু সেই ঘরের বালু, পালা সহ অনেক কাজ আমি নিজের টাকায় করিয়েছি, আমার হাতে টাকা নাই বলে এখনও বাথরুমের কাজ করাতে পারিনী, মেম্বারের সাথে যোগোযোগ করা হলে তিনি বলেন এই সব তুমরা নিজের টাকায় করো। 

ইউপি সদস্য’র ভয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক মহিলা বলেন, সরকারে ঘর দিব শুনে আমরা ইউপি সদস্য’র সাথে যোগাযোগ করি পরে তিনি বলেন, ঘর পেতে টাকা লাগবে পরে আমরা ২০ হাজার টাকা দিয়েছি। পরে তিনি আমাদের একটা ঘর দেন কিন্তু এই ঘরটা এখনও পুরো ভাবে নির্মাণ করে দেওয়া হয়নি। ঘরের বালুটা পর্যন্ত আমরা নদীর পাড় থেকে নিজেরা তুলে নিয়ে আসছি। আমি আমাদের টাকা ফেরৎ চাই। 

বড়বন গ্রামের বাসিন্দা নাম প্রকাশে অনিচ্ছু পুরুষ  বলেন,আমি ভাঙ্গা ঘরে থাকি টাকা দিতে পারি নাই বলে সরকারি ঘর পাইনি। যারা টাকা দিসে তারাই সরকারি ঘর পেয়েছে। 

বড়বন গ্রামের বাসিন্দা আব্দুল আজিজ বলেন, আমার রেকডীয় জায়গার মধ্যে সরকারি ঘর জোর করে নির্মাণ করা হয়েছে। পরে আমরা জেলা প্রশাসকের বরাবরে অভিযোগ দিয়েছি পরে ইউপি সদস্য’র লোকজন আমাদেরকে মারধর করেছে। শুধু তাই নয় ইউপি সদস্য একজনের নামের ঘর অন্য জনকে দিয়েছেন প্রত্যেকটা ঘর অনিয়ম ভাবে নির্মাণ করা হয়েছে যা সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে বেরিয়ে আসবে। 

র্পুব মাছিমপুর গ্রামের বাসিন্দা আনোয়ার হোসেন বলেন, ইউপি সদস্য জোর করে আমার রেকডীয় জায়গার উপর সরকারি ঘর নির্মাণ করে দিয়েছেন, আমি সরকারের কাছে জোর দাবি জানাই আমার জায়গা আমাকে ফিরিয়ে দেওয়া হোক। 

দোয়ারা বাজার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দেবাংশু কুমার সিংহ বলেন, আমি দোয়ারাবাজার উপজেলায় নতুন এসছি, তবে সরকারি ঘর প্রদান কেউ যদি টাকার কোন লেনদেনর করে থাকে এবং তদন্তের মাধ্যমে বেরিয়ে আসে তাহলে অব্যশই তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।